সেঞ্চুরি করে রায়ডু। শুক্রবার।
ভুবনেশ্বর কুমার শেষ বলটা ইয়র্কার করতে টিভি ক্যামেরা অম্বাতি রায়ডুর মুখটা ধরল। এক বলে ছয় দরকার ছিল, ইয়র্কারের ধাক্কায় একের বেশি আসেনি, রায়ুডুও তাই টেনশন ছেড়ে স্বস্তির হাসি হাসছেন।
আর একটু হলেই তো সেঞ্চুরির বারোটা বাজছিল!
অজানা ‘রোগ’? সময় খারাপ? না কি প্রতিপক্ষদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স? বিশ্বকাপ-উত্তর ওয়ান ডে-তে ভারতের সমস্যাটা যে কী, যত দিন যাচ্ছে বোঝা কঠিন হচ্ছে। বিশ্বকাপের পর ভারত টেস্ট খেলেছে একটা। বৃষ্টির প্রকোপে ওটাকে একটা না বলে সিকি-টেস্ট বলাই ভাল। ওয়ান ডে, শুক্রবারেরটা ধরলে চারটে। তিনটের প্রতিপক্ষ পদ্মাপারে বাংলাদেশ। চতুর্থটা হারারেতে জিম্বাবোয়ে। দু’টো ওয়ান ডে সিরিজ পৃথিবীর দুই মহাদেশে। কিন্তু কাপ-উত্তর ভারতের পারফরম্যান্স একই থেকে গেল।
কোথাও লজ্জার সিরিজ হার। কোথাও টেনেটুনে জয়।
আজ যেমন দ্বিতীয়টা ঘটল। অতি সাহসী জিম্বাবোয়ে ক্রিকেটভক্তও বলবেন না যে, তাঁদের ক্রিকেটে এখন সোনালি সময় বলে আর কিছু আছে! দুই ফ্লাওয়ার-ভাই, হিথ স্ট্রিকদের জিম্বাবোয়ে যা ছিল, এলটন চিগুম্বুরার জিম্বাবোয়ে শক্তি-মর্যাদায় তার কুড়ি শতাংশও কি না সন্দেহ। ব্যাটসম্যান মেরেকেটে আড়াই জন। চিগুম্বুরা নিজে, শন উইলিয়ামস আর মাসাকাদাজা। গত কয়েক বছর ব্রেন্ডন টেলর জিম্বাবোয়ে ব্যাটিংয়ের প্রধান মুখ ছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপের পর তিনিও খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। সেই জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে কি না জিততে কালঘাম ছুটছে! ম্যাচ জিততে হচ্ছে চার রানে! হারের আশঙ্কা তৈরি করে।
ভারতের দেওয়া ২৫৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে একটা সময় ১৬০ রানে ছ’টা বেরিয়ে গিয়েছিল জিম্বাবোয়ের। সেই সময় মনে হচ্ছিল, টার্গেটের ধারেকাছে পৌঁছনো দূরের ব্যাপার, দুশো টপকাবে কি না সন্দেহ। কিন্তু তার পর থেকে যেটা হল, এক কথায় রূপকথা। পুরোটাই ভারতীয় বোলিং বনাম চিগুম্বুরা। যেখানে জিম্বাবোয়ে ব্যাটসম্যান ভুবনেশ্বরকে অনায়াসে কাট মেরে ফেলে দিলেন। ধবল কুলকার্নিকে অকুতোভয় ছক্কায় মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিলেন। অম্বাতি রায়ডুর সেঞ্চুরি জবাব সেঞ্চুরি দিয়ে দিলেন। এবং ৩০ বলে ৫০, ২৪ বলে ৪৫ থেকে একেবারে ১২ বলে আঠারো দরকারের সমীকরণ হাজির করিয়ে টিমকে ঐতিহাসিক জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করলেন। সত্যি বলতে, শেষ ওভারটা ভুবনেশ্বর কুমার ও রকম দুর্দান্ত বোলিং না করলে ভারত হেরেও যেতে পারত। শেষ ওভারে তো দরকার ছিল মাত্র দশ।
ম্যাচের পর ভারত অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে বলে গেলেন, ‘‘আমি উপর উপর শান্ত থাকার চেষ্টা করলেও ভেতরে বেশ নার্ভাস হয়ে পড়ছিলাম। যা ব্যাট করল চিগুম্বুরা।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘তবে আমাদের সবাই খুব ভাল খেলেছে। বিশেষ করে রায়ডু যে সেঞ্চুরিটা করল, অতুলনীয়। শুরুর দিকে ব্যাট করা খুব সহজ ছিল না।’’ জিম্বাবোয়ে সফরে ভারত অধিনায়কের দু’টো কথাই নির্জলা সত্যি। এ দিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে পড়তে হয় ভারতকে। টিমের দশ রান পেরনোর আগে মুরলী বিজয় আউট, কিছুক্ষণ পর অধিনায়ক রাহানে। শুরুর দিকে বলকে শুধু অফস্টাম্পের বাইরে রাখলেই চলছিল। নড়াচড়া করে ব্যাটসম্যানের বাকি দফারফা বলই করে ছাড়ছিল। মাত্র ৮৭ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট চলে গিয়েছিল ভারতের। কেদার যাদব (৫), মনোজ তিওয়ারি (২)— সবাই ব্যর্থ। রবিন উথাপ্পাও কোনও রান করার আগেই রান আউট!
ওই অবস্থা থেকে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মাস্তুল ধরলেন রায়ডু। সঙ্গী স্টুয়ার্ট বিনি। শুরুর দিকে রায়ডু আক্রমণের রাস্তাতেই যাননি। প্রথম পঁচিশ রান করতে নেন পঞ্চাশ বল, হাফসেঞ্চুরি করেন ৭২ বলে। অপেক্ষা করে ছিলেন, বলের মুভমেন্ট বন্ধ হওয়ার। যে ধৈর্যের পুরস্কার শেষ পর্যন্ত পেলেন রায়ডু। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নিয়মিত নাম্বার থ্রি হারারে সেঞ্চুরির পর তিনি হবেন না। কিন্তু এটুকু বলা হবে যে, জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধেও প্রথম ম্যাচে লাঞ্ছনাই জুটত ভারতের। যা আটকে দিয়েছে রায়ডুর সেঞ্চুরি। বিনি ৭৬ বলে ৭৭ করে গিয়েছেন। কিন্তু ভারতের সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছনোর পাটাতনটা হায়দরাবাদিই তৈরি করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু তার পরেও স্বস্তিতে থাকা গেল কোথায়? রায়ডু অপরাজিত ১২৪ করে গেলে, তিনি করলেন অপরাজিত ১০৪। রায়ডু নায়ক হলে, এলটন চিগুম্বুরা থাকলেন ট্র্যাজিক নায়ক হিসেবে। মাত্র চারটে রানের জন্য যে তফাতটা থেকে গেল। কিন্তু একটা জিনিসও বুঝিয়ে গেল।
চলতি সফরে জিম্বাবোয়েকে হালকা নিলে ভুগতে নয়, ডুবতেও হবে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ২৫৫-৬ (রায়ডু ১২৪ নট আউট, বিনি ৭৭),
জিম্বাবোয়ে ২৫১-৭ (চিগুম্বুরা ১০৪ নট আউট, অক্ষর ২-৪১, বিনি ২-৫৪)।
ছবি: এএফপি।