নায়ক: ব্লাসিচ। ছবি: গেটি ইমেজেস।
সিএসকেএ মস্কো ১ • রিয়াল ০
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, জ়িনেদিন জ়িদান বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি দুঃসময় শুরু হয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ শিবিরে! প্রায় এক যুগ পরে টানা তিন ম্যাচে গোল করে না করে মাঠ ছাড়লেন ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দলের ফুটবলারেরা।
এই মরসুমে লা লিগায় শেষ দু’টো ম্যাচে সেভিয়া ও আতলেতিকো দে মাদ্রিদের বিরুদ্ধে গোল করতে পারেননি করিম বেঞ্জেমা, লুকা মদ্রিচেরা। মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিএসকেএ মস্কোর বিরুদ্ধেও ছবিটা বদলাল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তৃতীয় সাক্ষাতে প্রথম বার রিয়ালকে হারিয়ে অঘটন ঘটালেন ইগর আকিনফেফ-রা।
রিয়াল মাদ্রিদে শেষ বার এ রকম বিপর্যয় ঘটেছিল প্রায় এক যুগ আগে। ২০০৭ সালে ফাবিয়ো কাপেলোর কোচিংয়ে টানা তিন ম্যাচে গোল করতে পারেনি তারা। য়ুলেন লোপেতেগির কোচিংয়ে সেই আতঙ্ক ফিরল মঙ্গলবার রাতে।
হঠাৎ কী হল রিয়ালের?
লা লিগায় আগের ম্যাচেই রোনাল্ডোকে ফেরানোর দাবি তুলেছিলেন রিয়াল ভক্তেরা। সিএসকেএ-র বিরুদ্ধে হারের পরে একই সুর শোনা গেল গোলরক্ষক কেইলোর নাভাসের গলায়। তিনি বলেছেন, ‘‘একটা আঙুল দিয়ে কখনও সূর্যকে আড়াল করা যায় না। সবাই জানে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নিজেকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। আমাদের বাস্তবটা মেনে নিয়েই এগোতে হবে।’’ নাভাস অবশ্য দাবি করলেন, দ্রুত রিয়াল ছন্দে ফিরবে। বলেছেন, ‘‘আমার সতীর্থেরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিচ্ছে। আশা করছি, গোল-খরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব আমরা।’’
মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ম্যাচের শুরুতেই বিপর্যয় নেমে আসে রিয়াল শিবিরে। ৬৫ সেকেন্ডে গোল করে সিএসকেএ-কে এগিয়ে দেন এভার্টন থেকে লোনে যোগ দেওয়া নিকোলা ব্লাসিচ। ঠিক চার মাস আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে এই মাঠেই স্পেনের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। শেষ ষোলোর ম্যাচে টাইব্রেকারে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হেরে ছিটকে যান আন্দ্রে ইনিয়েস্তারে। মঙ্গলবার রাতে আরও এক বার সেই ছবি দেখল ফুটবল বিশ্ব। অথচ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী আধিপত্য ছিল রিয়ালেরই। ম্যাচে ৭০ শতাংশ বল ছিল টোনি খোসদের দখলে। মোট ৭৩৫টি পাস খেলেছেন তাঁরা। সিএসকেএ-র ফুটবলারদের পাসের সংখ্যা মাত্র ৩১৪টি। বেঞ্জেমারা প্রতিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে মোট ২৬টি শট নিয়েছেন। যদিও তার মধ্যে ১৮টি শটই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পোস্টে লাগে তিনটি শট। ব্লাসিচেরা মাত্র আটটি শট নেন রিয়ালের গোল লক্ষ্য করে।।
প্রশ্ন উঠছে ৬৫ সেকেন্ডে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পরেও কেন ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ রিয়াল? ম্যাচের পরে লোপেতেগির ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা গোল করার প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছিলাম। গোল না হওয়াটা দুর্ভাগ্য। আমার বিশ্বাস, দ্রুত এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠে জয়ের সরণিতে ফিরব। তা ছাড়া সিএসকেএ ঘরের মাঠে খেলার সুবিধেও পেয়েছে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ নিজেদেরই খুঁজতে হবে। তবে এই মুহূর্তে আমি শনিবার লা লিগায় আলাভেসের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়েই ভাবতে চাই।’’
ফিফা ও উয়েফার বিচারে বর্ষসেরা রিয়াল তারকা লুকা মদ্রিচ এই হারকে বড় করে দেখছেন না। তাঁর মতে, ‘‘আমাদের দলে কোনও সঙ্কট নেই। ভাল খেলতে পারিনি বলেই হেরেছি। আমরা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াব।’’ ক্রোয়েশিয়ার জার্সি গায়ে লুঝনিকি স্টেডিয়ামেই বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হেরে মাঠ ছেড়েছিলেন মদ্রিচ। অঘটনের লুঝনিকিতে মঙ্গলবার রাতে হারল রিয়াল। মদ্রিচ বলছেন, ‘‘সংঘবদ্ধ ফুটবল খেলেছে সিএসকেএ। ওরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে, আমরা পারিনি।’’
রিয়াল সমর্থকেরা সব চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ অবশ্য বেঞ্জেমার পারফরম্যান্সে। দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার পুরো ম্যাচে সতীর্থ মার্কো আসেনসিয়োর সঙ্গে মাত্র তিনটি পাস খেলেছেন। লোপেতেগি বলছেন, ‘‘বেঞ্জেমা-সহ সকলের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। মরসুমটা ও দারুণ শুরু করেছিল। এখনও খুব ভাল খেলছে। শুধু গোলটাই করতে পারছে না। এ রকম হতেই পারে। তবে বেঞ্জেমা প্রচুর পরিশ্রম করছে। আশা করছি, দ্রুত ও ছন্দে ফিরবে।’’
রিয়ালের বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ের রাতেও ক্ষোভের আগুন সিএসকেএ শিবিরে। দ্বিতীয়ার্ধে নয় মিনিট সংযুক্ত সময় দেন রোমানিয়ার রেফারি। যা মাঠেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে লাল কার্ড দেখেন সিএসকেএ-র অধিনায়ক আকিনফেফ। ম্যানেজার ভিক্টর গোনচেরিয়ানোক বলেছেন, ‘‘আমাদের দলটা একেবারে নতুন। তা নিয়ে ইউরোপের সেরা দলের বিরুদ্ধে জয়ের অনুভূতিটাই আলাদা।’’