সিরিজের সেরা প্রাপ্তি কেদার, বলছেন সৌরভ

আসুন, ইডেন গার্ডেন্স থেকে আপনাদের ম্যাচের শেষ বলটা দেখাই, ছ’রান...এক বলে ছ’রান চাই...চেতন শর্মাকে লাস্ট বলে ছয় মেরে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিল মিয়াঁদাদ...আসুন, দেখি ভুবনেশ্বর কুমার আজ মিয়াঁদাদ হয়ে উঠতে পারে কি না...

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৩
Share:

কোহালিকে সিরিজ জয়ের ট্রফি দিচ্ছেন সৌরভ। ছবি:উৎপল সরকার

আসুন, ইডেন গার্ডেন্স থেকে আপনাদের ম্যাচের শেষ বলটা দেখাই, ছ’রান...এক বলে ছ’রান চাই...চেতন শর্মাকে লাস্ট বলে ছয় মেরে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিল মিয়াঁদাদ...আসুন, দেখি ভুবনেশ্বর কুমার আজ মিয়াঁদাদ হয়ে উঠতে পারে কি না...

Advertisement

হাতের মোবাইল মুখের কাছে ধরে ইডেন যুদ্ধের শেষ ওভারটা লাইভ রেকর্ডিং করে যাচ্ছেন যিনি, তিনি হিন্দিভাষী। বাংলায় লাইভ কমেন্ট্রি মোটেও করেননি, উপরের লাইনগুলো তর্জমা মাত্র। অধুনা ক্রিকেট সমর্থকদের সমর্থনের ভাষা দাঁড়িয়েছে মোবাইল ক্যামেরা। ভারত ম্যাচ জিতলে-টিতলে বা জেতার মুখে দাঁড়িয়ে থাকলে ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত স্টেডিয়ামেই সমর্থকদের মোবাইলের ফ্ল্যাশবাল্ব জ্বালিয়ে রাখতে দেখা যায়। কিন্তু ইডেন বরাবরই স্বতন্ত্র। তার সমর্থনের ধর্ম, সমর্থনের ভাষা বরাবরই বাকিদের চেয়ে আলাদা। সে যেমন নিয়মরক্ষার ম্যাচে ষাট হাজার গমগমে দর্শক সমর্থন হাজির করতে পারে, ঠিক তেমন পারে সমর্থনের বহিঃপ্রকাশে অভিনবত্ব আমদানি করতে। মোবাইলে ম্যাচ রেকর্ডিংয়ের সঙ্গে লাইভ কমেন্ট্রি আমদানি এ জিনিস তো দেখা যায়নি।

ব্যাপারটা যতটা অভিনব, তার পরিণতি ঠিক ততটাই দুঃখজনক। রবিবার রাতের ইডেনে শেষ ওভারটা চলার সময় উত্তেজনায় স্রেফ থরথরিয়ে কাঁপছিলেন ওই হিন্দিভাষী ভদ্রলোক। এবং শেষ বলের পরে মুখটা কেমন পাংশুবর্ণ হয়ে গেল! ক্লাবহাউস গ্যালারিতে এক বৃদ্ধকে বহুক্ষণ ধরে দেখা যাচ্ছিল, হাত দু’টো বুকের কাছে চেপে বসে। শেষ বলের পর হাত দু’টো শুধু উঠে মুখটা ঢেকে দিল। কয়েক জন আবার অভিনব পাগড়ি পরে এসেছেন ক্লাবহাউস গ্যালারিতে। কিছুই না, আলো জ্বলছিল পাগড়ি থেকে। শেষ বলের পর ওই পাগড়ি-পরিহিতদেরও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে খবর নেই।

Advertisement

করবেনও বা কী? ভুবনেশ্বরের পক্ষে মিয়াঁদাদ হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি, ক্লিন সুইপের উথাল-পাথাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেও ভারতকে তাই আটকে যেতে হয়েছে হারের পৃথিবীতে।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকেও ম্যাচ শেষে নিজের ঘরে একটু বিমর্ষ মনে হল। ভাবতে পেরেছিলেন এ রকম হবে? ভাবতে পেরেছিলেন, প্রথম দু’বলে ১০ তুলেও বাকি চার বলে ৬ তোলা যাবে না? “আরে, এটা বুঝতে হবে ইংল্যান্ড খুব ভাল টিম। খুবই ভাল টিম। আর ক্রিকেটে এ রকম হতেই পারে। কী করা যাবে,” ঘরের টিভিতে চোখ রেখে বলে দিলেন সৌরভ।

তবে একজনকে দেখে সৌরভ মুগ্ধ। কেদার যাদবকে দেখে। ইডেনে ম্যাচ শেষে কেদারকে নিয়ে প্রথমে ভারত অধিনায়ক শংসাপত্র দেন। বিরাট কোহালি বলে দেন, “কেদার আমাদের সেরা আবিষ্কার।” সেটাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন সৌরভ। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়কের অভিমতে, ছ’নম্বরে ব্যাট করা মোটেই সহজ নয় এবং কেদার সেটা অতীব সহজে করছেন। “আমি তো বলব সিরিজের সেরা প্রাপ্তি কেদার। দারুণ ব্যাটসম্যান। ছ’নম্বরে নেমে অনেক বুঝেশুনে খেলতে হয়। কেদার পারে সেটা।” কিন্তু ফিনিশার ধোনির শূন্যস্থান পূরণে তাঁকে ভাবা যেতে পারে? সৌরভ বিশদে ঢুকলেন না। বললেন, “সময় দিতে হবে। আরও খেলুক। তা ছাড়া ফিনিশার ব্যাপারটাই বুঝতে পারি না আমি। কোহালিও তো ম্যাচ শেষ করে। তা হলে কোহালিও ফিনিশার।”

সে তর্ক থাক। কিন্তু প্রথমটা তো ধ্রুব সত্যি। চলতি সিরিজে কেউ যদি প্রাপ্তি হন, তা হলে সত্যিই সেটা কেদার। এক-এক সময় মনে হচ্ছে, রবিবাসরীয় ইডেন আবহ তার পরিপূর্ণ মর্যাদা পেত ভারতীয় ক্রিকেটের নয়া মরাঠি ম্যাচটা জিতিয়ে বেরোতে পারলে। ষাট হাজারের সমর্থন ছেড়ে দেওয়া গেল। ক্রিকেট যুদ্ধের শিরশিরানিও ছেড়ে দেওয়া যাক। শুধু ম্যাচের আনুষাঙ্গিককে ধরা যাক। প্রাপ্তির বিচারে তা কি কম কিছু?

ওয়াংখেড়ে, চিন্নাস্বামীর মতো আজ থেকে ইডেন স্ট্যান্ডেরও নামকরণ হয়ে গেল। বঙ্গ ক্রিকেটের চার কৃতীর নামে। দু’জন ক্রিকেটার, দু’জন ক্রিকেট প্রশাসক। পঙ্কজ রায়-সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বিশ্বনাথ দত্ত-জগমোহন ডালমিয়া। কোনও স্ট্যান্ডের উদ্বোধন করলেন কপিলদেব নিখাঞ্জ। কোনওটার বা সুনীল মনোহর গাওস্কর। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিএবি-র যে প্রচেষ্টা বেশ ভাল লেগেছে বঙ্গ ক্রিকেটারকুলের। বাংলার দুই প্রাক্তন অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরুণ লাল দু’জনেই বললেন যে, সিএবি কাজটা দারুণ করেছে। খেলা দেখতে আসা অরুণ লাল বলছিলেন, “এটা অনেক জায়গাতেই আছে। সিএবিও করে ফেলল দেখে ভাল লাগছে।” সম্বরণ আবার বললেন, “খেলতাম যখন, ওয়াংখেড়েতে দেখতাম বিনু মাঁকড়ের নামে গেট। পলি উমরিগড়ের নামে গেট। গাওস্করের নামে স্ট্যান্ড। এ সব জিনিস ক্রিকেটারকে অমরত্ব দেয়।” মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান তা-ও দর্শকের তীব্র হর্ষধ্বনিতে আচ্ছন্ন হয়েছে। স্মারক, মানপত্র, উত্তরীয় প্রদানে এ দিন ধোনি বরণ করে নিল ইডেন। শুধু দু’একটা খুচখাচ বিভ্রান্তি। পঙ্কজ রায়ের নামে স্ট্যান্ড নামকরণের সময় তাঁর পুত্র প্রণব রায়কে কোথাও দেখা যায়নি। পরে প্রণব বললেন, সিএবি আমন্ত্রণ করেছিল। তিনিই আসতে পারেননি। প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ দত্তের নামে স্ট্যান্ড নামকরণের সময় তাঁর ছেলে সুব্রত দত্ত নাকি আবার বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শোনা গেল, মাঠে নাকি কেউ তাঁকে ডাকেনি। পরে জানা গেল, যেত না। আইসিসি নিয়মেই যেত না। আর একটা হল। তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে আর প্রাক্তন সিএবি যুগ্ম সচিব শরদিন্দু পালের মধ্যে ঝামেলা।

কিন্তু এ রকম দু’একটা টুকরো বিভ্রান্তি বোধহয় আজকের প্রেক্ষিতে বাদ দেওয়া যায়। আবহের বিচারে। ক্রিকেট যুদ্ধের বিচারে। উত্তেজনার বিচারে।

শুধু ক্লিন সুইপটাই যা হল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন