মুঠোয় ট্রফি। শনিবার ইনদওরে পার্থিব পটেল। ছবি টুইটার
অধিনায়কের ১৯৬ বলে ১৪৩ রানের ঔজ্বল্যে মুম্বইকে হারিয়ে রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হল গুজরাত। এ দিন জয়ের জন্য ৩১২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে নিজের চওড়া ব্যাটে টিমকে সামনে থেকে দাপটে নেতৃত্ব দিলেন পার্থিব পটেল। যিনি নিজের সোনালি মরসুমের শেষটা এ দিন মধুরেণ করলেন একটা সেঞ্চুরিতে জোড়া ইতিহাস গড়ে।
প্রথমটা রঞ্জি ট্রফিতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার।
দ্বিতীয়টা গুজরাতকে প্রথম বার রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন করার।
টিমকে ট্রফি জিতিয়ে পার্থিব বললেন, ‘‘রঞ্জি জেতার স্বপ্নটা আমরা সবাই একসঙ্গে দেখেছিলাম মরসুমের শুরুতে। জানতাম তার জন্য আমার অভিজ্ঞতা দলের কাজে আসা চাই। অভিজ্ঞ প্লেয়ারদের বড় ম্যাচেই খেলে দিতে হয়। ফাইনালে সেটা করতে পেরে তৃপ্তি হচ্ছে।’’
একচল্লিশ বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বইয়ের রঞ্জি আভিজাত্যের পাশে তুলনা করলে, গত ছেষট্টি বছরে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার রঞ্জি ফাইনালে উঠেছিল গুজরাত। যাঁদের টিমে ক্যাপ্টেন পার্থিব এবং পেসার আর পি সিংহের মতো দুই আন্তর্জাতিক তারকার অভিজ্ঞতা বড় ফারাক গড়ে দিল টুর্নামেন্টে।
ক্যাপ্টেন পার্থিব অবশ্য বলছেন, তিনি ঝুঁকি নিয়ে সফল। ‘‘আমি কয়েকটা ঝুঁকি নিয়েছিলাম। যেটা খেটে গেল দেখে ভাল লাগছে।’’ প্রশংসার সুরে যোগ করেন, ‘‘আর পি ছেলেদের নিয়ে দারুণ কাজ করেছে। তবে কৃতিত্বটা আমাদের টিমের মনপ্রীত, প্রিয়ঙ্কের মতো তরুণদেরই দিতে হবে।’’
ফাইনালে দানব হয়ে উঠে পাঁচ ফুট আড়াই ইঞ্চির পার্থিব কিন্তু বোঝালেন ঠিক কেন আট বছর পর ভারতীয় দলে ডাক পেয়েও তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একই রকম স্বচ্ছন্দ। প্রথম ইনিংসে তাঁর ৯০ রান মুম্বইয়ের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একশো রানের লিড দেয় টিমকে। যার পর দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের পঁচিশ নম্বর সেঞ্চুরি করে রঞ্জি গৌরব এনে দিলেন গুজরাতকে।
একত্রিশ বছরের পার্থিব এর সঙ্গে দুই ইনিংস মিলিয়ে উইকেট কিপিংটাও করলেন ২২০ ওভার। ১৬৮ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা গুজরাত অধিনায়কের ব্যাট থেকে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি এল চব্বিশটি বাউন্ডারির সাহায্যে। শুরুতে তিন উইকেট হারিয়ে বসার পর মনপ্রীত জুনেজার সঙ্গে পার্থিবের ১১৬ রানের পার্টনারশিপ এবং তার পর রুজুল ভট্টের সঙ্গে ৯৪ রানের জুড়িদারি গুজরাতকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়। শার্দুল ঠাকুরের বলে পার্থিব ফেরার পর শার্দুলকেই পয়েন্টের পাশ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে জয় নিশ্চিত করেন চিরাগ গাঁধী।
ইরানিতে ঋদ্ধি বনাম পার্থিব
ইরানি ট্রফিতে এ বার দেখা যাবে দেশের দুই সেরা উইকেটকিপারের যুদ্ধ। পার্থিব পটেল বনাম ঋদ্ধিমান সাহা। শনিবার গুজরাতের রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়া ও প্রত্যাশিত ভাবেই ইরানি ট্রফির অবশিষ্ট ভারতীয় দলে ঋদ্ধিমান সাহার জায়গা পাওয়ার পর এটাই ঠিক হয়ে গেল। মুম্বইয়ের ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন গুজরাত ও অবশিষ্ট ভারত মুখোমুখি হবে প্রতি বছরের মতো। পাঁচ দিনের এই ম্যাচেই দেখা যাবে ভারতের দুই সেরা টেস্ট কিপারের লড়াই। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ মনোজ তিওয়ারি। রঞ্জিতে ভাল ব্যাটিং পারফরম্যান্সের জন্য নির্বাচকরা এ বার মনোজকে আর সরিয়ে রাখতে পারেননি। শনিবার পার্থিব পটেলের গুজরাত রঞ্জি ট্রফির নতুন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই ইরানি ট্রফির অবশিষ্ট ভারতের দল ঘোষণা করল বিসিসিআই। দলের ক্যাপ্টেন চেতেশ্বর পূজারা। বিশাখাপত্তনমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে বাঁ থাইয়ে চোট পাওয়ার পর ঋদ্ধির প্রত্যাবর্তন ঘটছে ইরানিতে। যদিও তিনি মধ্যে স্থানীয় ক্রিকেটে খেলেছেন। সদ্য টেস্টে খেলা করুণ নায়ারও আছেন অবশিষ্ট দলে। এ ছাড়া রঞ্জিতে খেলা এক ঝাঁক সফল ক্রিকেটারকে পূজারার দলে রাখা হয়েছে। দলে আরও একজনকে কিপার হিসেবে রাখা হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের ঈশান কিষাণ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মুম্বই প্রথম ইনিংস ২২৮
(পৃথ্বী শ ৭১, আরপি সিংহ ২-৪৮)।
গুজরাত প্রথম ইনিংস ৩২৮
(পার্থিব ৯০, শার্দুল ৪-৮৪)
মুম্বই দ্বিতীয় ইনিংস ৪১১
(শ্রেয়স আইয়ার ৮২, অভিষেক নায়ার ৯১, চিন্তন গজ ৬-১২১)
গুজরাত দ্বিতীয় ইনিংস ৩১৩-৫ (পার্থিব ১৪৩)