আটলেটিকোকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ রিয়ালের

মিলানকে দুই মাদ্রিদ উপহার দিল ১২০ মিনিট ছাপিয়ে টান টান উত্তেজনার টাইব্রেকার। যখন সান সিরোর ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে শেষ হল ফুটবল ঝড় তখন সবার চোখে জল। দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল টোরেসের। কাঁদছিলেন মার্সেলোও। কিন্তু, দু’জনের চোখের জলের ভাষা ছিল দু’রকম। কেউ মাঠ ছাড়লেন উৎসবের মেজাজে, কারও সামনে আরও এক বছরের অপেক্ষা। কাপ গেল মাদ্রিদেই।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৬ ০৪:০২
Share:

ট্রফিতে চুম্বন পেপের।

রিয়াল মাদ্রিদ: ১ (৫) (র‌্যামোস)

Advertisement

টাইব্রেকার: লুকাস (গোল), মার্সেলো (গোল), বেল (গোল), র‌‌্যামোস (গোল), রোনাল্ডো (গোল)

Advertisement

আটলেটিকো মাদ্রিদ: ১ (৩) (কারাসকো)

টাইব্রেকার: গ্রিজম্যান (গোল), গাবি (গোল), সল (গোল), জুয়ানফ্রান (মিস)

মিলানকে দুই মাদ্রিদ উপহার দিল ১২০ মিনিট ছাপিয়ে টান টান উত্তেজনার টাইব্রেকার। যখন সান সিরোর ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে শেষ হল ফুটবল ঝড় তখন সবার চোখে জল। দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল টোরেসের। কাঁদছিলেন মার্সেলোও। কিন্তু, দু’জনের চোখের জলের ভাষা ছিল দু’রকম। কেউ মাঠ ছাড়লেন উৎসবের মেজাজে, কারও সামনে আরও এক বছরের অপেক্ষা। কাপ গেল মাদ্রিদেই। ইতিহাসকে উস্কে দিয়ে বাজিমাত রিয়াল মাদ্রিদেরই। পুরো ম্যাচে আটকে থাকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর শট গোলে যেতেই শুরু হয়ে গেল রিয়াল উৎসব। তার আগেই পোস্টে লেগে ফিরেছে জুয়ানফ্রানের শট। আটলেটিকোর এই হারে ভিলেন হয়ে গেলেন ফ্রান।

মিলান কার?

প্রশ্নটা বিশ্ব ফুটবলের আকাশে-বাতাসে ঘুরতে শুরু করে দিয়েছিল সে দিনই, যে দিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অল-মাদ্রিদ ফাইনালের ঢাকে কাঠি পড়েছিল। বিখ্যাত সান সিরোর আবহাওয়া গরম হচ্ছিল তখন থেকেই। দুই মাদ্রিদ থেকে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন সমর্থকেরা। আর গত এক সপ্তাহে মিলান বিশ্ব ফুটবলের সেরা ঠিকানার চেহারা নিয়েছিল।

উত্তেজনার পারদ আকাশ ছুঁতে শুরু করেছিল গত কয়েক দিন ধরেই। রাস্তার মোড় থেকে কফি শপ— দুই মাদ্রিদের লড়াই ঘিরে জমে উঠেছিল মিলান। দুই দল পৌঁছতেই শুরু হয়ে গেল ফুটবল উৎসব। তার মধ্যেই অনুশীলনে রোনাল্ডোর চোটে রিয়াল শিবিরের কপালে চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দুই মাদ্রিদের সঙ্গে তার আগেই ভাগ হয়ে গিয়েছে গোটা মিলান। ৮০ হাজারের স্টেডিয়াম তত ক্ষণে প্রস্তুত রিয়াল আটলেটিকোর লড়াইয়ের জন্য। ১৯৩৪ ও ১৯৯০-এর বিশ্বকাপ, ১৯৮০-র ইউরোর মতো বড় ইভেন্টের ম্যাচ দেখেছিল তৎকালীন সান সিরো। বহু দিন পর আবার বিশ্ব ফুটবলের বড় লড়াইয়ে মাতল এই সান সিরো।

শনিবার রাতের শুরুটা করে দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদই। যখন ১৫ মিনিটের মধ্যে ক্রসের ফ্রি-কিক থেকে বেলের ব্যাক হেড গোলকিপারের সামনেই ছ’গজ বক্সের মধ্যে পেয়ে গিয়েছিলেন র‌্যামোস। চলতি বলেই তাঁর পায়ের হাল্কা টোকা চলে গেল আটলেটিকো গোলে। প্রথমার্ধে এ ছাড়া, কারভাজালের নিশ্চিত গোলমুখি শট নাভাসের চেটোর আঘাতে বাইরে যাওয়া আর রিয়ালের নিশ্চিত গোলের সুযোগ দুরন্ত দক্ষতার সঙ্গে ওবলাকের বাঁচিয়ে দেওয়া ছাড়া কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও পুরো ম্যাচে খুঁজে পাওয়া যায়নি বিশ্ববিখ্যাত বিবিসি-কে। আটকে থাকলেন ক্রিশ্চিয়ানো। আটকে গেলেন বেল-বেঞ্জিমাও।

শুরুতেই হলুদ কার্ড দেখে ফেলা রিয়াল রাইটব্যাক কারভাজাল চোট পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়লেন, দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই। এ রকম লড়াইয়ে মাঠ ছাড়তে কে-ই বা চায়! তাই হয়তো বল লেগে মাথার আঘাতকে ছাপিয়ে গিয়েছিল মনের যন্ত্রণাটাই। বাধ মানেনি চোখের জল। কারভাজালের না থাকাটা রিয়াল রক্ষণের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারত। বরং ম্যাচ নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করলেন গ্রিজম্যান।

৪৭ মিনিটে বক্সের মধ্যে টোরেসকে ফাউল করে আটলেটিকো মাদ্রিদকে পেনাল্টি পাইয়ে দিয়েছিলেন পেপে। কিন্তু, বিধি বাম। গ্রিজম্যানের পেনাল্টি শট ক্রসবারে লেগে ফেরে। সমতায় ফিরতে আটলেটিকো মাদ্রিদের লেগে গেল ৭৯ মিনিট। যখন জুয়ানফ্রানের মাপা ক্রস ছ’গজ বক্সের মধ্যে পেয়ে গেছিলেন কারাসকো। রিয়াল রক্ষণকে পরাস্ত করে তত ক্ষণে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছেন এই মিডিও। নির্ধারিত সময়ের ম্যাচ ১-১ গোলে শেষ হতেই রেফারি ঘড়িতে নতুন করে দম দিলেন। আরও ৩০ মিনিট। ওই ৩০ মিনিট চাপ বাড়াল আটলেটিকো। ম্যাচ শেষ পর্যন্ত গড়াল টাইব্রেকারে। যেখানে বাজিমাত রিয়াল মাদ্রিদেরই।

রিয়াল মাদ্রিদ: নাভাস, কারভাজাল (ডানিলো), পেপে, র‌্যামোস, মার্সেলো, কাসেমিরো, ক্রুস, মডরিচ, বেল, রোনাল্ডো, বেঞ্জিমা।

আটলেটিকো মাদ্রিদ: ওবলাক, জুয়ানফ্রান, সাভিচ, গোডিন, লুইস (হার্নান্ডেজ), সল, গাবি, অগাস্টো (কারাসকো), কোকে (পার্তি), গ্রিজম্যান, টোরেস।

ছবি: এএফপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন