Sushant Singh Rajput

দিনে ১০০ শট খেলে হেলিকপ্টার রপ্ত করেন পর্দার মাহি

প্রত্যেক দিন তিন ঘণ্টা অনুশীলন করে পর্দায় ধোনির চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০৩:১৫
Share:

মর্মান্তিক: ধোনির চরিত্রে অভিনয় আরও জনপ্রিয়তা দিয়েছিল সুশান্তকে।

কে ভুলতে পারবে সেই ছবি— ‘এম এস ধোনি, দ্য আনটোল্ড স্টোরি’! যার মূল চরিত্রে অভিনয় করে মন জয় করে নিয়েছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। তাঁকে ‘রুপোলি পর্দার ধোনি’ বলেও ডাকতেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ধোনির বিখ্যাত হেলিকপ্টার শট থেকে উইকেটকিপিংয়ের ভঙ্গি, সব কিছুই যিনি শিখেছিলেন ছাত্রের মতো অধ্যবসায় নিয়ে। ধোনির চরিত্র ফুটিয়ে তুলবেন বলে প্রাক্তন উইকেটকিপার কিরণ মোরের কাছে টানা ন’মাস প্রস্তুতি নেন রবিবার আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া সুশান্ত।

Advertisement

প্রত্যেক দিন তিন ঘণ্টা অনুশীলন করে পর্দায় ধোনির চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। রাঁচীতে ধোনির ছোটবেলার কোচ কেশব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দিন দশেক ছিলেন সুশান্ত। রবিবার তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত বলিউড থেকে ক্রিকেটমহল। শোকস্তব্ধ ধোনি বায়োপিকের অন্য চরিত্ররাও। যাঁরা জড়িয়ে রয়েছেন ধোনির জীবনের সঙ্গেও।

সুশান্তের মৃত্যুর খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ও নির্বাচক কিরণ মোরে। তাঁর কাছেই মুম্বইয়ের আন্ধেরি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে প্রত্যেক দিন তালিম নিতেন সুশান্ত। যাঁরা মনে করেন স্টান্টম্যানের সাহায্যে ধোনির শট নেওয়া হয়েছে ছবিতে, তাঁদের ধারণা ভুল ঘোষণা করে আনন্দবাজারকে মোরে রবিবার বললেন, ‘‘ছবিতে যে ক’বার ওকে ব্যাটিং অথবা কিপিং করতে দেখা গিয়েছে, প্রত্যেকটি শটই ওর নিজের। সুশান্ত আগে ক্রিকেট খেলত। ফিল্মের জন্য আমার সঙ্গে টানা ন’মাস অনুশীলন করার পরে ওর দক্ষতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। ধোনির চালচলন, ব্যাটিংয়ের ভঙ্গি থেকে কিপিং, সমস্ত কিছুই রপ্ত করেছিল এক বছর ধরে।’’

Advertisement

বায়োপিকে সুশান্তকে বেশ কয়েক বার ধোনির বিখ্যাত হেলিকপ্টার শট মারতে দেখা গিয়েছে। এই বিশেষ কৌশল কী করে রপ্ত করলেন সুশান্ত? মোরের জবাব, ‘‘অনুশীলন শেষ হওয়ার পরে ও নিজেই বোলিং মেশিনের সাহায্যে একশোটি করে হেলিকপ্টার শট মারত। প্রথম তিন মাস এক বারও ঠিক মতো ব্যাটে, বলে লাগাতে পারেনি। যে দিন প্রথম বার হেলিকপ্টার শট মেরে বল মাঠের বাইরে পাঠালো, সে দিন একেবারে শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত হতে দেখেছিলাম ওকে।’’ যোগ করলেন, ‘‘এ ভাবেই হেলিকপ্টার শট রপ্ত করতে থাকল। এর পরে বোলিং মেশিনের পরিবর্তে নেট বোলারের সামনে ব্যাটিং করতে দেওয়া হল। শুরুতে ভয় করত, ও যেন চোট না পায়। কয়েক বার চোট পেয়েওছিল। কিপিং করতে গিয়ে আঙুলে আঘাত পেয়েছে। একবার মুখেও বল লাগল। কিন্তু তার পরেও কখনও পিছু হটেনি।’’

প্রাক্তন ভারতীয় উইকেটকিপার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন। ‘‘মুম্বইয়ের বান্দ্রা-কুর্লা কমপ্লেক্সে সুশান্তের প্র্যাক্টিস চলছে। এমন সময় সচিন তেন্ডুলকর এসে গ্যালারিতে বসেছিল। বেশ কিছুক্ষণ সুশান্তের ব্যাটিং দেখার পরে সচিন আমাকে জিজ্ঞাসা করে, কে এই ব্যাটসম্যান? আমার উত্তর শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল সচিন। এর পরে নিজেই মাঠে নেমে সুশান্তের সঙ্গে আলাপ করেছিল সচিন।’’

২০১৬-র ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ধোনির বায়োপিক। বেশির ভাগ শুটিং হয় জামশেদপুর, রাঁচী, খড়গপুরে। টানা দশ দিন কোচ কেশব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেন সুশান্ত। ধোনির শুরুর দিকের চেহারা ফুটিয়ে তোলার জন্য ওজন কমাতে হয়েছিল সুশান্তকে। আবার ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ধোনিকে তুলে ধরার জন্য ওজন বাড়াতেও হয়েছিল তাঁকে। কোচ কেশবের কাছ থেকে আসল ধোনির চালচলন সম্পর্কে জেনেছিলেন পর্দার ধোনি। বিষণ্ণ গলায় কেশব এ দিন বলছিলেন, ‘‘কী ভাবে ধোনি কথা বলত, কী ভাবে হাঁটত, সব আমাকে অভিনয় করে দেখাত। বিশ্বাস হচ্ছে না, ছেলেটা আর নেই!’’

আরও পড়ুন: ‘নির্বাসিত হওয়ার পর স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন