কী খুইয়ে কিংবদন্তি জানিয়ে গেলেন মার্টিনারা

নেতাজি ইন্ডোরের প্রেস কনফারেন্স রুমে মিনিট কয়েক আগেও ওঁরা চার ঠাট্টার মেজাজে ছিলেন। কিছুক্ষণ আগের প্রদর্শনী ম্যাচের হালকা আবহের মতোই। ৫৯ বছরের মার্টিনাকে কোর্টে যতটা ‘প্যাশনেট’ দেখিয়েছে বাকি তিন মহাতারকাকে নাকি দেখায়নি— সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন উঠলে লিয়েন্ডার তো গলা তুলে ‘সিকিউরিটি’-কে ডাকলেন! নিছক রসিকতা। পাশে বসা সানিয়ার আবার কপট অভিমানী গলা— ‘‘মানে? আমরা বুঝি আজ মন দিয়ে খেলিনি!’’

Advertisement

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৯
Share:

নেতাজি ইন্ডোরে টেনিস সাম্রাজ্ঞী।-উৎপল সরকার

মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা।

Advertisement

লিয়েন্ডার পেজ।

সানিয়া মির্জা।

Advertisement

মহেশ ভূপতি।

মহা চার হয়ে উঠতে কী মূল্য চুকোতে হয়?

টেনিস-শৃঙ্গে পৌঁছতে জীবনের কী হারিয়েছেন এঁরা?

মহেশ: পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো।

লিয়েন্ডার: যৌবন।

সানিয়া: বাড়ি, মা-বাবার সঙ্গ।

মার্টিনা: দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া।

নেতাজি ইন্ডোরের প্রেস কনফারেন্স রুমে মিনিট কয়েক আগেও ওঁরা চার ঠাট্টার মেজাজে ছিলেন। কিছুক্ষণ আগের প্রদর্শনী ম্যাচের হালকা আবহের মতোই। ৫৯ বছরের মার্টিনাকে কোর্টে যতটা ‘প্যাশনেট’ দেখিয়েছে বাকি তিন মহাতারকাকে নাকি দেখায়নি— সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন উঠলে লিয়েন্ডার তো গলা তুলে ‘সিকিউরিটি’-কে ডাকলেন! নিছক রসিকতা। পাশে বসা সানিয়ার আবার কপট অভিমানী গলা— ‘‘মানে? আমরা বুঝি আজ মন দিয়ে খেলিনি!’’

কিন্তু ওই এক বারই কলকাতা টেনিস মাস্টার্স যেন সিরিয়াস! যখন দেশের তিন টেনিস আইকনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব টেনিসের অ্যাম্বাস্যাডরের কাছে জানতে চাওয়া হল, কী ত্যাগ করতে হয়েছে তাঁদের আজকের জায়গায় পৌঁছতে। নইলে আয়োজনের অভাব না থাকুক, ঘরের টেনিস তারকাকে যতই আবেগতাড়িত করে তলুক, অভিনব মিক্সড ডাবলস ম্যাচ দর্শক আনুকূল্য থেকে কিছুটা বঞ্চিত ছিল। এ-ও প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল, কলকাতার টেনিস মহল কি তা হলে একমাত্র কম্পেটেটিভ ম্যাচ দেখতেই আগ্রহী?

যদিও এ দিন রাতেও লিয়েন্ডার বলছিলেন, ‘‘মার্টিনার ড্রপ শটটা দেখলেন!’’ সখেদে বললেন, ‘‘অনেক বছর পর নিজের শহরে খেলতে আসার পথে আমার স্কুল, আমার বাড়ি, সাউথ ক্লাব, এই স্টেডিয়ামের প্রায় গায়ে আমার হকি অলিম্পিয়ান বাবার মোহনবাগান ক্লাব— সব পেরনোর সময় একটা অদ্ভুত নস্ট্যালজিক লাগছিল! তার পর ম্যাচটাও খেললাম যাঁদের হাত ধরে আমি আজকের লিয়েন্ডার হয়েছি তাঁদের সামনে। আমার ছোটবেলার কোচ আখতার আঙ্কল, আমার বাবা-মা, আমার প্রথম ডেভিস কাপ ক্যাপ্টেন নরেশ স্যার, আমার দ্বিতীয় ক্যাপ্টেন জয়দীপ আঙ্কল...!’’ বাকিদের মতে (যাঁদের মধ্যে সানিয়া-মহেশও রয়েছেন) যখন কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা সম্পর্কে বলে শেষ করা নাকি অসম্ভব, লিয়েন্ডারের কাছে সেখানে মার্টিনা মানে কেবল একটা শব্দ— ‘ম্যাজিক’!

আর তিনি মার্টিনা? নাগালের মধ্যে বল এলে তবেই সেই পরিচিত সব রিটার্ন বেরোচ্ছিল র‌্যাকেট থেকে। যা দেখেও প্রিয় ডাবলস পার্টনার লিয়েন্ডার কোর্টেই মাথা নিচু করে সম্মান জানাচ্ছিলেন কিংবদন্তিকে। স্কোর বোর্ডে বিপক্ষ জুটির চেয়ে একটু পিছিয়ে রয়েছেন দেখলেই দুই প্রাক্তন বিশ্বসেরা ডাবলস তারকার বিরুদ্ধে বর্তমান বিশ্বসেরা সানিয়ার হাত থেকে ছিটকে বেরোচ্ছিল ছেলেদের সার্কিট-সম সেই বিখ্যাত ফোরহ্যান্ড! তাতেই মহেশ-সানিয়া ৭-৫, ৭-৫ জিতে নেন কলকাতা মাস্টার্স ট্রফি।

অনভ্যস্ত হাতে টেনিস র‌্যাকেট। বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে কলকাতা মাস্টার্সের উদ্বোধন করার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্যে তাই এগিয়ে এলেন খোদ সানিয়া মির্জা। এই টুর্নামেন্ট খেলতেই কলকাতায় এসেছিলেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। — উৎপল সরকার

যার তুলনায় হয়তো বেশি মনে থাকবে— ‘‘ম্যাডাম, র‌্যাকেট দিয়ে একটা বল মেরে ম্যাচটা উদ্বোধন করুন প্লিজ’’ উদ্যোক্তাদের অনুরোধে অল্প অপ্রস্তুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যখন ‘উদ্বোধনী হিট’ করতে সহাস্য সাহায্য করলেন সানিয়া মির্জা। মনে রাখার মতো মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার আত্মবিশ্লেষণও। ‘‘আমার মতো আদ্যন্ত এক টেনিসপাগলও এত দিনেও সিরিয়াস কোচিংয়ে আসছি না তার কারণ আমার একটা সুন্দর পরিবার আছে। দু’জন সুন্দর সন্তান আছে। আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত এক গৃহিণী।’’

সানিয়া আবার এহেন ‘গৃহিণী’র থেকেও এই তিন দিনে (একই ম্যাচ পরের দু’দিন হবে হায়দরাবাদ আর দিল্লিতে) যতটা বেশি পারেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা হওয়ার রেসিপি জানার প্রবল চেষ্টা করবেন শপথ নিলেন কলকাতায় বসেই। ‘‘বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা এটা লিয়েন্ডারকে দেখে বুঝি, তবে তত্ত্বটার পথিকৃত নিঃসন্দেহে মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। ওঁর খেলাটার প্রতি প্যাশন অতুলনীয়। এখনও।’’

সব কিছু দেখেটেখে মহেশ ভূপতির কী মনে হল? আইপিটিএল-৩ কি ২০১৬-এ দিল্লি থেকে সরিয়ে লিয়েন্ডারের শহরে আনবেন? প্রশ্নটা কেউ না তুলুন, শহরে তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের মহেশ নাকি বলেছেন, ব্যাপারটা তাঁর মাথায় রয়েছে। ভাল রকমই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন