বিষণ্ণ রাঁচিতে এখন আশাবাদের নাম হেলিকপ্টার-ঝড়

কেউ বলছেন, এটা নিখাদ আত্মত্যাগ। বিরাট কোহালিকে সুযোগ করে দিতে এটা তাঁর এক নিঃস্বার্থ পদক্ষেপ।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২০
Share:

কেউ বলছেন, এটা নিখাদ আত্মত্যাগ। বিরাট কোহালিকে সুযোগ করে দিতে এটা তাঁর এক নিঃস্বার্থ পদক্ষেপ।

Advertisement

কেউ বলছেন, অবাক হওয়ার তো কিছু নেই। এতদিন ধরে তাঁকে দেখছে ভারতীয় ক্রিকেট, আর এটুকু বুঝল না? কোনও বিশেষ পদ আঁকড়ে থাকার লোক যে তিনি নন, নেতৃত্বের মোহ যে তাঁকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে না, আগেও তো দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। আবার দেখল। তা হলে নতুন কী?

কেউ বলছেন, ভারতীয় বোর্ডের টালমাটাল পরিস্থিতে কিছু একটা বিপদের আঁচ পেয়েছিলেন তিনি। হয়তো বুঝেছিলেন, গণ্ডগোল ঘটতে পারে ভবিষ্যতে। তাই কাউকে সুযোগটাই দিলেন না। নিজেই সরে গেলেন।

Advertisement

যা-ই হোক। নেপথ্যে আসল ঘটনা যা-ই ঘটে থাকুক। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরে বৃহস্পতিবার যদি কেউ একটু ঘোরাঘুরি করতেন, কথা বলতেন তাঁর কাছের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে, আবহকে ধরার জন্য একটাই শব্দ পেতেন লেখার।

বিষন্ন।

তাঁর ছোটবেলার দুই ছায়াসঙ্গী যেমন। পরমজিৎ সিংহ এবং শ্রীমন্ত লোহানি। ধোনির বায়োপিকের দৌলতে যাঁরা এখন বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন ছোট্টু ভাইয়া এবং চিট্টু নামে। পরমজিতকে দেখানো হয়েছিল রাঁচি মেন রোডের খেলাধুলোর সরঞ্জামের মালিক হিসেবে। ধোনির ব্যাটের স্পনসরশিপ জোগাড়ের কারণে বিভিন্ন জায়গায় যিনি ঘুরেছিলেন। তাঁর দোকান আজও আছে। সীমিত ওভারের ক্যাপ্টেন্সি থেকে ‘মাহি’-র বিদায় নিয়ে জিজ্ঞেস করা তাঁর উত্তর আসে, ‘‘বিশ্বকাপের আগে বিরাটকে তৈরি হওয়ার সুযোগটা দিয়ে দিল ধোনি। ক’জন পারে এ রকম? আমি তো ওর জন্য গর্বিত।’’

শ্রীমন্ত ওরফে বায়োপিকের চিট্টু, যিনি এক সময় ধোনিকে বাইকে চাপিয়ে বিভিন্ন মাঠে নিয়ে যেতেন তাঁকে আবার বলতে শোনা গেল, ‘‘ও তো আর পাঁচজন ক্রিকেটারের মতো নয় যে ক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকবে। ক’জন ভারতীয় ক্রিকেটার এর আগে নিজে থেকে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিয়েছে বলতে পারেন? এখানেই মাহি সবার চেয়ে আলাদা।’’ দু’জনেই বললেন যে, ভাল সিদ্ধান্ত। তাঁদের গর্ব হচ্ছে ভেবে। কিন্তু কোথাও যেন সেই গর্বের মধ্যে চোরা একটা বিষন্নতাও মিশে থাকে। কিছুতেই যাকে আলাদা করা যায় না।

যাবেও বা কী করে? এমএস ধোনি নামটা যে এঁদের প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে ছিল। রাঁচির সিসিএল টিমে আদিল হুসেনের অধিনায়কত্বে এক সময় পাঁচ বছর খেলেছিলেন ধোনি। আদিল আজ সিসিএলের ম্যানেজার। ধোনির রাতারাতি নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা তোলায় বললেন, ‘‘সিদ্ধান্তটা বুঝিয়ে দিল ধোনি কতটা বড় মনের। বুঝিয়ে দিল যে, আগামী বিশ্বকাপে ও অটোমেটিক চয়েস হতে চায় না। চায়, বাকিদেরই মতো পারফর্ম করে টিমে আসতে। আসলে বরাবর চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসে ও।’’ ধোনির ছোটবেলার কোচ কেশব বন্দ্যোপাধ্যায় একটু অন্য রকম বললেন। ‘‘কেন জানি না মনে হচ্ছে, ধোনি হয়তো কিছু আঁচ করেছিল। এখন বোর্ডে টালমাটাল অবস্থা চলছে। হয়তো ভেবেছিল ওর সমস্যা হতে পারে। তাই নিজেই চলে গেল।’’ কেশব সঙ্গে জুড়ে দেন, কিছু দিন আগেই ধোনির সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। সেখানে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে প্রচুর কথাবার্তাও হয়েছে। ছোটবেলার গুরুর কখনও একবারের জন্যও মনে হয়নি যে, ছাত্র ভারতীয় টিমের ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিতে পারে। ধোনির আর এক বাঙালি কোচ চঞ্চল ভট্টাচার্য-র মতে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত।

তবে দুঃখের মধ্যেও রাঁচি একটা বিষয়ে স্বস্তি পাচ্ছে। নিজেকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছে এই ভেবে যে, যা-ই হোক খেলাটা তো এখনও চালিয়ে যাবে। ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিলেও সাধারণ যোদ্ধার মতো ধোনি খেলবেন ওয়ান ডে-টি-টোয়েন্টি। এ দিন ধোনির বাড়ির সামনে প্রচুর লোকের জমায়েত দেখা যায়। কাউকে কাউকে বলতেও শোনা যায় যে, ক্যাপ্টেন্সির চাপ সরে গেল মাথার উপর থেকে। এ বার ধোনি বোঝাবেন, ধুন্ধুমার কাকে বলে। আবার আসতে চলেছে হেলিকপ্টার শটের ঝড়।

শুনলে মনে হবে, শত দুঃখের মধ্যে ওটাই এখন একমাত্র আশাবাদ। বিষন্নতার রাঁচিতে স্বপ্নের নাম এখন ওই হেলিকপ্টার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন