বিরাট-পরিবার যখন সরফরাজের ‘মস্তি কি পাঠশালা’

যেন পরিবারের ছোট্ট সোনা। কেউ তাঁকে বলে ডাকেন ‘সরফি’, কেউ ‘সরফু’। বিরাট কোহলি আবার নাকি মাঝে মাঝে তাঁকে ‘খান সাব’ বলেও ডাকেন। দলের সবার প্রিয় তিনি। সরফরাজ খান। ক্রিস গেইল, এ বি ডে’ভিলিয়ার্স না কি প্রায়ই ব্যাটিং টিপস দেন তাঁকে। এক দিকে গেইল, অন্য দিকে ডেভিলিয়ার্স— দুই আগ্রাসী ব্যাটসম্যানের প্রভাব তাঁর ব্যাটিংয়ে কতটা পড়েছে, তার প্রমাণ তো তিন দিন আগে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচেই পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

যেন পরিবারের ছোট্ট সোনা। কেউ তাঁকে বলে ডাকেন ‘সরফি’, কেউ ‘সরফু’। বিরাট কোহলি আবার নাকি মাঝে মাঝে তাঁকে ‘খান সাব’ বলেও ডাকেন। দলের সবার প্রিয় তিনি। সরফরাজ খান। ক্রিস গেইল, এ বি ডে’ভিলিয়ার্স না কি প্রায়ই ব্যাটিং টিপস দেন তাঁকে। এক দিকে গেইল, অন্য দিকে ডেভিলিয়ার্স— দুই আগ্রাসী ব্যাটসম্যানের প্রভাব তাঁর ব্যাটিংয়ে কতটা পড়েছে, তার প্রমাণ তো তিন দিন আগে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচেই পাওয়া গিয়েছে। ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে না গেলে হয়তো সরফরাজের সেই ২১ বলে ৪৫-এর ইনিংসই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে লড়াইয়ের বারুদ জোগাত। সে দিন ব্যাট করে ফেরার সময় হেসে হাত জোড় করে সরফরাজকে কিছু বলতে দেখা গিয়েছিল বিরাট কোহলিকে। কিন্তু কী বলেছিলেন, তা বোধহয় কারও জানা নেই।

Advertisement

কী বলছিলেন সে দিন বিরাট?

বেঙ্গালুরুর টিম হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে প্রায় আধো আধো কথায় ১৭ বছরের সরফরাজ বললেন, ‘‘বিরাট ভাইয়া হাত জোড় করে শুধু বলল, ‘হাঁ জি ভাইয়া, বঢ়িয়া’। আমি খ্যাক-খ্যাক করে হাসছিলাম ওর কথা শুনে। আমার সঙ্গে এ রকম ভাবেই কথা বলে বিরাট ভাইয়া। দলের অন্যরাও।’’

Advertisement

কোনও পরিবারে কোনও শিশু থাকলে যেমন তাকে নিয়ে সেই পরিবারে সবসময় হইচই চলে, তেমনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘শিশু’ সরফরাজকে নিয়েই মেতে আছে আরসিবি পরিবার।

নিজেই সে কথা জানালেন মুম্বইয়ের টিন এজার ব্যাটসম্যান। বললেন, ‘‘দলের সবাই আমার ভাইয়া। সবাই যেমন আমাকে খুব ভালবাসে, তেমন আমার পিছনেও লাগে খুব। তাতে বরং আমি খুশিই হই।’’

সরফরাজের কথায় আরসিবি পরিবারের সবচেয়ে মজাদার লোকটি হলেন ক্রিস গেইল। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে রীতিমতো লজ্জায় লাল হয়ে উঠলেন, ‘‘ক্রিস-ভাই খালি আমার পিছনে লাগে আর পিছন থেকে খোঁচা মেরে বলে, ‘হেই ডুড, হোয়্যার ইজ ইওর গার্লফ্রেন্ড?’ ওকে কে বোঝাবে যে, আমার কোনও বান্ধবী বা প্রেমিকা নেই। ও কিছুতেই বিশ্বাস করে না। বলে, ‘তুই টিন এজার, তোর প্রেমিকা নেই! আমাকে গাধা পেয়েছিস?’ কিছুতেই বিশ্বাস করে না।’’

তবে ক্রিকেটে এখন তার এক নম্বর গুরু এ বি ডেভিলিয়ার্স। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপ্টেনের এই নতুন ছাত্র কয়েক দিন তাঁর কাছ থেকে টিপস নেওয়ার পর থেকে ব্যাটিংয়ের শিল্প নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। নতুন কী শিখলেন? প্রশ্নটা করতেই সরফরাজ বললেন, ‘‘অনেক কিছু। গ্রিপ থেকে শুরু করে হাতের এক্সারসাইজ, অনেক কিছু। হাতের জোর বাড়ানোর জন্য যে কত রকমের কসরত করতে হয়, তা এবি স্যরের কাছ থেকে শিখেছি। এগুলো করছিও। সে দিন যে ওই রকম ব্যাট করতে পারলাম, তার বেশিরভাগটাই ওঁর জন্য। এই ক’দিনেই কত কিছু শিখেছি। এগুলো চিরকাল মনে থাকবে।’’

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপ্টেন যখন ভারতের এই তরুণ তুর্কিকে এত কিছু বিলোচ্ছেন, তখন ভারতীয় টেস্ট ক্যাপ্টেনের কাছে থেকে কী পেলেন এই ক’দিনে? এ বার একটু ডিফেন্সিভ সরফরাজ। বললেন, ‘‘বিরাট ভাইয়া ক্যাপ্টেন। সবার সঙ্গে কথা বলতে হয়, সবাইকে দেখতে হয়। শুধু আমাকে কী করে দেখবেন? তবে সময় পেলেই আমার সঙ্গে খুনসুটি করে। ও যে এত বড় ব্যাটসম্যান, ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন, তা বুঝতেই দেয় না। এবি স্যর, ক্রিস-ভাইয়ারাও তাই। আমি খুব উপভোগ করছি ড্রেসিংরুমের এই পরিবেশটা। আইপিএল শেষ হয়ে গেলে ওদের খুব মিস করব।’’

আইপিএলের সর্বকনিষ্ঠের কাছে আরসিবি পরিবার যে ‘মস্তি কি পাঠশালা’ হয়ে উঠেছে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন