ম্যাচ শুরুর আগে সৌরভের সচিন-বরণ। শনিবার। -উৎপল সরকার
আনন্দে গর্জন করে উঠল ইডেন। সচিন তেন্ডুলকরের মুখে ‘কেমন আছ?’ শুনে।
কিংবদন্তিদের সংবর্ধনায় গ্যালারিতে ডেসিবেলের পারদ ছাপিয়ে গেল হাজারো ওয়াটের গমগমে সাউন্ড সিস্টেমে তাঁর নাম শোনা যেতেই। ফের উঠল সেই ধ্বনি। ‘স-চি-ন, স-চি-ন’।
আর তিনি?
ভারত তখন জয়ের মুখে। এম এস ধোনি ছয় হাঁকিয়ে জয় থেকে মাত্র এক রান দূরে পৌঁছে দিলেন দলকে, তখন ইডেনের কর্পোরেট হসপিট্যালিটি এরিয়ার সামনে দেখা গেল তাঁকে। তেরঙ্গা হাতে নিয়ে। পাশেই অমিতাভ বচ্চন। তিনিও বেশ উত্তেজিত। সারা ইডেনের সঙ্গে আনন্দে ভাসছিলেন সচিনও।
ম্যাচ জিতে বেরোবার সময় ভারতীয় দলের অনেককে উচ্ছ্বসিত সেই সচিনের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়তেও দেখা গেল। যা দেখে সচিন মাঝরাতে টুইট করলেন, ‘‘ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় যে ভাবে আমাকে দেখে হাত নাড়ল টিম ইন্ডিয়া, তার পর মনে হচ্ছে আমি কখনও এই দলের বাইরে আসিনি।’’ আর বিরাট কোহালি যে ভাবে ঝুঁকে পড়ে তাঁকে অভিবাদন জানালেন, তাও তাঁর মনকে ছুঁয়ে গিয়েছে। টুইট করলেন, ‘‘মাঠে আমাকে সম্মান দিয়ে বিরাট যা করল, তার জন্য ওকে ধন্যবাদ।’’ ওই অভিবাদন যে সচিনের জন্যই তা ম্যাচের পর বিরাট নিজেই বলেন টিভিতে। বলেন, ‘‘ওটা সচিন পা-জির জন্যই ছিল। ওঁর জন্যই তো ক্রিকেটে আসা আমার।’’
মুগ্ধ ইডেনের এই উৎসব দেখেও। উপমহাদেশের সেরা তারকাদের সম্মেলন দেখে। ইডেন থেকে বেরনোর সময় বলে দিলেন, “কলকাতাই পারে। থ্যাঙ্কস টু দাদি।”
বিকেলে চার্টার্ড বিমানে মুকেশ ও নীতা অম্বানীর সঙ্গে কলকাতায় নামার সময়ই বিপত্তি। এত ঝড়-বৃষ্টি যে, বিমান নামতেই পারল না। কলকাতার আকাশ থেকেই ঘুরে চলে গেল রাঁচির দিকে। কিছুক্ষণ ঘুরপাক খেয়ে বিমান যখন ফিরে এল কলকাতায়, তখন দুর্যোগ কেটে গেলেও এক ঘণ্টা দেরি হয়ে গিয়েছে সৌরভের শহরে নামতে।
এয়ারপোর্টে সচিনকে অভ্যর্থনা জানাতে যাওয়া তাঁর ঘনিষ্ঠ সিএবি ভাইস প্রেসিডেন্ট সমর পাল সন্ধ্যায় ক্লাব হাউসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে সচিন যেন স্বস্তি পেল। বলল, যেটুকু সময় প্লেনটা আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল, ততক্ষণে খুব টেনশনে পড়ে যায় ও।” দুনিয়ার বাঘা বাঘা বোলারদের পিটিয়ে শায়েস্তা করা বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান আকাশে আটকে পড়ে টেনশনে? কথাটা শুনতে অবাক লাগলেও নাকি সত্যিই।
সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ সপরিবারে (কন্যা সারা ছিলেন না অবশ্য) কলকাতায় পা রেখেই খোঁজখবর শুরু করেন সৌরভের। তাঁদের ‘দাদি’ কেমন কাজ করছেন, প্রশাসক হিসেবে তিনি কেমন, এই সব। তার আগে দু-একবার কলকাতায় ফোন করে শহরের আবহাওয়ারও খোঁজ নিয়েছেন বলে জানা গেল। এয়ারপোর্টে নেমেই সোজা ইডেনে। মাঠে এসে যখন দেখলেন সেই চিরপরিচিত ছবি, হাউসফুল গ্যালারি, চোখ ঝলসানো ইডেন। তখনও নাকি তেমন ভাবে অবাক হননি, যতটা হলেন পরের অনুষ্ঠানটা দেখে।
দুই দেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের সঙ্গে সুপার বোনাস অমিতাভ বচ্চন। এই মহাতারকার মেলা ও দুই দেশের দুই সেরা তারকাকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখে নাকি উত্তেজনা ধরে রাখতে পারছিলেন না মাস্টার ব্লাস্টার। তাঁকে কাছ থেকে দেখা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বললেন, ‘‘এতটা এক্সাইটেড বড় একটা দেখা যায় না ওকে। ইডেনের এই আবহাওয়াই তাতিয়ে দিয়েছে ওঁকে।’’
খেলা শুরুর পর কর্পোরেট হসপিট্যালিটি এরিয়ায় অম্বানীদের বক্সে বসে ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “অসাধারণ একটা সন্ধ্যা উপহার পেলাম ইডেনে এসে। ইউনিক। বিশ্বকাপের একটা ম্যাচের সঙ্গে এত জমজমাট একটা অনুষ্ঠানও যে করা যেতে পারে, তা দেখিয়ে দিল সিএবি। এ জন্য অবশ্য দাদিরই ধন্যবাদ প্রাপ্য। শুনলাম ও-ই সব দায়িত্ব নিয়ে করেছে।”
তখনও অবশ্য সৌরভের সঙ্গে কথা হয়নি সচিনের। পরে অবশ্য অম্বানীদের বক্সে দেখা হয়ে যায় দুই সেরা ব্যাটসম্যানের। কী কথা হল দু’জনের মধ্যে, তা জানা না গেলেও সৌরভ যে সচিনের প্রশংসা পেয়ে দারুণ খুশি তা প্রসঙ্গটা তুলতেই তাঁর মুখে ফুটে ওঠা অভিব্যক্তিতেই স্পষ্ট।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে এ দিন সচিনকে প্রথমে সিএবি-র প্রেসিডেন্টস বক্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর সচিন বি ২ ব্লকে কর্পোরেট বক্সে যেতে চান। কিন্তু যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা তখনই না থাকায় বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। ফের তাঁর জন্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে তার পর তাঁকে পাশের ব্লকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাতে অবশ্য বিন্দুমাত্র বিরক্ত হননি তিনি।
ইডেন মোহে তখন আচ্ছন্ন তিনি। বলেই দিলেন, “এটা তো আমার সেকেন্ড হোম। মুম্বইয়ের মতোই দিব্যি থাকি এখানে।”