উৎসব: টিম হোটেলে জন্মদিনের কেক কাটছেন রবিন। নিজস্ব চিত্র
অবশেষে স্বস্তি। লাল-হলুদ শিবিরে। কটকে।
ফেডারেশন কাপে ইস্টবেঙ্গলের দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের সন্ধ্যাতেই বৃষ্টি নামল দাবদাহে পুড়তে থাকা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মভূমিতে।
প্রথম ম্যাচে চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ড্র করে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যাওয়ার আতঙ্ক গ্রাস করেছিল ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের। জন্মদিনে চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে খেতাব জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে তুললেন রবিন সিংহ।
ইস্টবেঙ্গলের হয়ে রবিনের প্রথম ফেডারেশন কাপ জয় কটকের এই বারবাটি স্টেডিয়ামেই। বছর সাতেক আগে। তখন কোচ ছিলেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে রবিন সদ্য যোগ দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলে। তারকার ভিড়ে প্রথম দলে জায়গা পাকা হয়নি তাঁর। সাত বছর পরেও ফেডারেশন কাপে লাল-হলুদের অভিযান শুরু করার ম্যাচে রবিনকে বসে থাকতে হয়েছিল রিজার্ভ বেঞ্চে! ইস্টবেঙ্গল টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা রেখেছিলেন উইলিস প্লাজা এবং ওয়েডসন আনসেলমে-র উপর। হাইতি স্ট্রাইকার গোল করলেও চূড়ান্ত ব্যর্থ প্লাজা।
আরও পড়ুন: দিদি আপকা রেকর্ড হুয়া, বলল সতীর্থ
চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে এ দিন রবিন ছিলেন শুরু থেকেই। ওয়েডসন ও প্লাজা-র সঙ্গে জুটি বেঁধে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছেন তিনি। তবে প্রথম গোল করেন বিরতির ঠিক আগে। দ্বিতীয় গোল রবিন করলেন ৭৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে।
ছ’টা ম্যাচ খেলা হয়ে যাওয়ার পরেও ফেডারেশন কাপ নিয়ে কটকে কোনও উন্মাদনা নেই। বারবাটি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসেছিলেন কলকাতা থেকে আসা কয়েক জন লাল-হলুদ সমর্থক। গোল করেই সে দিকে দৌড়লেন রবিন। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সেই ভক্তরাই জন্মদিনের কেক উপহার দিলেন জয়ের নায়ককে। রবিন অবশ্য বলে দিলেন, ‘‘জন্মদিনের উপহার হিসেবে ফেডারেশন কাপ-ই আমার চাই। তবে বিশেষ দিনে গোল করতে পেরে দারুণ লাগছে। কিন্তু উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। টুর্নামেন্ট এখনও শেষ হয়নি।’’
রবিনের সতীর্থরা তা শুনবেন কেন? টিম হোটেল ফেরার পরেই রবিনকে দিয়ে জোর করে কেক কাটালেন তাঁরা। লাল-হলুদ স্ট্রাইকারের নায়ক হয়ে ওঠার ম্যাচে ছন্দ ফিরল ইস্টবেঙ্গলের খেলাতেও।
চার্চিলের বিরুদ্ধে মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। রক্ষণের ভুলেই গোল খেতে হয়েছিল। এ দিন স্ট্র্যাটেজিতে সামান্য পরিবর্তন করতেই বদলে গেল ছবিটা। দুর্দান্ত খেললেন মেহতাব হোসেন ও রওলিন বর্জেস। আর নিখিল পূজারির বদলে ডান দিকের উইংয়ে ছিলেন ওয়েডসন। বাঁ দিকে বিকাশ জাইরু। দুই উইঙ্গার ডানা মেলতেই জয়ের স্বপ্ন শেষ চেন্নাইয়ের। বেঁচে উঠল ইস্টবেঙ্গলের খেতাব জয়ের আশা।
চার্চিলের বিরুদ্ধে আইজল এফসি-র জয়ও অবশ্য স্বস্তি ফিরিয়েছে লাল-হলুদ শিবিরে। কারণ, ‘এ’ গ্রুপে এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে দু’ম্যাচে ছ’পয়েন্ট নিয়ে আই লিগ চ্যাম্পিয়নরা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে সেমিফাইনালে। ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট এখন দু’ম্যাচে চার। বৃহস্পতিবার আইজলের বিরুদ্ধে ড্র করলেই শেষ চারে পৌঁছে যাবেন ওয়েডসন-রাও।
দুরন্ত প্রত্যাবর্তন। চার্চিলের হার। লাল-হলুদের সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী তা সত্ত্বেও স্বস্তিতে নেই! এ দিন ফের হলুদ কার্ড দেখেছেন মেহতাব ও গুরবিন্দর সিংহ। ফলে আইজলের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁরা নেই। হতাশ রঞ্জন বললেন, ‘‘মেহতাব ও গুরবিন্দরের না থাকাটা অবশ্যই বড় ধাক্কা। কিন্তু কিছু করার নেই। যারা আছে তাদের নিয়েই জয়ের জন্য ঝাঁপাতে হবে।’’ ম্যাচে আবার রিচার্ডের সঙ্গে সংঘর্ষে বুকেনিয়ার ডান চোখের উপরে কেটে গিয়েছিল। শেষ তিন-চার মিনিট তাঁকে ব্যান্ডেজ নিয়ে খেলতে হয়।
আইজলের বিরুদ্ধে ড্র করলেই তো সেমিফাইনালে পৌঁছে যাবে ইস্টবেঙ্গল। তা হলে কীসের এত উদ্বেগ? রঞ্জন বললেন, ‘‘ড্রয়ের লক্ষ্য নিয়ে নামলেই হোঁচট খেতে হবে। আমরা এখন জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই চাই না।’’
‘মিউজিক থেরাপি’-তে শুধু ফুটবলাররা নন, ইস্টবেঙ্গল অন্দরমহলের গুমোট ভাবটাও উধাও!
ইস্টবেঙ্গল: শুভাশিস রায়চৌধুরী, রাহুল ভেকে, গুরবিন্দর সিংহ, ইভান বুকেনিয়া, নারায়ণ দাস, ওয়েডসন আনসেলমে (মহম্মদ রফিক), মেহতাব হোসেন, রওলিন বর্জেস (কেভিন লোবো), বিকাশ জাইরু, রবিন সিংহ (লালরিনডিকা) ও উইলিস প্লাজা।