হার মানতে জানত না বন্ধু ‘এস এস’

খবরটা পেয়ে শোকের পাশাপাশি মনে পড়ছিল পুরনো সব দিনের কথা। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব সেই ছাত্রজীবন থেকে। আমি তখন আশুতোষ কলেজের ছাত্র। সেই সময় প্রথম আলাপ।

Advertisement

চুনী গোস্বামী

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০৩:৪২
Share:

প্রয়াত শ্যামসুন্দর মিত্র।ফাইল চিত্র

সকালে খবরের কাগজ পড়ে বিশ্বকাপে ভারতের ম্যাচ দেখার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। তখনই খবরটা পেলাম, আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু শ্যামসুন্দর মিত্র পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে।

Advertisement

খবরটা পেয়ে শোকের পাশাপাশি মনে পড়ছিল পুরনো সব দিনের কথা। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব সেই ছাত্রজীবন থেকে। আমি তখন আশুতোষ কলেজের ছাত্র। সেই সময় প্রথম আলাপ। কলেজের নেটে একদিন দেখলাম একটা রোগা চেহারার ছেলে সব বোলারকে শাসন করছে। আর সব শটই ধ্রুপদী। অনুশীলন শেষে এগিয়ে গিয়ে আলাপ করেছিলাম শ্যামসুন্দরের সঙ্গে। সেই থেকে বন্ধুত্ব শুরু। আমার মতোই মোহনবাগান অন্তপ্রাণ। তাই বন্ধুত্ব প্রথম দিন থেকেই জমজমাট। কলেজ থেকে বাংলা দলে এক সঙ্গেই খেলেছি। আর একটা ব্যাপার ছিল মজ্জাগত। তা হল প্রবল রসবোধ।

বাংলা ক্রিকেটে শ্যামসুন্দর পরিচিত ছিল ‘এস এস’ নামে। স্বাধীন ভারতে পঙ্কজ রায় থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত বাংলার সব তারকা ব্যাটসম্যানদের দেখেছি। কিন্তু সেরা পাঁচ বাছতে হলে শ্যামসুন্দরকেও রাখব। ওর মতো স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান বাংলা ক্রিকেটে খুব কম এসেছে। ক্রিকেটটা যেন কম্পিউটারের মতো ওর মস্তিষ্কে ঢুকে থাকত। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে একটা ঘটনা। বাংলা দলের এক ব্যাটসম্যান বার বার শর্ট বলে আউট হয়ে যাচ্ছিল। হুক বা পুলের সময়জ্ঞানে ভুল হচ্ছিল। এখানে সেই ব্যাটসম্যানের নামটা বলছি না। কিন্তু ও একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দু’দিন ওর সঙ্গে পড়ে থেকে শর্ট বলের দুর্বলতা কাটিয়ে দিয়েছিল। ক্রিকেটার চিনতে পারত দারুণ। ভারতীয় স্কুল ক্রিকেটে দারুণ খেলা সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে আগামী দিনে বাংলা ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ, সেটা বুঝতে পেরেই ওকে মোহনবাগানে নিজের উদ্যোগে এনে সই করিয়েছিল।

Advertisement

ষাটের দশকের মাঝামাঝি ও শেষ দিকে মোহনবাগান ও বাংলা ক্রিকেটে একজন স্তম্ভ বলা যায় এস এস। ফ্রন্টফুট ও ব্যাকফুট—দু’টোতেই ভাল খেলত। স্পিন বা পেস, কোনওটাতেই কাবু করা যেত না। লেগ সাইডে দারুণ পোক্ত। মিড-অন ও স্কোয়ার লেগ অঞ্চলের মাঝে ওর শটগুলো ভোলা যাবে না। কোনও পরিস্থিতিতেই হার মানতে জানত না আমার বন্ধু। চিরকালই বাংলার বিশ্বস্ত সৈনিক এস এস। তবে ওর একটা দুর্বল দিক ফিল্ডিংটা খুব ভাল ছিল না। তবে ব্যাটে সে সময় যে দাপট দেখিয়েছে তাতে অনায়াসে ভারতীয় ক্রিকেট দলে ঢুকে যেতে পারত। কিন্তু ওর দুর্ভাগ্য, ভারতের হয়ে খেলা হয়নি। কেন সে কথা না-ই বা বললাম।

বাংলার হয়ে বহু স্মরণীয় ইনিংস খেলেছে শ্যামসুন্দর। তবে তার মধ্যে সেরা ইডেনে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে বম্বের (তখন এই নামেই ডাকা হত, বর্তমানে মুম্বই) বিরুদ্ধে শতরান করে বাংলার হার বাঁচানো। যে ম্যাচে ওদের দ্বাদশ ব্যক্তি ছিল সুনীল গাওস্কর। যে ইনিংস সম্পর্কে পরবর্তীকালে গাওস্কর লিখেছিল, ‘‘ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ধৈর্য কাজে লাগিয়ে কী ভাবে বড় ইনিংস গড়তে হয়, তা দেখেছিলাম শ্যামসুন্দর মিত্রের ওই ইনিংসে। প্যাভিলিয়ন থেকে সে দিন চুপ করে শিক্ষার্থীর মতো ওই ইনিংসটা দেখে অনেক কিছু শিখেছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন