ম্যাচের পুরো ছবিটা প্রায় একা হাতে পাল্টে দিলেন হরমনপ্রীত কউর।
বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্সে সে দিন অজিঙ্ক রাহানেকে দূর থেকে দেখে যা যা শিখেছিলেন, তা যত্ন করে মনের শো-কেসে তো তুলে রেখেছিলেনই। বিগ ব্যাশ লিগ থেকে আগ্রাসনের যে পাঠ নিয়ে ফিরেছেন, সেই পাঠও বৃহস্পতিবার মেলে ধরলেন হরমনপ্রীত কউর। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা এই আগ্রাসনে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদেরই।
স্মৃতি মানধানা, পুনম রাউতের পরে যখন মিতালি রাজও এ দিন অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের দাপট সহ্য করতে না পেরে ১০১ রানের মধ্যে ফিরে যান, তখন দলের হাল কে ধরবেন, সেটাই ছিল কোটি টাকার প্রশ্ন। এই জায়গা থেকেই পুরো ছবিটা প্রায় একা হাতে পাল্টে দেন পঞ্জাবের মোগা শহরের হরমনপ্রীত।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের যখন শাসন করছিলেন হরমনপ্রীত, তখন যেন ঝড় ওঠে ডার্বির মাঠে। পরপর বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি। সব মিলিয়ে ২০টা চার ও সাতটা ছয়। ১১৫ বলে অপরাজিত ১৭১। স্ট্রাইক রেট ১৪৮.৬৯। যা দেখে স্বয়ং বিরাট কোহালিও বঙ্গোপসাগরের পাড়ে বসে টুইট না করে পারলেন না, ‘‘কি ইনিংস হরমনপ্রীতের! আমাদের বোলাররাও অসাধারণ।’’ সদ্য বিরাটদের কোচ হয়ে ফেরা রবি শাস্ত্রীরও টুইট ভেসে উঠল, ‘‘হরমনপ্রীত, ইউ রকস্টার। দুর্ধর্ষ।’’ ভারতের মহিলা ক্রিকেটারদের মধ্যে ওয়ান ডে-তে এটাই দ্বিতীয় সেরা রান। দীপ্তি শর্মার ১৮৮ রানের পরেই। তবে দীপ্তির ইনিংসটা ছিল আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এটা বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে।
ব্যাটে যেমন ঝড় তুলে ভারতকে প্রায় একা হাতে ২৮১-তে পৌঁছে দেন হরমনপ্রীত, তেমনই ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘হু’জ হু’-দের পোস্টে তখন শুধু একজনেরই নাম। হরমনপ্রীত কউর। সচিন তেন্ডুলকর লিখলেন, ‘‘হরমনপ্রীতের অসাধারণ ব্যাটিং।’’ ভারত ম্যাচ জেতার পর তাঁর বার্তা, ‘‘তোমাদের প্রতি আস্থা আছে। সঙ্গে আছি। গুড লাক।’’ বীরেন্দ্র সহবাগ, ভিভিএস লক্ষ্মণ, অনিল কুম্বলের মতো গত প্রজন্মের তারকারা তো বটেই, বাদ গেলেন না এখনকার ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররাও। তাঁদের সঙ্গে দেশের অগুনতি ক্রিকেট ভক্তদের পোস্টে বন্যার উপক্রম টুইটার, ফেসবুকে।
আরও পড়ুন:
কপিল-ঝড় মনে করাল ‘হারিকেন’ হরমনপ্রীতের বিধ্বংসী ইনিংস
গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় মেয়েদের বিগ ব্যাশে যোগ দিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন হরমনপ্রীত। সিডনি থান্ডারের হয়ে খেলে সবার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। ১৩ ম্যাচে ১১৬-র স্ট্রাইক রেটে ২৯৬ রান করার পর সিডনির ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে তাদের সেরা মহিলা ক্রিকেটার বেছে নেয়। ওখান থেকেই যে আগ্রাসন শিখে এসেছিলেন, এ দিন ডার্বিতে সেই পাঠই কাজে লাগল।
খেলার শেষে জয়ের নায়িকা বললেন, ‘‘গর্ব হচ্ছে দলের জন্য। কিছু করতে পেরেছি, এটাই আনন্দের। তবে বোলাররা ভাল বোলিং না করলে তো জিততেই পারতাম না। আজ ঠিক করেই নেমেছিলাম আরও মন দিয়ে ব্যাট করব। সেটাই পারলাম।’’
তাঁর স্টাইলের সঙ্গে মিল না থাকলেও অজিঙ্ক রাহানের ভক্ত এই পঞ্জাবি মেয়ে। বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্সে একবার রাহানেকে নেট প্র্যাকটিস করতে দেখে নিজের প্র্যাকটিস ছেড়ে সে দিকেই তাকিয়ে ছিলেন হরমনপ্রীত। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘রাহানের টেকনিকটাই আমার সবচেয়ে ভাল লাগে। সে দিন ওর ব্যাটিং দেখে বুঝেছিলাম, প্র্যাকটিস কাকে বলে। দু’ঘণ্টার ব্যাটিং সেশনে ও স্টাম্পের বাইরের বল ছাড়া প্র্যাকটিস করছিল। সে দিন রাহানেকে দেখে মুগ্ধ হওয়ার পর ঠিক করেছিলাম, এ বার থেকে প্র্যাকটিসে আরও মন দেব।’’
তারই ফল পেল এ দিন মিতালি রাজেরা। বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে।