রটারডামে জিনিয়াসের রাত

এর পরে আর লেভার নয়, ফেডেরারই সর্বকালের সেরা

এত দিন গোটা টেনিস দুনিয়া সমীহ সহকারে আলোচনা করত, তেত্রিশ বছর বয়সে আন্দ্রে আগাসির ফের এক নম্বর হওয়ার ঘটনা নিয়ে। কিন্তু রজার ফেডেরার শুক্রবার রাতে আগাসির সেই কৃতিত্ব পিছনে ঠেলে দিয়ে নিজেই নতুন রেকর্ড করে বসল!

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৫
Share:

কিংবদন্তি: বয়স্কতম খেলোয়াড় হিসেবে এক নম্বর হলেন ফেডেরার। ছবি: রয়টার্স।

ফের এক নম্বরে রজার ফেডেরার। তাও আবার ছত্রিশ বছর বয়সে! শনিবার সকালে খবরটা শোনার পরে নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম!

Advertisement

এত দিন গোটা টেনিস দুনিয়া সমীহ সহকারে আলোচনা করত, তেত্রিশ বছর বয়সে আন্দ্রে আগাসির ফের এক নম্বর হওয়ার ঘটনা নিয়ে। কিন্তু রজার ফেডেরার শুক্রবার রাতে আগাসির সেই কৃতিত্ব পিছনে ঠেলে দিয়ে নিজেই নতুন রেকর্ড করে বসল!

শুধু আমি নই। গোটা বিশ্বই অবাক রটারডাম ওপেনে সেমিফাইনালে যাওয়ার পথে ছত্রিশ বছরের ফেডেরারের ফের এক নম্বর হওয়া নিয়ে। এই কলাম লেখার সময়েও ব্যাপারটা আমার কাছে রূপকথার মতো লাগছে। ভাবছি, কোন স্তরের আত্মবিশ্বাস, মনোনিবেশ, নিষ্ঠা থাকলে ৩৬ বয়সে এসে পাঁচ বছর পরে ফের এক নম্বর জায়গাটা দখল করা যায়। টাইগার উড্‌স তো গল্ফে কত চেষ্টা করছে ফের স্বমহিমায় ফেরার। পারছে কি? ভাবুন এক বার, টেনিস খেলে একটি লোকের সব কিছু পাওয়া হয়ে গিয়েছে। বয়স তাঁর ছত্রিশ। বিপুল সম্পদের মালিক, নিজস্ব বিমান রয়েছে। বাড়িতে চার সন্তান, স্ত্রী-কে নিয়ে ভরা সংসার। এ সবের পরে মোটিভেশন পাওয়াটাই তো সমস্যার। কিন্তু এই লোকটার নাম রজার ফেডেরার বলেই এই ম্যাজিক দেখাতে পারছে। টেনিসে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় এসেছে, গিয়েছে। কিন্তু রজার নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, প্রতিভার সঙ্গে শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠাকে মিশিয়ে।

Advertisement

কয়েক বছর আগে আনন্দবাজারে লিখেছিলাম, রজার ফেডেরার আর কোনও দিন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারবে না। স্বীকার করতে কোনও দ্বিধা নেই, রজার আমাকে হারিয়ে দিয়েছে। রজারের এই টেনিস-প্রজ্ঞার কাছে ভুল প্রমাণিত হওয়ায় আমার কোনও লজ্জা নেই। বরং টেনিসের এই কিংবদন্তি চরিত্রকে কুর্নিশ করছি।

টেনিস সার্কিটে এত দিন আমার অন্যতম বন্ধু রড লেভার-কেই সর্বকালের সেরা বলতাম। কিন্তু শুক্রবার রাতের পরে আর লেভার নয়। সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়ের আসনে আমি রজার ফেডেরারকেই বসাচ্ছি।

রাফায়েল নাদাল-কে সরিয়ে ফের এক নম্বর জায়গাটা দখল করার কারণ জানতে চাইলে আমি ফেডেরারের ফিটনেসকেই দেখাব। পিঠ এবং হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পরে ফিরে এসে ফেডেরারের দু’বার অস্ট্রেলিয়া ওপেন এবং এক বার উইম্বলডন জেতা। তার পরে এ বার এক নম্বরে ফিরে আসার বড় কারণ এটাই। ফিটনেসটা ওর খুব সহজাত। এটা জানি, আমার আর এক বন্ধু টনি রোচ-এর কাছ থেকে। যে আগে রজার ফেডেরারের কোচ ছিল। ওর থেকেই জেনেছিলাম, প্রতি বছর উইম্বলডন শেষ হলে দুবাইয়ে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কী ভাবে ফেডেরার নিজের ফিটনেস ঝালিয়ে নেয়। অনেক সময়েই নাকি ওর অনুশীলন-পার্টনার-রা অস্বস্তি বোধ করত। কিন্তু রজারের কোনও ক্লান্তি দেখা যেত না। এতেই বোঝা যায়, ও জন্মগত ভাবে কতটা বড় ক্রীড়াবিদ।

অস্ত্রোপচারের পরে রজারের খেলায় যে পরিবর্তনগুলো এখন চোখে পড়ে, তার মধ্যে অন্যতম ওর সার্ভিস। এখন সার্ভিস থেকে রজার কিন্তু অনেক ফ্রি পয়েন্ট পাচ্ছে। নিজের শক্তি ধরে রাখতে এখন আর ও লম্বা র‌্যালির দিকে ঝোঁকে না। বরং ছোট্ট একটা র‌্যালির পরেই উইনার মেরে নিজের শক্তিটা ধরে রাখছে। উইনারগুলোও আগের চেয়ে অনেক নিখুঁত। সব চেয়ে বড় ব্যাপার, এই রজার আগের চেয়ে অনেক বেশি রিল্যাক্সড এবং চাপমুক্ত। ফলে, খেলাটা অনেক বেশি উপভোগ করতে পারছে।

ডাউন দ্য লাইন ব্যাকহ্যান্ড সব সময়েই রজারের প্রিয় শট ছিল। এখন ওর স্লাইস, টপস্পিনগুলোও আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে ওর আরও একটা বড় সুবিধা ওর সমসাময়িক কয়েকজন খেলোয়াড়ের চোট-আঘাত। অ্যান্ডি মারে, নোভাক জকোভিচ-রা চোটের কারণে স্বমহিমায় নেই। ফলে যাদের সঙ্গে রজারকে সার্কিটে খেলতে হচ্ছে, তাঁদের চেয়ে অভিজ্ঞতা, ফিটনেস, খেলার মানে এগিয়ে থাকায় একটা সুবিধাও পাচ্ছে ফেডেরার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন