‘সুনীলের সেরা গুণ অলক্ষ্যে থেকে গোল করা’

আইএসএলের ম্যাচ সরিয়ে রেখে বুধবার সন্ধেয় বেঙ্গালুরুর এএফসি কাপের ম্যাচটা টিভিতে দেখার পর দারুণ তৃপ্তি লাগছে। আরও বেশি সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে। এ জন্যই যে, এত বিদেশি স্ট্রাইকারের মধ্যেও নিজেকে এই বিরাট উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাওয়ায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৯
Share:

সঞ্জয় সেন

আইএসএলের ম্যাচ সরিয়ে রেখে বুধবার সন্ধেয় বেঙ্গালুরুর এএফসি কাপের ম্যাচটা টিভিতে দেখার পর দারুণ তৃপ্তি লাগছে। আরও বেশি সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে। এ জন্যই যে, এত বিদেশি স্ট্রাইকারের মধ্যেও নিজেকে এই বিরাট উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাওয়ায়।

Advertisement

খেলোয়াড় এবং কোচিং জীবন মিলিয়ে ফুটবল মাঠে আছি প্রায় সাঁইত্রিশ বছর। চুনীদা বা প্রদীপদার খেলা দেখিনি। তবে মহম্মদ হাবিব, শ্যাম থাপা, সুভাষ ভৌমিক, সাব্বির আলি— সব স্ট্রাইকারের বিরুদ্ধে ডিফেন্সে খেলেছি, অথবা তাদের খেলা দেখেছি খুব কাছ থেকে। ভাইচুংয়ের বিরুদ্ধে পর্যন্ত খেলেছি রেল টিমে থাকার সময়। বিজয়নকে দেখেছি খুব কাছ থেকে। তা সত্ত্বেও বলব, সুনীলই এক নম্বর। একজন স্ট্রাইকারকে মাপা হয় তাঁর গোল দিয়ে। সে দিক থেকে সুনীল অনেক আগেই টপকে গিয়েছে সবাইকে।

সুনীলকে আমি ইউনাইটেডে কোচ থাকার সময় সঙ্গে পেয়েছিলাম। আর মোহনবাগানের কোচ হিসাবে ওকে অনেক ম্যাচে আটকানোর ছক কষতে হয়েছে আমাকে। সুনীলের অনেক গুণের মধ্যে সেরাটা হল, ও নিজের গেম রিডিংয়ের জোরে অনায়াসে ‘আনমার্কড’ অবস্থায় গোল করে যায়। যেমন এ দিনই করল জোহর দারুলের বিরুদ্ধে। ওর দ্বিতীয় গোলটার সময় মালয়েশিয়ান ক্লাবের ডিফেন্স তো বুঝতেই পারেনি সুনীল ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে?

Advertisement

মনে আছে, যে বার মোহনবাগানকে আই লিগ জেতালাম, সে বার হোম ম্যাচে ঠিক এ ভাবেই গোল দিয়েছিল ও। তার পর আমরা চার গোল করেছিলাম ঠিক, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছিল সুনীলকে আমাদের ডিফেন্ডাররা সারাক্ষণ দারুণ ভাবে চোখে-চোখে রাখায়। ওকে দেখলে মাঝেসাঝে আমার লুই সুয়ারেজের কথা মনে হয়। ওই রকমই যেন গোলের গন্ধ পায়। ঠিক জায়গায় পৌঁছে যায় গোল স্কোরিং বলের জন্য। এবং সেটাও সবার অলক্ষ্যে! ভাইচুংয়েরও এই ক্ষমতাটা ছিল।

এক জন স্ট্রাইকারের ‘অ্যাক্রোবেটিক কোয়ালিটি’ বলতে ফুটবলে যেটা বোঝায়, ভাইচুংয়ের সেটা বেশি ছিল সুনীলের চেয়ে। তবে ব্যাকভলি আর সাইড ভলিতে দু’জনেরই প্রচুর গোল আছে। ভাইচুং বা সুনীল— কারও ড্রিবলিংই খুব ভাল বলব না। ওয়ান টু ওয়ান-এ আটকেছে বহু বার। কিন্তু সুনীল এগিয়ে থাকবে ভাইচুংয়ের চেয়ে দু’টো জায়গায়। এক) স্ট্রাইকার, ডিপ স্ট্রাইকার বা উইং— সব জায়গাতেই সফল ও। জাতীয় দলে তো কোচ কনস্ট্যান্টাইন ওকে জেজের পিছনে খেলিয়েছেন। তাতেও গোল করেছে। দুই) ওই রকম খর্বকায় শরীর নিয়েও ওর হেডিং অসাধারণ।

টেকনিক্যাল দিক বাদ দিয়ে আরও অনেকগুলো জিনিস সুনীলকে আজ এখানে এনে দিয়েছে। তা হল, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। আদ্যন্ত টিম ম্যান। সংযমী জীবনযাপন করে। সুনীলকে কখনও বিতর্কে জড়িয়ে ফোকাস নষ্ট করতে দেখিনি। জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরেও চুপ থেকেছে। আমরা যে ম্যাচ বেঙ্গালুরুতে গিয়ে অ্যাশলে ওয়েস্টউ়ডের টিমকে হারিয়ে আই লিগ পেয়েছিলাম, সুনীল সেই ম্যাচে বেঙ্গালুরুর প্রথম দলে ছিল না। শেষের দিকে নেমেছিল। তা সত্ত্বেও ম্যাচের পর ওর মুখ থেকে একটা শব্দও বের করতে পারেনি কোনও সাংবাদিক। এটা যে একজন খেলোয়াড়ের কত বড় গুণ সেটা বড় দলের কোচ হিসেবে আমি বিলক্ষণ জানি।

কিছুদিন আগেও শুনতাম, সুনীল নাকি জাতীয় দলের জার্সিতে সুন্দর, ক্লাবের জার্সিতে নয়। বেঙ্গালুরুতে গত তিন বছরে ও প্রমাণ করে দিয়েছে এটা কত বড় ভুল কথা। দু’বার আই লিগ, এক বার ফেড কাপ জেতা। প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসেবে এএফসি কাপ ফাইনালে ওঠা। সুনীলের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার জন্য এর চেয়ে ভাল জবাব আর কী হতে পারে। সুনীলের এ দিনের দ্বিতীয় গোলটা দেখার পর বলতে ইচ্ছে করছে, আহা! আমার দেখা তুমিই সেরা ভারতীয় স্ট্রাইকার। আর কাউকে এই জায়গাটা দিতে পারছি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন