বীরুর বীরত্ব মনে করাচ্ছেন ঋষভেরা

দ্বিতীয় দিনে প্রথমে পৃথ্বী এবং পরে ঋষভ পন্থের ব্যাট ক্যারিবিয়ান বোলিং শাসন করল। এই দুই তরুণ ক্রিকেটারের ভয়ডরহীন ব্যাটিং ভারতীয় ক্রিকেটে একেবারে তাজা হাওয়ার মতো।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫৮
Share:

দুরন্ত: ক্যারিবিয়ান বোলিং শাসন ঋষভের। —ছবি এএফপি

যাঁরা টিকিট কিনে টেস্ট ক্রিকেট দেখতে মাঠে আসেন, শনিবার তাঁদের টাকাটা উশুল হয়ে যাবে দুটো শট দেখে। প্রথমটা শ্যানন গ্যাব্রিয়লকে মারা। অফস্টাম্পের সামান্য বাইরে থেকে বলটা উঠছিল। আঙুলের ওপর ভর দিয়ে, শরীরের ওজন ব্যাকফুটে নিয়ে গিয়ে, ব্যাটের মুখ একেবারে সোজা রেখে পয়েন্টের পাশ দিয়ে চার। দ্বিতীয় শটটা জেসন হোল্ডারকে। ওই সময় শরীরের ওজন চলে আসে সামনের পায়ে। কব্জির মোচ়ড়ে মিডউইকেট দিয়ে বল পৌঁছে যায় বাউন্ডারিতে। দু’টো ক্ষেত্রেই একই ব্যাটসম্যান। নাম? ভারতের নতুন প্রতিভা— পৃথ্বী শ।

Advertisement

দ্বিতীয় দিনে প্রথমে পৃথ্বী এবং পরে ঋষভ পন্থের ব্যাট ক্যারিবিয়ান বোলিং শাসন করল। এই দুই তরুণ ক্রিকেটারের ভয়ডরহীন ব্যাটিং ভারতীয় ক্রিকেটে একেবারে তাজা হাওয়ার মতো। দু’জনের স্বাভাবিক স্ট্রোক প্লে, আগ্রাসী মেজাজ, দ্রুত রান তোলার মানসিকতা— সব কিছুই ভারতীয় দল পরিচালন সমিতির সামনে অনেকগুলো রাস্তা খুলে দিচ্ছে। শনিবার পৃথ্বী ৭০ রান করলেন ৫৩ বলে, স্ট্রাইক রেট ১৩২.০৭। সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে চলা ঋষভ অপরাজিত ১২০ বলে ৮৫ রান করে। স্ট্রাইক রেট ৭০.৮৩। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস ৩১১ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ভারত আপাতত চার উইকেটে ৩০৮। দলের স্ট্রাইক রেট প্রায় চার। যা টেস্ট ক্রিকেটে রীতিমতো ভাল বলেই গণ্য হবে।

এ রকম ঝোড়ো ইনিংসের দু’টো সুবিধে। এক, বিপক্ষের ওপর চাপটা বাড়িয়ে দেয়। দুই, বোলারদের হাতে অনেক বেশি সময় থাকে বিপক্ষকে আউট করার। বীরেন্দ্র সহবাগ যখন খেলতেন, তখন ঠিক এই ভাবেই দ্রুত রান উঠত ভারতের। এবং বোলারদের হাতে সময় থাকত বিপক্ষকে দু’বার আউট করার। বীরু জমানার সেই বীরত্ব যেন আবার ফিরে আসছে। তারুণ্যের এই ব্যাটিং ভারতীয় দলের সামনে জয়ের রাস্তা একটু বেশি চওড়া করে দিচ্ছে। কেউ এ রকম ব্যাটিং করলে তাঁর সঙ্গী ব্যাটসম্যানের ওপরও চাপ কমে যায়। যেমন, ঋষভ যখন ব্যাট করছিলেন, তখন অজিঙ্ক রাহানে অনেকটা সময় পেয়েছেন উইকেটে জমে যাওয়ার।

Advertisement

দুরন্ত: জীবনের সেরা বোলিং করেন উমেশ। এএফপি, এপি

পৃথ্বী এবং ঋষভ— দু’জনেই সহজাত স্ট্রোক প্লেয়ার। ঋষভ হয়তো পাওয়ার হিটিংয়ের ব্যাপারে একটু এগিয়ে থাকবেন। মানে বল লিফট করে গ্যালারিতে ফেলার ব্যাপারে। এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান যে ভাবে খেলছেন, তাতে বলা যেতেই পারে, আগামী বছর বিশ্বকাপে ওঁর জায়গাটা পাকা। এর ওপর যদি কিপিংয়ে কিছুটা উন্নতি ঘটাতে পারেন, তা হলে টেস্টেও কিন্তু নিয়মিত জায়গা করে নিতে পারবেন। ঋষভ থাকা মানে ভারতীয় দল পাঁচ জন প্রথম সারির বোলার নিয়ে খেলতে পারছে। সঙ্গে থাকছে ছ’জন ব্যাটসম্যান। এতে স্বাভাবিক ভাবেই দলের ভারসাম্য অনেক ভাল হয়ে যাচ্ছে। পৃথ্বী এবং ঋষভের ব্যাটিং দর্শকদের কাছে যথেষ্ট বিনোদনেরও। এই যেমন বিরাট কোহালি এ দিন ৪৫ রানে ফিরে গেলেও দর্শকরা দুই তরুণের ব্যাটিংয়ে যথেষ্ট আনন্দই পেয়েছেন।

আরও এক জনের কথা বলতেই হবে। উমেশ যাদব। বেশ কিছু দিন দলের বাইরে ছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, ফিটনেস এবং বোলিং কন্ডিশনের দিক দিয়ে খুব ভাল জায়গায় আছেন। আগের দিন তিন উইকেট নেওয়ার পরেও ‘এস জি’ বল নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন উমেশ। ক্রিকেট এমনই এক মহান অনিশ্চয়তার খেলা, সেই এস জি বলে বল করেই ৮৮ রানে ছ’ উইকেট তুলে নিলেন এই পেসার। টেস্টে জীবনের সেরা বোলিং। এমনকি সকালে রস্টন চেজকে যে বলে বোল্ড করলেন, সেটা দারুণ রিভার্স সুইং করল।

দেখা যাচ্ছে, বিতর্কিত সেই এস জি বলটাই উমেশের মুকুটে একটা নতুন পালক পরিয়ে দিয়ে গেল!!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন