একের পর এক দেশের ঐতিহ্যশালী ও সফল ক্লাব আই লিগ থেকে নাম তুলে নিচ্ছে। তাতে দেশজুড়ে হইচই পড়ে গেলেও, কোনও হেলদোল নেই ফেডারেশন কর্তাদের। তীব্র সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়েও তোয়াক্কা করতে নারাজ তাঁরা।
নাম তোলার তালিকায় শেষ সংযোজন গোয়ার দুই প্রথম সারির ক্লাব সালগাওকর ও স্পোর্টিং ক্লুব। সালগাওকর দু’বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন। গোয়ার আর এক সফলতম ক্লাব ডেম্পোও সেই পথে হাঁটার কথা ভাবছে বলে খবর। যেহেতু ডেম্পো প্রধান শ্রীনিবাস ডেম্পো নিজে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি, তাই তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন এআইএফএফের অন্য কর্তারা। শ্রীনিবাস নিজের ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু না বললেও আই লিগ খেলার সম্মতিপত্র এখনও ফুটবল হাউসে পাঠায়নি ডেম্পো।
সালগাওকর আর স্পোর্টিং ক্লুব অবশ্য চিঠি দিয়ে জানিয়েছে তারা আই লিগ খেলবে না। আর তা নিয়ে চিন্তা হওয়া দূরে থাক উল্টে কটাক্ষ করছেন ফে়ডারেশন সচিব কুশল দাস। ফোন না ধরলেও একটি ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘সালগাওকর, স্পোর্টিং ক্লুব যদি আই লিগ না খেলে তাতে কার কী যায় আসে? যে কোনও ক্লাব সরে যেতে পারে। কাউকে অনুরোধ করব না।’’ সঙ্গে সংযোজন, ‘‘সাধারণ মানুষ জনপ্রিয় (আইএসএল) দল এফসি গোয়ার পাশে আছেন। তাদের খেলা দেখতে মাঠ ভর্তি করছেন। এফসি গোয়ার তুলনায় সালগাওকর, স্পোর্টিং কিছুই নয়।’’ যা শুনে হতবাক ফুটবলমহল!
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি আই লিগকে মেরে ফেলে আইএসএলকে এক নম্বর টুনার্মেন্ট করতে নেমে পড়ল ফেডারেশন? স্পনসরদের খুশি করতে এবং নিজেদের পদ সুরক্ষিত করতে নিছক বিনোদন টুর্নামেন্টের পক্ষে সওয়াল করা কি এখন দিল্লির ফুটবল হাউসের কর্তাদের প্রধান অ্যাজেন্ডা? ঘটনা যাই হোক, প্রফুল্ল পটেল অ্যান্ড কোম্পানি কিন্তু বিপজ্জনক পথে হাঁটছেন বলে অনেকে মনে করছেন। বিশ্বের কোনও দেশে ক্লাব ছাড়া ফুটবলের উন্নতি সম্ভব নয় সেটা কিছু দিন আগেই ভারতে এসে বলে গিয়েছেন স্বয়ং ফিফা প্রেসিডেন্ট।
ফেডারেশন বিমাতৃসুলভ আচরণ করায় আই লিগ নিয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা করতে পারছে না ক্লাবগুলো। কবে থেকে টুনার্মেন্ট শুরু হবে? ক’টা দল নিয়ে হবে? সূচি কবে জানানো হবে এ সব কিছুই ঠিক হয়নি। আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘আমরা নয় দলের কমে আই লিগ করব না। যদি দু’টো টিম না খেলে তার জায়গায় ফ্র্যাঞ্চাইজি টিম নেওয়া হবে।’’ ফেডারেশন কর্তারা সালগাওকর এবং স্পোর্টিংকে বাদ দিয়ে আই লিগ করার ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন বলে খবর। তবে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ডেম্পোকে ফেরানোর শেষ চেষ্টা চলছে। ডেম্পো প্রধান শ্রীনিবাসকে গোয়ায় ফোনে ধরা হলে তিনি বললেন, ‘‘আমি এখনও কিছু ঠিক করে উঠতে পারিনি। তবে গোয়ার বাকি ক্লাব, যারা নাম তুলে নিয়েছে, তাদের সমর্থন করি। কিন্তু আমি নিজে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি, তাই কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। পরের সপ্তাহে এআইএফএফের বাকি কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। তার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’
ডেম্পোকে যদি বুঝিয়েসুঝিয়ে ফেডারেশন ধরেও রাখে, তবু সালগাওকর বা স্পোর্টিংয়ের মতো ঐতিহ্যশালী টিমের সরে দাঁড়ানোর ক্ষতি কি ফ্র্যাঞ্চাইজি টিমকে খেলার সুযোগ করে দিয়ে মেটানো সম্ভব? মাত্র চার বছর আগে ১৪ দলের জমজমাট আই লিগ হয়েছে। ২০১৪-১৫ থেকে সংখ্যাটা কমে ১১ হয়। আর গত বছর মাত্র নয় দল খেলে। এর পরেও ফেডারেশন কর্তারা ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি দেখছেন। প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল স্বপ্ন দেখছেন, ২০২২ বিশ্বকাপে খেলবে ভারত!