আই লিগ-স্বপ্ন বিশ বাঁও জলে

তিন ম্যাচে আট পয়েন্ট খুইয়ে ফিরছে সঞ্জয়ের দল

নাটকীয় ঘটনা না বলে দুর্ভাগ্য বলাটাই মনে হয় ঠিক! ম্যাচে দু’বার এগিয়ে যাওয়ার পরেও কোনও দল যদি ইনজুরি টাইমের শেষ দশ সেকেন্ডে গোল খায় তা হলে আর কীই বা বলা যায়!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৪৩
Share:

শিলং থেকে বারাসত একই ছবি। হতাশ সবুজ-মেরুনের কাতসুমি। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

মোহনবাগান-২ (জেজে, কাতসুমি)
শিলং লাজং-২ (উইলিয়ামস-২)

Advertisement

নাটকীয় ঘটনা না বলে দুর্ভাগ্য বলাটাই মনে হয় ঠিক! ম্যাচে দু’বার এগিয়ে যাওয়ার পরেও কোনও দল যদি ইনজুরি টাইমের শেষ দশ সেকেন্ডে গোল খায় তা হলে আর কীই বা বলা যায়!

গ্যালারি থেকে কোচের ফোন-নির্দেশ পেয়ে সময় নষ্ট করার ছকে কর্নেল গ্লেনের জায়গায় সঞ্জয় বালমুচুকে নামালেন মাঠে থাকা টিম ম্যানেজমেন্ট। ত্রিনিদাদ টোবাগোর বিশ্বকাপার সটান সাইডলাইন দিয়ে না বেরিয়ে ধীরে ধীরে মাঠের মধ্য দিয়ে রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে হেঁটে আসলেই হয়তো ম্যাচটা জিতে যেত সেই সময় ২-১ এগিয়ে থাকা মোহনবাগান। কারণ ইনজুরি টাইম শেষ হতে তখন বাকি ছিল মাত্র দশ সেকেন্ড। আর সেই সময়ই শিলং লাজংয়ের দ্বিতীয় গোলটা হয়ে গেল! ২-১ থেকে ২-২। ফের পয়েন্ট নষ্ট মোহনবাগানের।

Advertisement

‘লাক’ শব্দটা যিনি কখনও ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না, সেই বাগান কোচ সঞ্জয় সেন পর্যন্ত শিলং থেকে ফোনে হতাশায় ডুবে গিয়ে বলে ফেললেন, ‘‘ভাগ্য কাউকে জেতায় বলে বিশ্বাস করি না। আমার মতে যে কোনও ম্যাচে ভাগ্য কাজ করে এক পার্সেন্ট। কিন্তু সেটাই আমাদের পরপর দু’টো ম্যাচে কাজ করল না। কী আর বলব! আগের দিন জেজে ইনজুরি টাইমে পেনাল্টি নষ্ট করল। আর আজ দশটা সেকেন্ড নষ্ট করতে পারল না গ্লেন।’’

তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ। আট পয়েন্ট নষ্ট। মাত্র ন’দিন আগেও যে দলটাকে মনে হচ্ছিল আই লিগ জেতার দৌড়ে অশ্বমেধের ঘোড়া, মঙ্গলবার সেই মোহনবাগানের সামনে গাঢ় অন্ধকার। কাতসুমিদের সামনে অসংখ্য ‘যদি’, ‘কিন্তু’ ভিড় করে দাঁড়াল। গত বারের চ্যাম্পিয়নরা ট্রফি জয়ের হাইওয়ে থেকে পুরোপুরি ছিটকে না গেলেও তাদের হাতে আর পুরো ব্যাপারটা নেই। এখন নিজেদের তো বাকি দু’টো ম্যাচ (শিবাজিয়ান্স ও বেঙ্গালুরু) জিততেই হবে। বেঙ্গালুরু এবং ইস্টবেঙ্গলের বাকি ম্যাচগুলোর দিকেও চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে হবে।

ডার্বি হারের পরেও চরম আশাবাদী ছিলেন যে বাগান-কোচ তিনিও এ দিন বলে দিলেন, ‘‘এত দিন যেটা আমাদের হাতে ছিল সেটাও হাতছাড়া হয়ে গেল।’’ শিলং ম্যাচ খেলে এসে তাই বাধ্য হয়েই বাগানের টিম হোটেলে টিভি খুলে বসে যান সঞ্জয়। আর তখনই বারাসতে পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল ১-১ করল র‌্যান্টির গোলে। সঞ্জয় ফোনে বলে ফেললেন, ‘‘দেখি শেষ পর্যন্ত কী হয়।’’

বারাসতে বাগান-শিলং ম্যাচ শেষ হয়েছিল অমীমাংসিত অবস্থায়। তখন সঞ্জয় বাহিনী ছিল অনেক অগোছাল। কিন্তু মঙ্গলবার ডার্বি হারের পরের ম্যাচেই সাধারণ নিয়মে নেতিয়ে থাকা অবস্থার বদলে পাহাড়ে ম্যাচ প্রায় মুঠোয় পুরে নিয়েছিলেন লুসিয়ানো, জেজেরা। শিলিগুড়িতে পেনাল্টি নষ্ট করে দলকে ডুবিয়েছিলেন জেজে। এ দিনের ম্যাচে শুরুতেই গোল করে যেন পাপস্খলন করলেন তিনি। কিন্তু লাজংয়ের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার উইলিয়ামস ফ্রি কিক থেকে ১-১ করে দেন প্রথমার্ধেই। তাতেও অবশ্য পাল্টা চাপ বাড়াতে থাকে সঞ্জয়ের বাগান। এ দিনও সাসপেনশনের জন্য চিফ কোচ সঞ্জয় আর সহকারী শঙ্করলাল চক্রবর্তী বাগানের বেঞ্চে ছিলেন না। কখনও ফিজিও গার্সিয়া, কখনও ম্যানেজার সঞ্জয় ঘোষ কোচিং করান। এ রকম অভিভাবকহীন অবস্থাতেও অসাধারণ গোল করে টিমকে ফের ২-১ এগিয়ে দিয়েছিলেন কাতসুমি।

এই অবস্থায় গত বারের চ্যাম্পিয়নরা যখন ধরেই নিয়েছে জয় মুঠোয়, তখনই ফের শিলংয়ের উইলিয়ামসের গোল। তবে গোলটা আটকানো উচিত ছিল দেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারের। উড়ে আসা বল অনেকক্ষণ দেখার সময় পেয়েছিলেন তিনি। বাগান কোচও স্বীকার করলেন, ‘‘গোলটা আটকানোর সুযোগ ছিল ওর।’’

কিন্তু স্বীকার করে আর কী হবে? সমালোচনা করেও কোনও লাভ নেই। নানা অঙ্কে দারুণ জমে গিয়েছে আই লিগের শেয ল্যাপ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইস্টবেঙ্গলও ড্র করার পর বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের মতোই সঞ্জয় সেনকে তাকিয়ে থাকতে হবে আজ, বুধবার বেঙ্গালুরু-শিবাজিয়ান্স ম্যাচের দিকে। যদি পুণেতেও কিছু অঘটন ঘটে সেই আশায়!

মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, লুসিয়ানো, কিংশুক, ধনচন্দ্র, কাতসুমি, আজহারউদ্দিন (প্রবীর), প্রণয়, লেনি (শৌভিক), গ্লেন (সঞ্জয়), জেজে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন