সুযোগ: বিরাটের সঙ্গে খেলতে মুখিয়ে প্রয়াস। নিজস্ব চিত্র
দু’দিন আগেও সে যখন ইডেনে অনুশীলন করতে এসেছিল, তখন কেউ খোঁজও নেয়নি। কিন্তু বুধবার সকালে সেই ইডেনেই ১৭ বছর বয়সি ছেলেটিকে নিয়ে একাধিক উৎসাহিত মানুষ দেখা গেল। রাতরাতি জীবন পাল্টে গিয়েছে প্রয়াস রায়বর্মণের।
মঙ্গলবার আইপিএল নিলামে যার ২০ লক্ষ টাকা প্রাথমিক দর ছিল, সেই প্রয়াসকে দেড় কোটি টাকায় নিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (আরসিবি)। প্রয়াসকে নিয়ে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের সঙ্গে বিরাট কোহালির দলের রীতিমতো লড়াই হয়। শেষ পর্যন্ত তরুণ লেগস্পিনারকে ছিনিয়ে নেয় আরসিবি।
প্রয়াস মনে করে, বিজয় হজারে ট্রফির পারফরম্যান্সই সম্ভবত নজর কেড়েছে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির। বুধবার ইডেনের ক্লাবহাউসে বসে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রটি বলে, ‘‘বিজয় হজারে ট্রফিতে অভিষেক ম্যাচে জম্মু ও কাশ্মীরের বিরুদ্ধে চার উইকেট পেয়েছিলাম। ওই প্রতিযোগিতায় সাত ম্যাচে ১১টি উইকেট পাই। এ ছাড়াও অনূর্ধ্ব-২৩ সি কে নাইডু ট্রফিতে গত বছর ১১ উইকেট পেয়েছিলাম। এ সব দেখেই হয়তো আরসিবি-র আমাকে পছন্দ হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ‘সাদা জামার ক্রিকেটে’ প্রয়াসকে দেখতে চান বাবা
মহম্মদ শামি, ঋদ্ধিমান সাহার পরে প্রয়াসই বাংলার একমাত্র ক্রিকেটার, যাকে এ বারের আইপিএলে খেলতে দেখা যেতে পারে। তবে যুজবেন্দ্র চহাল, মইন আলি, ওয়াশিংটন সুন্দর ও পবন নেগিকে পিছনে ফলে প্রথম এগারোয় থাকার দৌড়ে থাকতে পারবে কি না শেন ওয়ার্নের এই অন্ধ ভক্ত, সেটাই প্রশ্ন। প্রয়াসের লক্ষ্য প্রথম একাদশে সুযোগ করে নেওয়া। ‘‘আরসিবি-র নেটে নিজেকে উজাড় করে দেব। প্রমাণ করব, প্রথম একাদশে থাকার যোগ্য আমি’’, সাফ বলে দেয় প্রয়াস।
আরও পড়ুন: হরমনপ্রীতদের কোচ হওয়ার ‘পরীক্ষা’ কার্স্টেনদের
অজয় বর্মা ও শিবনাথ রায়ের প্রশিক্ষণে প্রথম ক্রিকেট শেখার পরে কলকাতায় এসে জয়ন্ত ঘোষ দস্তিদারের কাছেই ক্রিকেটের বেশির ভাগটুকু শেখা তার। বুধবার থেকেই ইডেনের জিমে তার আইপিএলের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল।
বিশেষ কোনও প্রস্তুতি? প্রয়াসের উত্তর, ‘‘আইপিএলে সফল হতে গেলে বোলিংয়ে বৈচিত্র আনা প্রয়োজন। লেগস্পিনার হিসেবে আমার হাতে গুগলি ও ফ্লিপার রয়েছেই। এখন টপ স্পিনটাও রপ্ত করার চেষ্টা করছি। তবে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করার সময় (নরেন্দ্র) হিরওয়ানি স্যর আমাকে বলেছিলেন, আর যাই হোক, এক জায়গায় সারা দিন বোলিং করে যেতে হবে। সেটাই করে যাব। পাশাপাশি বিরাট ভাইয়ের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে কী ভাবে এই পর্যায়ে নিজের ফিটনেস তৈরি করা যায়।’’
কিন্তু মার্চে সল্টলেকের কল্যাণী পাবলিক স্কুলের এই ছাত্রের সিবিএসই পরীক্ষাও। আইপিএল, না পরীক্ষা, কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দেবে সে? তার উত্তর, ‘‘দু’টোই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট জীবনের জন্য আইপিএল যে রকম জরুরি। সে রকমই পড়াশোনার জন্য বোর্ডের পরীক্ষাও। প্রত্যেক বছর আইপিএল খেলার সুযোগ আসবে কি না, জানি না। স্কুলে কথা বলব। অনুরোধ করব, এ বিষয়ে কোনও বিশেষ ব্যবস্থা যদি তারা নিতে পারে।’’ মঙ্গলবার রাত থেকেই তার মোবাইলে আসতে শুরু করেছে বন্ধুদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাবার্তা। কিন্তু এ সবে ভেসে যেতে চায় না প্রয়াস। তার বক্তব্য, ‘‘ভাল সুযোগ পেয়েছি। এখানেই আসল শুরু। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরের পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যেতে চাই আমি।’’ এখন থেকে সেই প্রয়াসই শুরু হবে তার।