উদ্বোধনী ম্যাচ বাতিল করে বিতর্কে রেফারি

আপনার কি মনে হচ্ছে ম্যাচটা ইস্টবেঙ্গলের চাপেই বন্ধ হয়ে গেল? মনে হচ্ছে, আপনার টিম ১-১ করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছিল সুভাষ ভৌমিকের দল? ‘‘কার চাপে কী জন্য বন্ধ জানি না। রেফারি বন্ধ করেছেন।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫২
Share:

লড়াই: প্রবল বৃষ্টি। টালিগঞ্জের রক্ষণ ভাঙছেন লাল-হলুদ জার্সিতে প্রথম খেলতে নামা কাশিম। শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। চোখে মুখে বিরক্তি। স্বগোতোক্তির মতোই তাঁর মুখ থেকে বেরলো, ‘‘পনেরো মিনিট আগে যখন মাঠে বল গড়াচ্ছিল না তখন রেফারি খেলা চালিয়ে গেলেন। আর বিরতির পর মাঠ যখন খেলার অবস্থায়, তখন বন্ধ করে দিলেন।’’

Advertisement

আপনার কি মনে হচ্ছে ম্যাচটা ইস্টবেঙ্গলের চাপেই বন্ধ হয়ে গেল? মনে হচ্ছে, আপনার টিম ১-১ করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছিল সুভাষ ভৌমিকের দল? ‘‘কার চাপে কী জন্য বন্ধ জানি না। রেফারি বন্ধ করেছেন। তবে এটা বলছি, আমরা খেলতে চেয়েছিলাম। এর চেয়ে অনেক খারাপ মাঠে আগে খেলেছি।’’ বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার পর টালিগঞ্জ অগ্রগামীর কোচ মনোরঞ্জন বিতর্ক উস্কে দেন এ ভাবেই।

আকাশ ভরা কালো মেঘ। ইস্টবেঙ্গলের মাঠ থেকে শহরের সব চেয়ে উঁচু বাড়ি ‘দ্য ফরটি টু’ কেও ঝাপসা দেখাচ্ছিল শুক্রবার বিকেলে। শহীদ মিনারও চলে গিয়েছিল অন্ধকারে। তা সত্ত্বেও বেলুন উড়িয়ে, ব্যান্ড বাজিয়ে ‘ঐতিহাসিক ম্যাচ’ শুরু হল প্রবল বৃষ্টিতেই। শতবর্ষ ছুঁতে চাওয়া লাল-হলুদের মাঠে আলো লাগানোর পর প্রথম খেলা। তার উপর সেটা লিগের উদ্বোধনী। নতুন ইতিহাস তো বটেই। ৪১ বছর আগে তিন প্রধানের মধ্যে প্রথম আলো জ্বেলে খেলা হয়েছিল মোহনবাগানে। পড়শিদের এতদিনের গৌরবকে তাঁদের ক্লাব ছুঁয়েছে, সেই আনন্দে উপচে পড়েছিল গ্যালারি। টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় মাঠের পাশে র‌্যাম্পার্টেও হাজার খানেক দর্শক। এ রকম এক আবহে ইস্টবেঙ্গলের দুই ঘরের ছেলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বনাম সুভাষ ভৌমিকের দলের দ্বৈরথ! এর চেয়ে ভাল আর কী রোশনাই চাই লিগ শুরুর দিন। খেলা যত গড়াল, উত্তেজনা বাড়ল। বৃষ্টির মধ্যেই শুরুর মিনিটেই গোল পেল ইস্টবেঙ্গল। লালরিন্দিকা রালতের ফ্রি-কিক টালিগঞ্জের রিচার্ড আগুইয়ের পায়ে লেগে ঢুকছিল। তাতে শেষ মুহুর্তে পা লাগান ইস্টবেঙ্গলের নতুন বিদেশি কাশিম আইদারা। কিন্তু গ্যালারির গান থামিয়ে দিলেন টালিগঞ্জের এক বিদেশি— লোগো ডোগবো বেই। প্রায় পঁচিশ গজ দৌড়ে তাঁর শট জালে জড়াতেই লাফিয়ে উঠলেন মনোরঞ্জন। ম্যাচের বয়স তখন তিরিশ মিনিট। বৃষ্টির তোড়ে মাঠের অনেক জায়গায় বল গড়াচ্ছে না। রেফারি উত্তম সরকার অবশ্য খেলা চালিয়ে গেলেন।

Advertisement

বিরতির পরই ছবি বদলাল। হঠাৎ দেখা গেল ইস্টবেঙ্গলের এ দিনের অধিনায়ক লালরাম চুলোভা রেফারির কাছে খেলা বন্ধের আবেদন জানাচ্ছেন। ইস্টবেঙ্গলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুভাষ ভৌমিককেও কথা বলতে দেখা গেল। এর পরই নাটক। যা বড় দলের ম্যাচে বহু বার দেখেছে ময়দান। রেফারি তাঁর দুই সহকারীকে নিয়ে মাঠে ঘোরাঘুরি করলেন। মিনিট পাঁচেক কথা বললেন, দু’দলের ফুটবলারের সঙ্গে। তারপরই ম্যাচ কমিশনার বিকাশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে খেলা বন্ধ করে চলে গেলেন পুলিশের ঘেরাটোপে।

কেন বন্ধ করলেন? আরও কিছুক্ষণ তো অপেক্ষা করতে পারতেন? ম্যাচ কমিশনার বিকাশ বললেন, ‘‘মাঠে বল গড়াচ্ছিল না। দু’দলই খেলতে চাইছিল না।’’ কিন্তু টালিগঞ্জ তো খেলতে চেয়েছিল! মাঠেও তো পজিশন নিয়ে ফেলেন অসীম বিশ্বাসরা! বিকাশ নিরুত্তর।

কিন্তু বিরতির অনেক আগেই তো খেলা বন্ধ করা উচিত ছিল? তখনও তো বল গড়াচ্ছিল না? বিকাশবাবু দেখালেন রেফারিকে। ‘‘কেন বন্ধ করেনি, সেটা রেফারি বলতে পারবেন।’’ রেফারি উত্তম তখন রীতিমতো অস্বস্তিতে। তাড়াতাড়ি পুলিশের গাড়ির দিকে সদলবলে পা বাড়ালেন। যে অবস্থায় রেফারি ম্যাচ বন্ধ করেছেন তাতে বিরক্ত আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যয়ও। বলে দিলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। পরের প্রকাশিত সূচিতে প্রথমেই এই ম্যাচের রিপ্লে দেওয়া হবে।’’

ইস্টবেঙ্গল অবশ্য দায়িত্ব নিতে নারাজ। মনোরঞ্জনের মতোই তাদের তিরও রেফারির দিকে। ‘‘সমস্যা হলে আমরা তো অবেদন করতেই পারি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেফারি। কিন্তু এটা বলছি যে ভাবে জল জমেছিল তাতে খেলা হলে ফুটবলারদের গোড়ালি ঘুরে যেতেই পারত,’’ বলে দিলেন সুভাষ। কিন্তু এই বৃষ্টিতেই ময়দানের সেরা পরিকাঠামো যে ক্লাবের, তাদের মাঠে কেন জল জমল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ক্লাবের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘আমাদের মাঠ ময়দানের সেরা। কিন্তু কেন মাঠের পাশে জল জমল তা দেখতে হবে। রেফারি আরও একটু অপেক্ষা করতেই পারতেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন