‘সেঞ্চুরির কথা মাথাতেই ছিল না, দলকে ভাল জায়গায় এনে দেওয়ার লক্ষ্য ছিল’

বাবা সাধারণ চাকরি করতেন ও মা ঘর সামলাতেন বলে রোহিতেকে তাঁরা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন দাদু ও দিদার কাছে। তাঁরাই রোহিতের আসল প্রতিপালক।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

মুম্বই শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৭
Share:

মাঠ মাতানো ইনিংস খেলে দলকে জেতালেন রোহিত।

ঐতিহাসিক ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে সব জায়গাতেই ইতিহাসের ছোঁয়া। সোমবার মাঠ মাতানো ইনিংস খেলে দলকে জেতানোর পরে যে হলে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রোহিত শর্মা, তাও ভারতের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক সি কে নাইডুর নামাঙ্কিত। কিংবদন্তি সেই ক্রিকেটারের মতোই আগ্রাসী ইনিংস খেলে তাঁরই নামাঙ্কিত হলে বসে সারা দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে রোহিত শর্মার কথা বলার ঘটনার ঐতিহাসিক রোমাঞ্চটা বলে বোঝানো কঠিন।

Advertisement

সোমবারের ম্যাচের নায়ক সাংবাদিক বৈঠকে ঢুকেই বললেন, ‘‘মুম্বই বলেই এলাম, না হলে আসতামই না।’’ এই কথা শুনে সাংবাদিকেরা হেসে উঠলেও নিজের শহরের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতাটা মোটেই হেসে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বাবা সাধারণ চাকরি করতেন ও মা ঘর সামলাতেন বলে রোহিতেকে তাঁরা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন দাদু ও দিদার কাছে। তাঁরাই রোহিতের আসল প্রতিপালক। বোরিভলি থেকে ওরলির বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে ওঠার মাঝে যে কত লড়াই আর কত আবেগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছিলেন নিজের শহরে বিশ্বকাপ ফাইনাল হওয়া সত্ত্বেও তাতে খেলতে না পেরে। বিশ্বকাপেই তাঁকে দলে নেওয়া হয়নি পারফরম্যান্সের জন্য। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভাল খেলেও টেস্ট দলে ব্রাত্যই থেকেছেন বারবার। মুম্বই তখন তাঁকে বুকে টেনে নিয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে, আইপিএলে মুম্বই-ই তাঁকে সব সময় তুলে ধরে রেখেছে দেশের ক্রিকেটে। এই ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামেই তো রঞ্জি ট্রফিতে তিনশো, দুশো ও একাধিক সেঞ্চুরি করে সবসময় নিজেকে নির্বাচকদের নজরে রাখতে পেরেছেন তিনি। আর সে জন্যই মুম্বইয়ের প্রতি এতটা কৃতজ্ঞ তিনি।

Advertisement

এই ব্যাপারে রোহিত বলেন, ‘‘ব্রেবোর্নে অনেক ভাল ভাল মুহূর্ত কাটিয়েছি। এখানকার উইকেটে যেমন ভাল ব্যাট করা যায়, বোলাররাও সাহায্য পায়। এখানে বল ভাল সুইং হয়, সিম মুভমেন্টও পায় বোলাররা। তবে একবার সেট হয়ে গেলে এটা ব্যাটসম্যানদের পক্ষে স্বর্গ। এখানে শুরু থেকে নেমেই বড় শট নেওয়া যায় না। কিছুক্ষণ কাটিয়ে তার পরে সেটা করতে হয়। এখানে রান তাড়া করে জেতাও সোজা নয়। আমার মনে হয়, দেশের সেরা উইকেটগুলোর অন্যতম এটা।’’

সোমবারও সেই ছকেই ব্যাট করে গিয়েছেন রোহিত। তবে কখনও সেঞ্চুরির কথা ভাবেননি। নিজেই সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেঞ্চুরির কথা কখনওই মাথায় ছিল না। যত বেশি সম্ভব রান করে দলকে ভাল জায়গায় এনে দেওয়ার পরিকল্পনাই ছিল। বরং উল্টোদিক থেকে রায়ডুই আমাকে বলছিল, তোমার ডাবল হতে পারে। যে তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছি, সেগুলোতেও এই একই পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলাম।’’

গত পাঁচ বছরে ভারতের জার্সি পরে বড় রান না পাওয়ার পরে এ বার তিনি নিজের শহরে রানে ফিরলেন, তাও একটা বিধ্বংসী ইনিংস দিয়ে। ছোটবেলা থেকে রোহিতকে দেখছেন যিনি, সেই কোচ দীনেশ লাড এ দিন ফোনে জানান, ‘‘ভারতের হয়ে নেমে বড় রান না পেলেও ও কিন্তু আইপিএল বা মুম্বইয়ের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় রান পেয়েছে। তাই মুম্বইয়ে ওর ব্যাটে কোনও রানের খরা কোনও দিনই ছিল না। আর একবার ভাল শুরু করে ফেললে ওকে রোখা যায় না, এটা ওর বরাবরেরই অভ্যাস। তাই রোহিত মাঝে মাঝে ব্যর্থ হলেও দুশ্চিন্তা করি না। জানি, ও রানে ফিরবেই।’’

এ দিন নিজের ইনিংসের মতোই রোহিত অম্বাতি রায়ডুর সেঞ্চুরিকেও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন রোহিত। তিনি বলেন, ‘‘দলের পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল ওর এই ইনিংসটা। আমার মনে হয় বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমাদের ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বর জায়গাটা নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন থাকবে না। ওই সময় আমাদের পার্টনারশিপটা খুবই দরকার ছিল। দুটো উইকেট পড়ে যাওয়ায় তো চাপ ছিলই। এই চাপের মুখে ও খুবই ভাল খেলেছে। পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়ার পরে ও হাত খুলে খেলতে শুরু করে। ও এই ধরনের ইনিংস প্রায়ই খেলে থাকে। সেই কারণেই আমরা ওকে চার নম্বরে চেয়েছি। সুযোগ পেয়ে যে ভাবে কাজে লাগাল, তা সত্যিই প্রশংসা করার মতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন