টেস্ট কাঠামোয় পরিবর্তন নয়, আইসিসিকে বার্তা সচিনের

সংবাদ সংস্থাকে সচিন বলেছেন, ‘‘রক্ষণশীলতা এবং টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকে আমি বলব, কোনও ভাবেই যেন পাঁচ দিনের ক্রিকেট-কাঠামোর পরিবর্তন করা না হয়। এত বছর ধরে যে ভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলা হয়ে এসেছে, সে ভাবেই যেন হয়।’’ 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:১৪
Share:

সচিন তেন্ডুলকর।

চার দিনের টেস্টের পরিকল্পনা করার সময় আইসিসি বোধ হয় ভাবতে পারেনি এতটা প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। মাইকেল ভনের মতো হাতে গোনা কয়েক জন ক্রিকেটারকে বাদ দিলে বেশির ভাগ প্রাক্তন এবং বর্তমান ক্রিকেটার এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। মঙ্গলবার যেমন বললেন সচিন তেন্ডুলকর। আইসিসির কাছে তাঁর আবেদন, টেস্ট ম্যাচের দিন যেন কমানো না হয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থাকে সচিন বলেছেন, ‘‘রক্ষণশীলতা এবং টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকে আমি বলব, কোনও ভাবেই যেন পাঁচ দিনের ক্রিকেট-কাঠামোর পরিবর্তন করা না হয়। এত বছর ধরে যে ভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলা হয়ে এসেছে, সে ভাবেই যেন হয়।’’

কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যান মনে করেন, একটা দিন কমানো হলেই ব্যাটসম্যানদের ধারণা হয়ে যাবে এটা সীমিত ওভারের ক্রিকেটেরই একটা অংশ। সচিনের কথায়, ‘‘এক জন ব্যাটসম্যান যদি দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ পর্যন্ত ব্যাট করে, তা হলেই তার মনে হবে, খেলার তো আর মাত্র আড়াই দিন বাকি। সে কথা মাথায় রেখেই তাই ব্যাট করতে চাইবে। চার দিনের টেস্টে খেলতে নামলেই ব্যাটসম্যানদের মনে হবে, এটা তো প্রায় সীমিত ওভারের ক্রিকেটই খেলছি।’’

Advertisement

সচিন হলেন একমাত্র ক্রিকেটার যিনি দুশোটি টেস্ট খেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলছেন, ‘‘এক জন স্পিনারের কাছ থেকে পঞ্চম দিনের পিচ কেড়ে নেওয়ার অর্থ হল এক জন পেসারের কাছ থেকে প্রথম দিনের পিচ নিয়ে নেওয়া।’’ টেস্টের পঞ্চম দিনটা এক জন স্পিনারের কাছে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তা-ও বলেছেন সচিন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের কথায়, ‘‘পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে সব স্পিনারই বল করতে চাইবে। মাথায় রাখতে হবে, বল কিন্তু প্রথম দিন থেকেই ঘোরে না। বল ঘোরার জন্য পিচকে সময় দিতে হবে। পিচকে ভাঙতে দিতে হবে। পঞ্চম দিনের পিচে তাই অসমান বাউন্স থাকে, বলও ঘোরে। প্রথম দু’দিনে কিন্তু এই ব্যাপারটা দেখা যায় না।’’

সচিন জানেন, ক্রিকেটের বাণিজ্যিক দিক বা দর্শক আগ্রহের ব্যাপারটা মাথায় রেখে আইসিসি পাঁচ দিনের বদলে চার দিনের টেস্ট করতে চাইছে। কিন্তু তার পরেও সচিন চান, ব্যাটসম্যানদের যোগ্যতার পরীক্ষার চূড়ান্ত মঞ্চ যেন টেস্ট ক্রিকেটই হয়ে থাকে। কিংবদন্তি বলেছেন, ‘‘বাণিজ্যিক ব্যাপারটা এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে, সেটা আমি মানি। দর্শকদের কথাটাও মাথায় রাখা দরকার, সেটাও মানছি। কিন্তু তার জন্য তো আমরা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে চলে গিয়েছি। আর এখন তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও চলে এসেছে। রক্ষণশীলদের জন্য কিছু একটা তো রেখে দিতে হবে। সেটা হোক টেস্ট ক্রিকেট।’’

টেস্ট এবং ওয়ান ডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর মতে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যাটসম্যানদের একটা মঞ্চ থাকা উচিত। সচিনের মন্তব্য, ‘‘একটা ফর্ম্যাট অন্তত এমন থাকা উচিত, যেখানে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা দিতে হবে। ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। সেই জন্যই তো পাঁচ দিনের ম্যাচকে টেস্ট ম্যাচ বলা হয়। যে ক্রিকেট চার ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায় না। ব্যাটসম্যানকে অনেক কঠিন পিচে ব্যাট করতে হয়।’’

ভাল টেস্ট ক্রিকেট পেতে গেলে ভাল পিচ দরকার, এ কথাটা সচিন বারবারই বলে থাকেন। টেস্টের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য ভাল পিচ বানাও, এমন পরামর্শই দিচ্ছেন সচিন। বলছেন, ‘‘ভাল পিচ ছাড়া ভাল টেস্ট ম্যাচ হবে কী করে? ভাল পিচ হলেই টেস্ট একঘেয়ে হবে না। উত্তেজনা থাকবে, আকর্ষণ থাকবে। কিন্তু কিছু কিছু পিচ থাকে যেখানে বোলাররাও ধরে নেয়, ব্যাটসম্যানকে আউট করা যাবে না। তখন ওরা মেডেন ওভার করার চেষ্টা করে। অপেক্ষা করে থাকে ব্যাটসম্যানের ভুলের। ব্যাটসম্যানও বুঝে যায় খারাপ শট না খেললে আউট হবে না।’’

সচিন মনে করেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে উত্তেজনার স্বাদ পাওয়া দর্শকদের কাছে এই ধরনের টেস্ট ক্রিকেট একঘেয়ে মনে হতেই পারে। ‘‘যে কারণে ভাল পিচ দরকার। ভাল পিচ হলেই নাটকীয় খেলা হবে। আর তা হলেই টেস্ট দেখতে মাঠে দর্শক আসবে, টিভি-র সামনে ভিড় করবে,’’ বলে দিচ্ছেন সচিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন