PV Sindhu

জানেন লড়াই কঠিন, কিন্তু দেশকে অলিম্পিক্সে আরও একটা পদক দিতে চান, কলকাতায় এসে বললেন সিন্ধু

অতীতের জয় বা সাফল্য নিয়ে ভাবতে পছন্দ করেন না সিন্ধু। সামনের দিকে তাকান সব সময়। কারণ প্রতিটি ম্যাচ শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। জায়গা ধরে রাখার লড়াই যে ভীষণ কঠিন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৩৬
Share:

পিভি সিন্ধু। —নিজস্ব চিত্র।

এক দিনের বিশ্বকাপের মাঝে শহরে হাজির আর এক বিশ্বজয়ী। পিভি সিন্ধু। চোটের জন্য আপাতত কোর্টের বাইরে ভারতের এক নম্বর মহিলা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের অনুষ্ঠানে এসে জানালেন, তাঁর লক্ষ্য দ্রুত ফিট হয়ে কোর্টে ফেরা। আরও একটা অলিম্পিক্স পদক দিতে চান দেশকে। তাই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।

Advertisement

বেশ কিছু দিন ধরে সেরা ফর্মে দেখা যাচ্ছে না সিন্ধুকে। কয়েক দিন আগে ডেনমার্ক ওপেনে ক্যারোলিনা মারিনের বিরুদ্ধে ম্যাচে মেজাজ হারিয়েছিলেন। সিন্ধুর ক্ষেত্রে যা পরিচিত ছবি নয়। তাই প্রথমেই উঠল সেই প্রসঙ্গ। বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইলেন না প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সিন্ধু বললেন, ‘‘এ সব খেলার অংশ। বড় কিছু নয়। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিজস্ব খেলার ধরন থাকে। কৌশল থাকে। মারিনেরও আছে। সে দিন একটু বেশি চিৎকার করছিল। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। ওটা নিয়ে আর ভাবছি না। আমি সামনে তাকাতে চাই। তা ছাড়া খেলার উত্তেজনার মধ্যে এ রকম হয়েই থাকে।’’

ফর্মে নেই মেনে নিলেন। সিন্ধুর বক্তব্য, ‘‘এক নম্বর হওয়া ভীষণ কঠিন। তার থেকেও বেশি কঠিন সেই জায়গা ধরে রাখা। সব ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। কিছু জিতব। কিছু হারতেও হবে। বরং উপরে ওঠা তুলনায় সহজ। তখন সবাই আপনার খেলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে না। শক্তি-দুর্বলতা সব কিছু জানা থাকে না। কিন্তু উপরে উঠে যাওয়ার পর আপনার সব কিছুই প্রতিপক্ষের কাছে পরিষ্কার। তখন লড়াই আরও কঠিন হয়। সেরা পারফরম্যান্স করার জন্য শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ফিট থাকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কোনও একটা কম থাকলেও কোর্টে নেমে ১০০ শতাংশ দেওয়া যায় না। তবু সব সময় চেষ্টা করি ১০০ শতাংশ দেওয়ার। এখনকার খেলায় মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’

Advertisement

সামনের বছর অলিম্পিক্স। কতটা আশাবাদী আপনি? এই প্রশ্নে বেশ আত্মবিশ্বাসী শুনিয়েছে সিন্ধুকে। বলেছেন, ‘‘জানি না সোনা জিততে পারব কি না। চেষ্টা তো করবই। আসলে ও ভাবে বলা যায় না। তবে দেশকে আরও একটা অলিম্পিক্স পদক দিতে পারব আশা করি। অলিম্পিক্সের আগে ন’মাস সময় আছে। সামনের সব প্রতিযোগিতাই গুরুত্বপূর্ণ। প্যারিসের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এই প্রতিযোগিতাগুলো থেকেই। সেরাটা দিতেই হবে। সে ভাবে প্রস্তুতি নিতে চাই। চোট-আঘাত খেলার অংশ। কোনও খেলোয়াড়ই চোট পেতে চায় না। তাই এ সব নিয়ে বেশি ভাবি না। প্রতিপক্ষ অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। প্রস্তুত হতে হবে। আপাতত যতটা দ্রুত সম্ভব কোর্টে ফিরতে চাই।’’

আট বছর বয়স থেকে ব্যাডমিন্টন খেলছেন সিন্ধু। বাবা-মা দু’জনেই ভলিবল খেলতেন। তাঁরা চাইতেন, মেয়েও তাঁদের মতো ভলিবল খেলুক। কেন খেললেন না? সিন্ধুর উত্তর, ‘‘ব্যাডমিন্টন খেলব এটাও তো ভাবিনি প্রথমে। এমনি মজা করে খেলতাম। যেমন সব বাচ্চা খেলে। সেই থেকেই খেলাটা ভাল লেগে যায়। বাবা-মা-ও পরে আর বাধা দেননি। বরং একটা সময় পর দু’জনেই রেলের চাকরি ছেড়ে দেন আমার জন্য। বাবা সব সময় আমার সঙ্গে ঘুরতেন। মা বাড়ি সামলাতেন। আমার কখন কী দরকার, সব খেয়াল রাখতেন। সব কিছু হাতে হাতে এগিয়ে দিতেন। আজ পর্যন্ত যত পদক জিতেছি, প্রতিটিতে আমার বাবা-মার অবদান রয়েছে। তাই আমার সব সাফল্য তাঁদের উৎসর্গ করি।’’ তা হলে কি কোচদের কোনও অবদান নেই? সিন্ধু বলছেন, ‘‘শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত যত জন কোচের কাছে অনুশীলন করেছি, সকলের কাছেই কিছু না কিছু শিখেছি। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কোচেরা পথ না দেখালে কী করে এগোতাম এতটা পথ! তাঁরা তো আছেনই। একদম ছোট থেকে জাতীয় দল পর্যন্ত সব জায়গায় কোচের অবদান রয়েছে।’’

সিন্ধু মেনে নিয়েছেন, অনেক সময় খেলার কৌশল বা ধরন নিয়ে কোচেদের সঙ্গে মতান্তর হয়। সে ক্ষেত্রে কোচের নির্দেশ মতো খেলার চেষ্টা করে দেখেন। ইতিবাচক ফল না পেলে নিজের মতো করে খেলার চেষ্টা করেন। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী সিন্ধু। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময় ছবিটা এ রকম ছিল না। সাইনা নেহওয়াল, আমি উঠে এসেছি মেয়েদের মধ্যে। আরও মেয়ে উঠে আসছে। ছেলেরাও খুব ভাল করছে আন্তর্জাতিক স্তরে। এখন আমরা বিশ্ব পর্যায়ে নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছি। দেশে প্রতিভার অভাব নেই। গ্রামে, ছোট শহরে অনেকে খেলতে চায়। কিন্তু তাদের কাছে পরিকাঠামো পৌঁছে দিতে হবে বা পরিকাঠামোর কাছে তাদের নিয়ে আসতে হবে। সরকার এবং ব্যাডমিন্টন সংস্থা চেষ্টা করছে। আরও করতে হবে। হায়দরাবাদ এখন ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ভরকেন্দ্র। বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়েও বেশ কিছু অ্যাকাডেমি রয়েছে। দেশের প্রায় সর্বত্রই এখন ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি রয়েছে। তাই ভাল কিছু আশা করতেই পারি আমরা।’’ একই সঙ্গে সতর্ক করে দিয়েছেন অভিভাবকদেরও। সিন্ধুর বার্তা, ‘‘বাচ্চাকে অ্যাকাডেমিতে পাঠিয়েই ভাববেন না চার বা ছ’মাসে পদক জিতে আনবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে। ভরসা রাখতে হবে। ছোটদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। ব্যাপারটা সহজ নয়। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে আমি এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। একটা সময় ৫৭ কিলোমিটার দূরে অনুশীলন করতে যেতাম। পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। একমাত্র কঠোর পরিশ্রমই সাফল্য এনে দিতে পারে।’’

সিন্ধুর কাছে সব ম্যাচই নতুন। প্রতি দিন শূন্য থেকে শুরু করার মানসিকতা বজায় রাখতে চান। অতীতের ম্যাচ বা সাফল্য নিয়ে ভাবেন না। তাতে আত্মতুষ্টি আসতে পারে। প্রতিটি নতুন দিনে নতুন সাফল্যের জন্য কোর্টে নামেন। সেটা কোনও প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ হোক বা ফাইনাল। সমান গুরুত্ব দিয়ে খেলেন। হার মানেই শেষ। জয় মানে আর একটু এগিয়ে যাওয়া। চোটের জন্য আপাতত বিশ্রামে আছেন। সময়-সুযোগ মতো চোখ রাখছেন ক্রিকেট বিশ্বকাপে। ক্রিকেটের প্রতি বিরাট কোহলির একাগ্রতা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। রোহিত শর্মার দলকে শুভেচ্ছা জানাতেও ভুললেন না সিন্ধু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন