ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সেঞ্চুরি পেলেও ঋষভ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে খুব বেশি সাফল্য এখন পাননি।
ইডেনে দীনেশ কার্তিকের কলকাতা নাইট রাইডার্স অনুশীলনে নামল বিকেলে। আর তার অনেক আগে দিল্লিতে বসে তিনি। কলকাতার প্রিয় ‘ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি’। এ বারের আইপিএলে যিনি শাহরুখ খানের কলকাতার নয়, দিল্লির জার্সিতে ফিরছেন। তাঁকে বসে থাকতে দেখা যাবে ঋষভ পন্থদের ডাগআউটে, কার্তিকদের সঙ্গে নয়।
দিল্লি ক্যাপিটালসে যোগ দেওয়ার পরে মঙ্গলবার প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন সৌরভ। সঙ্গে অতীতের প্রতিপক্ষ এবং এ বার দিল্লির দলের সতীর্থ, হেড কোচ রিকি পন্টিং। কে বলবে অস্ট্রেলীয় কোচ মানেই তাঁর সঙ্গে বিতর্কের আবহ! গুরু গ্রেগের দেশ থেকে আসা হেড কোচ পন্টিংয়ের সঙ্গে বেশ প্রাণখোলা অবস্থাতেই পাওয়া গেল সৌরভকে। বিশ্বকাপে কে হতে পারেন ভারতের চার নম্বর ব্যাটসম্যান? এই নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। সৌরভ ও পন্টিংয়ের ভোট ঋষভ পন্থের দিকে। পন্টিং বললেন, ‘‘আমি আগেই ঋষভকে ভারতের বিশ্বকাপ দলের চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে নিয়ে নিতাম। ওর সেই প্রতিভা আছে। ওর মধ্যে চমক দেওয়ার ক্ষমতা আছে। ভারতকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারে ঋষভ।’’
পন্টিংয়ের সঙ্গে সুর মিলিয়ে দিল্লি ক্যাপিটালসের উপদেষ্টা সৌরভ বলেন, ‘‘সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যানকে সাফল্য পেতে হলে তাকে উপরের দিকে নামতেই হবে। ঋষভকে চার নম্বরে পাঠানো হলে ও দলকে অনেক রান উপহার দেবে। ও প্রতিভাবান। নিয়মিত ভাবে সুযোগ দিলেই সফল হবে ঋষভ।’’
ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সেঞ্চুরি পেলেও ঋষভ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে খুব বেশি সাফল্য এখন পাননি। ভারতের হয়ে পাঁচটি ওয়ান ডে-তে এখনও পর্যন্ত তিনি ২৩.২৫-এর গড়ে ৯৩ রান করেছেন ও ১৫টি টি-টোয়েন্টিতে ১৯.৪১-এর গড়ে ২৩৩ রান করেছেন। তবে আইপিএলে ৩৮ ম্যাচে ১২৪৮ রান তাঁর। ৩৫.৬৫-এর ব্যাটিং গড় ও ১৬২.৭১-এর স্ট্রাইক রেটে এই রান করেছেন তিনি।
জুটি: এক সময় ছিলেন প্রতিপক্ষ। এ বার দিল্লি ক্যাপিটালসে হেড কোচ ও উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে পন্টিং ও সৌরভ। নয়াদিল্লিতে। ছবি: এএফপি
ঋষভ সম্পর্কে কোনও রকম নেতিবাচক ধারণাকে আমলই দিচ্ছেন না সৌরভ। তিনি বলছেন, ‘‘গত বার আইপিএলে ও সব ক’টা ম্যাচ (১৪) খেলার সুযোগ পেয়েছিল ও সম্ভবত সব চেয়ে বেশি রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দু’নম্বরে ছিল (৬৮৪ রান করেছিলেন ঋষভ)। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ও ভারতের হয়ে নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না। কারণ, এমএস ধোনির মতো চ্যাম্পিয়নই বেশির ভাগ ম্যাচে সুযোগ পায়। নিয়মিত সুযোগ না পাওয়া কারও পক্ষেই ভাল নয়। সে যত বড় ক্রিকেটারই হোক। মনে রাখা দরকার যে, ঋষভই আমাদের ভবিষ্যৎ। আগামী দশ বছরে এই ছেলেটাকে সব ধরনের ক্রিকেটে অনেক দুর্দান্ত মুহূর্ত উপহার দিতে দেখা যাবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভারতীয় দল চায়, আইপিএলে বিশ্বকাপগামী দলের ক্রিকেটাররা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ও বিশ্রাম নিয়ে খেলুন, যাতে তাঁদের বাড়তি পরিশ্রম না হয় এবং বিশ্বকাপে তরতাজা অবস্থায় মাঠে নামতে পারেন। তবে কোহালি বলেছেন, কে কতটা ধকল নিতে পারবেন তা ব্যক্তি অনুযায়ী পরিবর্তনশীল। এই মতে সায় দিয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর। বিশ্রাম দেওয়ার দাবিতে অবশ্য সায় নেই সৌরভের। তিনি বলছেন, ‘‘প্রচুর ক্রিকেট খেলতে হয় ঠিকই। তবে কোনও ক্রিকেটারেরই মনে ক্লান্তি নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত নয়। কত জনের ভাগ্যে ১৫-১৬ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ জোটে? খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তরতাজা থাকার উপায় নিজেকেই খুঁজে বার করতে হবে। না খেলাটা কোনও সমাধান নয়।’’ যোগ করেন, ‘‘আমাদের প্রজন্মের ক্রিকেটারদেরও প্রচুর ক্রিকেট খেলতে হয়েছে। তখন আইপিএল ছিল না ঠিকই। কিন্তু প্রায় একই পরিমাণে ক্রিকেট খেলতে হত আমাদের। মনে রাখা উচিত, খেলোয়াড়দের জন্য সময়টা খুবই সীমিত। খেলা থেমে গেলে এই জীবনটা কিন্তু আর আসবে না।’’ চোট-আঘাতের প্রশ্ন নিয়ে সৌরভ বলেন, ‘‘এই স্তরের ক্রিকেটে চোট-আঘাত হয়েই থাকে। তা ছাড়া দেশের হয়ে মাঠে নেমেও যে কেউ চোট পাবে না, এমন নিশ্চয়তাও তো নেই। তাই এখানে কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আমি বিশ্বাস করি ক্রিকেটারদের কখনও বলা উচিত নয়, ম্যাচ খেলব না। সুযোগ পেলে খেলাই উচিত।’’
এ বারের দিল্লি দল নিয়ে আশাবাদী প্রধান কোচ রিকি পন্টিংও। তিনি বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমাদের হাতে অনেক রকম বিকল্প রয়েছে। ভাল ভারসাম্য রয়েছে দলে। দারুণ সব ভারতীয় ব্যাটসম্যান রয়েছে। ভাল অলরাউন্ডার পেয়েছি। আমাদের স্পিন বিভাগে বৈচিত্র রয়েছে। পেস আক্রমও দারুণ।’’ যোগ করেন, ‘‘নিলামে নতুন করে দলকে ঢেলে সাজিয়েছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য এখন আইপিএল জেতা।’’