তিনি নাকি এখন টিমের অলিখিত মেন্টর। অধিনায়কের চেয়েও টিমের ‘অভিভাবক’ বেশি।
তিনি কখনও পাওয়ার প্লে স্ট্র্যাটেজিতে অভিনবত্ব উপস্থিত করে ক্রিকেট-দুনিয়াকে চমকে দিচ্ছেন। কখনও বারো বছর আগে ভারত ‘এ’ খেলে প্রায় বিস্মৃত যাওয়া এক ক্রিকেটারকে তুলে এনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন তিনে। সেঞ্চুরির মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন, দিয়ে নিজে নামছেন চার নম্বরে। সবুজ আভা উইকেটে বাড়তি সিমার নিয়ে না নেমে নামছেন স্পিনার নিয়ে।
আর এত কিছু করেও ম্যাচের পর ম্যাচ জিততে অসুবিধে হচ্ছে না। বরং রোজ বিরাট কোহলি অধিনায়কত্বের নিত্যনতুন থিওরির জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার তাঁর রায়ডুকে তিন নম্বরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত যেমন রাতে তুমুল প্রশংসিত হল। প্রাক্তন ভারতীয় ব্যাটসম্যান সঞ্জয় মঞ্জরেকর বলছেন, “ছাব্বিশেই ওর মধ্যে এত পরিণতিবোধ দেখে অবাক হচ্ছি। টিমটাকে দুর্দান্ত ভাবে গাইড করছে। মনে হচ্ছে, ও-ই টিমের মেন্টর।” মঞ্জরেকর বোধহয় ভুল নন। ভারত অধিনায়ক তো নিজেই বললেন যে, নিয়মিত খেয়াল রাখছেন যাতে প্লেয়াররা ক্যাপ্টেনের ভরসাটা ঠিকঠাক পায়। কখনও যাতে টিমের কারও মনে না হয়, অধিনায়ক আস্থা হারাচ্ছে।
“আমার সঙ্গে ডানকান (ফ্লেচার) আর টিম ম্যানেজমেন্টও আছে। একা আমি, বলব না। কিন্তু এটা আমরা থিওরিটিক্যালি করছি। দেখছি যাতে সবাইকে ভরসা আর আত্মবিশ্বাসটা দেওয়া যায়। লাভও তো হচ্ছে। সুযোগ পেয়ে কেউ তো নষ্ট করছে না, পারফর্ম করে ফিরছে,” ম্যাচের পর বলছিলেন ভারত অধিনায়ক। অম্বাতি রায়ডুকে তিন নম্বরে নামানোও যে স্ট্র্যাটেজির অঙ্গ। বলছেন, “বারো বছর আগে ও ইন্ডিয়া ‘এ’ খেলেছিল। একটা সুযোগ ওর প্রাপ্য ছিল। আমি সেটা ওকে দিয়েছি, আর ও সেটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে।”
রাতে রায়ডুকে সাংবাদিক সম্মেলনে দেখে মনে হবে, বৃহস্পতিবারের পর থেকে তিনি বোধহয় বিরাটের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থেকে যাবেন। “বহু দিন লেগে গেল প্রথম সেঞ্চুরিটা পেতে। কোচ, বিরাট, ধোনিভাই এরা আমাকে যা সাহায্য করেছে, জীবনে ভোলা সম্ভব হবে না। নিজের ক্রিকেটীয় দিকটা নয়, আমার সেঞ্চুরির পিছনে ওদের ভরসারই সবচেয়ে বেশি অবদান। সবাই বলত, উইকেটে গিয়ে পড়ে থাক, পড়ে থাক। আমি সেঞ্চুরি চাইনি, টিমকে জেতাতে চেয়েছিলাম,” বলছিলেন রায়ডু।
কোহলির চমক
• ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বরকে রোটেশনে ফেলে দেওয়া। কখনও রায়না, কখনও রায়ডু তিনে।
• পাওয়ার প্লে নেওয়ার প্রথাগত ছক ভেঙে ফেলা।
• পেস সহায়ক উইকেটেও তিন স্পিনারে বাজিমাত।
কিন্তু মিডল অর্ডার ছেড়ে আজ যে তিন নম্বরে নামার সুযোগ আসবে, ভাবতে পেরেছিলেন? কখন আপনাকে তিন নম্বরে নামতে বললেন বিরাট?
“কখন বলল, বলা যাবে না। তবে হ্যাঁ, আমি জানতাম। আর সেঞ্চুরির কথা আপনারা বলছেন। কিন্তু আমার কাছে সেঞ্চুরির চেয়েও দেশের হয়ে খেলাটা বড়। আর আমাদের টিমটা এখন এমন, যে কাউকে যে কোনও ব্যাটিং অর্ডারে নামতে হতে পারে। আমাদের সেটা বলা থাকে। তিন নম্বরে নামাটা আমার কাছে তাই চমক নয়, কারণ এটাই আমাদের টিমের সংস্কৃতি,” বলে দিলেন রায়ডু।
যে সংস্কৃতি এখন টিমকে বলে, একটা সিরিজে প্রথম ম্যাচ, দ্বিতীয় ম্যাচ বলে কিছু হয় না। সব ম্যাচই সিরিজের শেষ ম্যাচ।
ক্যাপ্টেন বিরাট যা বললেন।
থুড়ি, মেন্টর বিরাট বললেন।