র‌্যান্টি যেন আগুন, ডুডু বারুদ

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

হ্যাটট্রিকের পথে ডুডু। বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার

ইস্টবেঙ্গল-৪ (র‌্যান্টি, ডুডু-হ্যাটট্রিক)

Advertisement

আর্মি একাদশ-১ (জেইন পি)

আর্মান্দো কোলাসোর টিমের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দু’টো রিজার্ভ বেঞ্চ ছিল! একটা যুবভারতীতে সেনাদের। অন্যটা স্টেডিয়াম থেকে অনেক দূরে গল্ফগ্রিনে।

Advertisement

বাড়ির টিভিতে ম্যাচ দেখে উঠে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুব্রত ভট্টাচার্য বললেন, “ম্যাচটা ড্র হলে ভাল হত। আমাদের সুবিধা হত। কিন্তু ডুডু আর র‌্যান্টি যা ফর্মে তাতে ওদের আটকানোর ক্ষমতা আর্মির ছিল না। পারবে কী করে?”

লিগ টেবিলে এখন সুব্রত-র টিম টালিগঞ্জ অগ্রগামী শীর্ষে। দু’নম্বরে থাকা সেনারা এ দিন হেরে যাওয়ায় বাবলুর খুশি হওয়ার-ই কথা। কিন্তু আনন্দ করবেন কী, তিনি তো ভাবতেই পারেননি গোকুলে হঠাৎ-ই এ ভাবে বেড়ে উঠবে ইস্টবেঙ্গল! দু’বার আই লিগ জয়ী কোচ সুব্রত লিগের সাপ-লুডোর অঙ্কটা জানেন। পরস্থিতি যা তাতে খেতাবের দৌড়ে টলি-কোচ দু’টো ব্যাপারে সুবিধাজনক জায়গায়। এক) মাত্র দু’টো ম্যাচ খেলতে হবে তাঁকে। মহমেডান এবং ইস্টবেঙ্গল। সেখানে ইস্টবেঙ্গলের খেলতে হবে চারটি ম্যাচ। দুই) দু’দল এখনও পর্যন্ত পাঁচ পয়েন্ট নষ্ট করলেও, গোল পার্থক্যে টালিগঞ্জ এগিয়ে।

কিন্তু কলকাতা লিগের এই ‘অ্যাডভান্টেজ টালিগঞ্জ’ কত দিন অক্ষত থাকবে? লাল-হলুদের দুই নাইজিরিয়ানের দৌরাত্ম্যে সুব্রতর সব অঙ্কই তো এখন ওলট-পালট হওয়ার জোগাড়। যে টিমটা শেষ আটটা ম্যাচের একটায় মাত্র হেরেছে, সেই সেনাদের ডুডু-র‌্যান্টিরা যে এ ভাবে গোল-গোলায় উড়িয়ে দেবেন কে ভেবেছিল? ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, র‌্যান্টি মার্টিন্স যদি এই ইস্টবেঙ্গল টিমটার আগুন হন, তা হলে ডুডু ওমাগবেমী বারুদ হয়ে এসেছেন। বিস্ফোরণ ঘটাতে আর কী দরকার? হতে পারে এটা ঘরোয়া লিগ। প্রতিপক্ষ দূর্বল। কিন্তু এক হাড়ি ভাতের একটা চাল টিপলেই যে বোঝা যায়, কতটা সেদ্ধ হয়েছে।

ডার্বি জিতলে সেই দল পরের ম্যাচে আটকে যায়, ময়দানে এটাই প্রচলিত ধারণা। সেটা এ দিন বদলে দিলেন ‘আর-ডি’ জুটি। অর্কেস্ট্রার মতো বেজে, বাজিয়ে। আই এস এলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় টিমে নেই প্রথম দলের বারো ফুটবলার। রক্ষণ থেকে মাঝমাঠ, সাইড ব্যাক থেকে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারপ্রায় সব জায়গাতেই নতুনের আবাহন। দীপক তিরকে, অ্যান্টনি সোরেন, সুখবিন্দর সিংহ, প্রহ্লাদ রায়, অবিনাশ রুইদাসএঁদের সবাই তো প্রথম পরলেন লাল-হলুদ জার্সি! যাঁর পাস থেকে ডুডু দু’টো গোল করলেন, সেই সুবোধকুমারও তো শেষ কবে ম্যাচ খেলছেন নিজেই মনে করতে পারলেন না। এরকম একটা দল কি আনায়াসেই না দখল নিল সেনা-ছাউনি। তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে সমর্থকরা যখন হইচই করছেন তখন অভিমানী মুখ নিয়ে আর্মান্দো বলছিলেন, “ডুডু তো জিনিয়াস, ওতো হ্যাটট্রিক করবেই। কিন্তু এত জুনিয়র একসঙ্গে খেলানোর ঝুঁকি কেউ নিয়েছে কখনও। কলকাতায় আমি-ই প্রথম এই কাজটা শুরু করলাম। এটা দরকার ছিল।” শেষ লাইনটা বলার সময় গোয়ান কোচের মুখটা সামান্য উজ্জ্বল হল।

সেনাদের এই টিমটা বিভিন্ন রেজিমেন্টের হাবিলদার, সুবেদারদের নিয়ে গড়া। কোনও বিদেশি নেই। টিমটার সম্পদ বলতে ফিজিক্যাল ফিটনেস আর দৌড়। বেশির ভাগ ফুটবলারেরই বয়স বাইশ-তেইশের কোঠায়। নিয়মিত অনুশীলন হয় বলে অজুর্ন টুডু, অ্যান্টনি ছেত্রী, সন্টু সুব্বাদের লড়াই-এর মধ্যে একটা শৃঙ্খলা আর একাত্মতা কাজ করে। নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করে তারা ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে বেকায়দায়ও ফেলে দিল বেশ কয়েক বার। কিন্তু পেনিট্রেটিং এলাকায় এসেই সেনাদের সব লড়াই শেষ হয়ে যাচ্ছিল। যে টিমটা গোলের দরজা খোলার চাবিটাই ছাউনিতে রেখে আসে তারা কী ভাবে লিগ টেবিলের দু’নম্বরে উঠে এল ভাবতে ভাবতেই গোলমেশিনের গোল। র‌্যান্টি মার্টিন্সের ছয় গজের বক্সে ছোঁকছোঁকানির ফসল ইস্টবেঙ্গল ঘরে তোলার পরই শুরু হল ডুডু-ম্যজিক।

আহা! বাঁ পা-টা যেন মাখন কাটা ছুরি। সেই তেরো বছর আগে ভারতে প্রথম আসার পর স্পোর্টিং ক্লুবের জার্সি গায়ে গোয়ায় যখন দাপাতেনএকেবারে সেই ফর্ম, সেই দাপট যেন ফের হাজির। তাতে মরচে ধরেনি এতটুকু। লাল-হলুদ জার্সিতে ডার্বিতে নেমেছিলেন শেষের দিকে। ক্লান্তির জন্য নামতে চাননি এ দিনের ম্যাচে। কোচের কাছে বিশ্রাম চেয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচ-প্র‌্যাক্টিস দরকার বলে নামিয়ে দেন আর্মান্দো। মরসুমের প্রথম নব্বই মিনিটের ম্যাচ। এবং হ্যাটট্রিক। এ যেন সেই এলাম, দেখলাম, জয় করলামের মতো ব্যাপার। দু’টো গোল-ই বাঁ পায়ে করা। তিনটির মধ্যে নিজে যে গোলকে সেরার স্বীকৃতি দিচ্ছেন সেটা অবশ্য করলেন ডান পা দিয়ে। প্রথম শট সেনা-কিপার বাঁচানোর পর ফিরতি বলে। নিখুঁত লক্ষ্য বোঝাল—ইউরোপে খেলার অভিজ্ঞতা ডুডুকে আরও ধারালো করেছে। সমৃদ্ধ করেছে।

র‌্যান্টি-ডুডুরা যখন মাঠ ছাড়ছেন তখন তাদের গাড়ি ঘিরে উদ্বেল লাল-হলুদ জনতা। পুলিশ ব্যারিকেড করে তাদের তুলে দিল গাড়িতে। কিন্তু ওদের গোল খিদের সামনে ব্যারিকেড তুলবে কে? সেনারাই পারল না, অন্য কেউ পারবে তো?

ইস্টবেঙ্গল: অভ্র, অভিষেক, গুরবিন্দর, সফর, সৌমিক, অবিনাশ (কিষাণ), দীপক (প্রহ্লাদ), সুবোধ (অ্যান্টনি), র‌্যান্টি, ডুডু।

পরিসংখ্যান: হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন