স্মিথ-দর্শনে রাজস্থান এখন নতুন সিএসকে

রাজস্থান রয়্যালসকে টানা তিনটে ম্যাচ জিততে দেখে অনেকেই আশ্চর্য হবেন। মনে হতেও পারে যে, টিমটা তো মোটেও হাইপ্রোফাইল নয়। গ্ল্যামারাস মহাতারকা নেই। তবু এত ধারাবহিক কী ভাবে প্রত্যেক বার থেকে যায় টিমটা? আসলে উপরের লাইনেই ওদের সাফল্যের কারণটা লুকিয়ে আছে। ওদের গ্ল্যামার নেই। ওরা টিমের পিছনে বিশাল কোনও টাকা খরচ করে না। তাই ওদের উপর ফ্র্যাঞ্চাইজির মারাত্মক পারফরম্যান্স প্রেশারও নেই। আমি বলছি না যে, ওরা জিততে নামে না।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪৬
Share:

বিধ্বংসী স্মিথ। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

রাজস্থান রয়্যালসকে টানা তিনটে ম্যাচ জিততে দেখে অনেকেই আশ্চর্য হবেন। মনে হতেও পারে যে, টিমটা তো মোটেও হাইপ্রোফাইল নয়। গ্ল্যামারাস মহাতারকা নেই। তবু এত ধারাবহিক কী ভাবে প্রত্যেক বার থেকে যায় টিমটা?

Advertisement

আসলে উপরের লাইনেই ওদের সাফল্যের কারণটা লুকিয়ে আছে। ওদের গ্ল্যামার নেই। ওরা টিমের পিছনে বিশাল কোনও টাকা খরচ করে না। তাই ওদের উপর ফ্র্যাঞ্চাইজির মারাত্মক পারফরম্যান্স প্রেশারও নেই। আমি বলছি না যে, ওরা জিততে নামে না। ওরাও প্রত্যেকটা ম্যাচ জিততে চায়। কিন্তু আইপিএলের বড় টিমগুলোর মতো ‘না জিতলে সব গেল’ মার্কা কোনও ব্যাপার ওদের নেই।

মঙ্গলবার ওদের প্রতিপক্ষ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকেই ধরছি। এ দিন হরভজন ছাড়া নামল আর আইপিএলে আটে এখনও পর্যন্ত সব ক’টা ম্যাচ হারল। নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, পরের ম্যাচে ওদের টিমে দু’তিনটে বদল দেখব। দেখুন, বড় ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে প্লেয়ারদের কাছে একটাই জিনিস যে কোনও মূল্যে চাওয়া হয়। টিমের জয়। রাজস্থান রয়্যালসের থিওরি আবার সম্পূর্ণ উল্টো। জিতলে তো কোনও কথাই নেই। কিন্তু যদি হেরেও যায়, প্লেয়ারদের ঘাড়ে সঙ্গে সঙ্গে কোপ পড়ার সম্ভাবনা কম। খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি আমি। ওদের একটা সেট টিম থাকে পাঁচ-ছ’টা ম্যাচের জন্য। সবাইকে ওদের টিমে বলে দেওয়া হয় যে, হারুক বা জিতুক, পাঁচ-ছ’টা ম্যাচে টিম পাল্টাবে না। এতে ক্রিকেটারদের মনোবল অদ্ভুত বেড়ে যায়। তার নিজের উপর আপনাআপনিই বিশ্বাস বাড়তে থাকে। একটা উদাহরণ দিই। এই যে দীপক হুডা। আইপিএল আটের আবিষ্কার যাকে বলা হচ্ছে। ওকে আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখছি। ভাল ব্যাট। কিন্তু আইপিএলে রাজস্থান ওকে এতটাই বিশ্বাস দিয়েছে যে, ভাল ব্যাটিংটাই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পাল্টে গিয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার আবার খেলে দিল হুডার অধিনায়ক। স্টিভ স্মিথ। মুম্বই এ দিন প্রথমে ব্যাট করে খারাপ রান তোলেনি। পোলার্ড (৩৪ বলে ৭০), কোরি অ্যান্ডারসন (৩৮ বলে ৫০) শেষ সাত ওভারে একশোর উপর যোগ করেছে। কিন্তু স্মিথের একটা অবিশ্বাস্য ইনিংসের (৫৩ বলে ৭৯ ন:আ:) কাছে ওরা হেরে গেল। ভুল বললাম। হেরে গেল স্মিথের অবিশ্বাস্য দায়বদ্ধতার কাছে। এমনিতেই এ বার অনেক ফ্র্যা়ঞ্চাইজির চেয়ে রাজস্থান এগিয়ে কারণ ওদের তিন জন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার আছে। স্মিথ, ওয়াটসন, ফকনার। ওয়াটসনকে তার মধ্যে ওরা আপাতত চোটের জন্য পাচ্ছে না। কিন্তু তাতেও সাত উইকেটে ম্যাচটা জিততে অসুবিধে হয়নি। এই রাজস্থান টিমটা অনেকটা সিএসকে-র মতো। একটা সেট টিম ধরে রেখে খেলছে। চেন্নাইয়ে অবশ্য গ্ল্যামার কোশেন্টটা বেশি। রাজস্থানে ইউটিলিটি প্লেয়ার। আর রয়েছে স্মিথ-দর্শন।

আসলে স্মিথ যদি আপনার টিমের প্রধান চরিত্র হয়, এমনিই ওর কাজকর্মে গোটা টিম প্রভাবিত হয়ে যাবে। স্মিথকে তো প্রথম নিয়ে এসেছিল পুণে ওয়ারিয়র্স। আমি ওই ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে স্মিথকে অনেকের চেয়ে একটু বেশি চিনি। দেখতাম, ছেলেটা জেতা ছাড়া কিছু বোঝে না। ক্রিকেট ছাড়া কিছু বোঝে না। ওর সঙ্গে ডিনারে যান। স্রেফ ক্রিকেট নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে যাবে। আবার প্র্যাকটিসের সময় টিমের তোয়াক্কা না করে একা একা চলে যাবে মাঠে। ম্যাচে খেলুক না খেলুক, ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টা আগে পৌঁছে নকিং করে যাবে। আর স্মিথ-ফকনার এরা হারতে ঘৃণা করে। আইপিএলে দু’ধরণের ক্রিকেটার হয়। এক, যারা ভাল খেলতে চায় পরের নিলামে দাম বাড়ানোর জন্য। আর এক দল থাকে যারা নিজেরা পারুক না পারুক, টিম জিতুক সেটা চায়। স্মিথ দু’নম্বর বিভাগের। ও খেলুক না খেলুক, টিম হেরে গেলে ওর চেয়ে বেশি হতাশ আর কাউকে দেখাবে না।

আর স্মিথের জেদ চাপলে কী হয়, মুম্বই তো হাড়ে হাড়ে টের পেল!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১৬৪-৫ ( পোলার্ড ৭০, অ্যান্ডারসন ৫০)। রাজস্থান রয়্যালস ১৯.১ ওভারে ১৬৫-৩ (স্মিথ ৭৯ন.আ., রাহানে ৪৬)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন