ব্র্যাভোর সেঞ্চুরিও কাজে এল না।
আজহার আলির ট্রিপল সেঞ্চুরি যদি গোলাপি বলের টেস্ট ক্রিকেটকে মান্যতা দিয়ে যায়, তো সেই ধারা অব্যাহত থাকল পাকিস্তান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টেস্টে। পাঁচ দিনের ক্রিকেট যে মোটেই মৃতপ্রায় নয়, তার প্রমাণ দিয়ে গেল দুবাই টেস্টের শেষ দিনের রুদ্ধশ্বাস লড়াই।
ম্যাচের শেষ সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাই ১১৪ রান, পাকিস্তানের চারটে উইকেট— এমন টানটান পরিস্থিতিতে ডিনার ব্রেকে যায় দুটো দল। তখন কে বলবে, এই ম্যাচের প্রথম ভাগ পুরোটাই ছিল পাকিস্তান আর আজহার আলির দখলে।
চতুর্থ ইনিংসে প্রায় সাড়ে তিনশো রান দরকার, এমন অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিংয়ের উপর খুব একটা ভরসা করার জায়গা ছিল না। কিন্তু সেখান থেকে দুবাই টেস্ট যে এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, তার পিছনে বড় অবদান রয়েছে ডারেন ব্র্যাভোর।
লড়াকু সেঞ্চুরি, পঞ্চম উইকেটে রসটন চেজের সঙ্গে ৭৭ রানের পার্টনারশিপ, সপ্তম উইকেটে জেসন হোল্ডারের সঙ্গে আরও ৬৯— ক্যারিবিয়ান প্রতিরোধের নাম এ দিন ছিল ডারেন ব্র্যাভো। ডিনারের আগে ইয়াসির শাহ এবং ওয়াহাব রিয়াজ যখন তিন বলে দুটো উইকেট তুলে নিয়েছেন, তখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশা ছিল, কারণ তখনও ক্রিজে ছিলেন ডারেন ব্র্যাভো। প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনিই ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং শিরদাঁড়া হয়ে ওঠেন। পাকিস্তানের বোলিং যখন যে রকম আক্রমণ তাঁর দিকে ছুড়ে দিয়েছে, ধৈর্যের সঙ্গে তার জবাব দিয়ে এসেছেন ব্র্যাভো। বল ছাড়া হোক বা এগিয়ে এসে ডিফেন্ড করা, মুচমুচে ড্রাইভ হোক বা অফ-সাইড বাউন্ডারিতে কাট, সবেতেই তাঁর সংকল্প ফুটে উঠেছে। ২৪৯ বলে তাঁর ১১৬ ম্যাচ হয়তো জেতাতে পারেনি, কিন্তু ক্যারিবিয়ানদের গর্বের নতুন সন্ধান দিয়ে গিয়েছে।
না হলে ৯৫-২ স্কোরে শুরু দিনের প্রথম বলে মার্লন স্যামুয়েলস আর প্রথম ঘণ্টায় জার্মেন ব্ল্যাকউডের উইকেট পড়ে যাওয়ার পর পাক বোলিংয়ের সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং আরও আগেই মুড়িয়ে যেত। কিন্তু তার পর ২৮.২ ওভার নাছোড় লড়াই করে যান ব্র্যাভো আর রসটন (৩৫)। ওয়াহাব আর সোহেল খানের বাউন্সার এবং ইয়র্কার, মহম্মদ আমেরের বিপজ্জনক লাইন, স্পিন বিভাগের অক্লান্ত আক্রমণ— প্রথম দিকে কোনও কিছুই টলাতে পারেনি তাঁদের।
রসটনের লেগস্টাম্প ছিটকে দিয়ে পাকিস্তানকে আবার ম্যাচে ফেরান ইয়াসির। তার পরে যখন হোল্ডারের সঙ্গে বড় পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচটা একটু একটু করে পাকিস্তানের হাত থেকে বের করে নিচ্ছেন ব্র্যাভো, তখনও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন সেই ইয়াসিরই। পাক লেগ স্পিনারকে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন ব্র্যাভো। ঠিকঠাক শটটা মারতে পারেননি। ইয়াসির সঙ্গে সঙ্গে গোলকিপারের মতো বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দু’হাতে ক্যাচ তুলে নেন। হতাশায় ক্রিজে হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন ব্র্যাভো, ব্যাটের উপর ঝুঁকে পড়ে।
ইয়াসিরের পিঠ চাপড়ানি এবং ক্যারিবিয়ান ড্রেসিংরুমের স্ট্যান্ডিং ওভেশনের মধ্যে যখন ক্রিজ ছাড়েন ব্র্যাভো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ৮৩ রান, হাতে তিন উইকেট। ব্র্যাভোর উপস্থিতিতে প্রায় বাস্তব হতে চলা লক্ষ্য তখন ফের স্বপ্নের জগতে ঢুকে পড়েছে। জেসন হোল্ডার এক দিকে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১২৭ বল খেলে ৪০ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। কিন্তু ক্যারিবিয়ান লোয়ার অর্ডার তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিতে ব্যর্থ। শেষ পর্যন্ত ইয়াসিরের ওভারেই নিজেদের চারশোতম টেস্ট জিতে নেয় পাকিস্তান। ৫৬ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান ৫৭৯-৩ ডিঃ ও ১২৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৫৭ ও ২৮৯।