নিখুঁত অঙ্কের যুদ্ধে হার মানল সৌন্দর্য

শিল্পী বনাম অ্যাথলিট। শনিবার রাতের এল ক্লাসিকোর এর থেকে বড় ট্যাগলাইন আর কিছু হতে পারত না। এক দিকে মেসির ঈশ্বরপ্রদত্ত স্কিল। অন্য দিকে রোনাল্ডোর গতি আর শক্তি।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৮
Share:

এক ফ্রেমে দুই ব্যালন ডি’অর।

বার্সেলোনা ১ (সুয়ারেজ)

Advertisement

রিয়াল মাদ্রিদ ১ (র‌্যামোস)

Advertisement

শিল্পী বনাম অ্যাথলিট।

শনিবার রাতের এল ক্লাসিকোর এর থেকে বড় ট্যাগলাইন আর কিছু হতে পারত না।

এক দিকে মেসির ঈশ্বরপ্রদত্ত স্কিল। অন্য দিকে রোনাল্ডোর গতি আর শক্তি।

অসংখ্য ফুটবলভক্তের মতো আমিও আশা করে বসেছিলাম গোল আর সুন্দর সমস্ত মুভে ভরা মনোরঞ্জক একটা প্যাকেজ দেখতে পাব। আসলে এল ক্লাসিকো মানেই তো প্রতিভাদের সম্মেলন।

কিন্তু কোথায় কী?

মনোরঞ্জন তো দূরের কথা। নব্বই মিনিট শেষে একটা মেকানিক্যাল ফুটবল ম্যাচ দেখলাম। যেখানে পদ্ধতি ছিল। সৌন্দর্য ছিল না। ছক ছিল। চোখ ধাঁধানো কোনও পারফরম্যান্স ছিল না। তাই ড্র হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।

জিদান আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ছক নিয়ে স্ট্র্যাটেজি সাজিয়েছিলেন। রিয়াল কোচ ভাল মতোই হোমওয়ার্ক করে এসেছিলেন। জানতেন, বার্সা বল পেলে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। বিশেষ করে ফরোয়ার্ডের তিনজন। তাই মেসি, সুয়ারেজের জবাবে থ্রি-ম্যান ব্লকিংয়ে চলে যান জিদান। মেসিরা বল পেলে একজন প্রাইমারি-ব্লকার থাকবে। বাকি দু’জন স্ন্যাচারের কাজ করবে। একজন কেটে গেলে আর একজন সামলে নেবে।

প্রথমার্ধে বেশ কার্যকর হয় জিদানের ছক। বার্সা বল নিয়ে বেশি কিছু করতে পারছিল না। মেসি-সুয়ারেজ কার্যত অদৃশ্য ছিল।

কিন্তু আগেও বলেছি, আবার বলব। আধুনিক ফুটবলে ব্যক্তিগত প্রতিভা যে কোনও সিস্টেমকে হারিয়ে দিতে পারে। দুই ক্লাবে এমন এমন সমস্ত ফুটবলার আছে যারা হয়তো গোটা ম্যাচে অদৃশ্য থাকবে। ওদের একটা সুযোগই যথেষ্ট। লুইস সুয়ারেজও সেই লিগেই পড়ে। ৫৩ মিনিটে নেইমারের একটা ফ্রি-কিক। সেখান থেকেই হেডে গোল। ওপেন প্লে থেকে যে দিন সুযোগ তৈরি করতে সমস্যা হয়, সেট পিসের উপর মন দিতে হয়। বার্সা সেটাই করল। নিঁখুত সেট পিস। নেইমারের ডেলিভারি ছিল দারুণ। সুয়ারেজের হেডটাও প্রমাণ দিল ও কেন এত সুযোগসন্ধানী।

চাপেকোয়েনসে স্মরণে ক্লাসিকো শুরুর আগে বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ।

সুয়ারেজের গোলের পরেই ম্যাচটার টেম্পোটা একটু বাড়ল। রিয়াল আর আগের মতো শুধু প্রতিআক্রমণের জন্য অপেক্ষা করছিল না। নেইমার-সুয়ারেজরা জায়গা পাচ্ছিল। আর তাতে একটুআধটু সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। ইনিয়েস্তা নামায় মেসিও উইংয়ে চলে গেল। মাঝমাঠ নিয়ে ভাবতে হচ্ছিল না।

ফুটবলে একটা প্রবাদ আছে— ‘‘কিল হোয়েন ইউ হ্যাভ দ্য চান্স।’’ সুযোগ পেলে বিপক্ষকে শেষ করে দাও। বার্সা সেটা করল না। মেসি-নেইমাররা সহজ সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারল না। তার খেসারতও দিতে হল ম্যাচের শেষের দিকে। রিয়ালের গোলটাও বার্সা গোলের রিপ্লে ছিল। র‌্যামোসের হেডে শক্তি আর সঠিক প্লেসমেন্ট দুটোই ছিল। ওটাই হল সেট পিস থেকে।

রিয়ালের আসল সমস্যাটা ছিল উইংয়ে। গ্যারেথ বেল না থাকায় কাউন্টারে সেই গতিটাই ছিল না রিয়ালের খেলায়। বেলের জায়গায় লুকাস প্লেয়ারটা বলের উপর ভাল। কিন্তু গতি কম। তার উপর আবার টনি ক্রুজ নেই। মাঝমাঠ থেকে বল ডিস্ট্রিবিউশনও খারাপ ছিল। তাতেও বলব দুই দলের মধ্যে পরিকল্পনা ছিল বেশি রিয়ালের। বার্সা যেখানে মিসপাসের পর মিসপাস করল, রিয়াল কিন্তু পদ্ধতি মেনে খেলেছে।

দিনের শেষে তাই ড্র-টা যোগ্য রেজাল্ট ছিল। প্রতিদিন তো আর মেসি-রোনাল্ডো গোল করে বাঁচাবে না!

ছবি: রয়টার্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন