Football

লাল-হলুদের প্রথম জয়ে মন জিতে নিল ব্রাইট

ওড়িশার বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে কয়েক জন লাল-হলুদ সমর্থকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল।

Advertisement

শ্যাম থাপা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:১৫
Share:

উল্লাস: অভিষেক ম্যাচেই গোল। ব্রাইটকে (ডান দিক থেকে প্রথম) নিয়ে উৎসব সতীর্থদের। রবিবার। আইএসএল

আইএসএল

Advertisement

এসসি ইস্টবেঙ্গল ৩ ওড়িশা এফসি ১

Advertisement

নববর্ষে নবরূপে এসসি ইস্টবেঙ্গল। দীর্ঘ দিন পরে লাল-হলুদ জার্সির চেনা দাপট দেখে দারুণ আনন্দ হচ্ছে। আর প্রথম ম্যাচেই ব্রাইট এনোবাখারে যে অসাধারণ ফুটবল উপহার দিল, তাতে ওকে নিয়ে লাল-হলুদ সমর্থকেরা স্বপ্ন দেখতেই পারেন।

ওড়িশার বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে কয়েক জন লাল-হলুদ সমর্থকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ওঁরা প্রচণ্ড উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। আমার কিন্তু বার বারই মনে হচ্ছিল, ওড়িশা ম্যাচ থেকেই ঘুরে দাঁড়াবে অ্যান্টনি পিলকিংটনরা। কারণ, আইএসএলে কার্যত বিনা প্রস্তুতিতেই যাত্রা শুরু করেছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। তা ছাড়া দলগঠনও ঠিক মতো হয়নি। চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচের পরে দীর্ঘ বিরতি পাওয়ায় মনে হয়েছিল, এটাই সেরা সুযোগ নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে ছন্দে ফেরার। আমার অনুমান যে ভুল ছিল না, তা রবিবারই প্রমাণ করে দিলেন রবি ফাওলার।

গত কয়েক সপ্তাহে এসসি ইস্টবেঙ্গলের অন্দরমহলে প্রচুর পরিবর্তন হয়েছে। একাধিক ফুটবলারকে ছেড়ে দিয়েছেন ফাওলার। নিয়েছেন, ব্রাইট, রাজু গায়কোয়াড় ও অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়ের মতো নতুন মুখ। শুধু তাই নয়। অনুশীলন ম্যাচে নতুন ফুটবলারদের দেখে নেওয়ার সুযোগও পেয়েছিলেন লিভারপুল কিংবদন্তি। যা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক জন ফুটবলার অনুশীলনে যতই ভাল খেলুক, তার আসল পরীক্ষা ম্যাচেই। জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে জয় লাল-হলুদ শিবিরে হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছিল। রবিবার পিলকিংটনদের শরীরী ভাষা দেখেই মনে হচ্ছিল, ওরা অতীত ভুলে নতুন ভাবে শুরু করার শপথ নিয়ে মাঠে নেমেছে।

মনে পড়ে যাচ্ছিল আমার খেলোয়াড়জীবনের স্মৃতি। প্রচুর পরিশ্রম করেও গোল পাচ্ছিলাম না। এক দিন কোচ প্রদীপদা (পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়) আমাকে বললেন, ‘‘আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছো বলেই তুমি গোল পাচ্ছ না। কয়েক দিন ফুটবল থেকে দূরে থাকো। তার পরে মাঠে নেমে একা শুধু ফাঁকা গোলে শুধু শট মেরে যাও।’’ প্রদীপদার পরামর্শেই আমি ছন্দ ফিরে পেয়েছিলাম। আইএসএলে টানা সাত ম্যাচ জিততে না পারায় একই সমস্যা হচ্ছিল লাল-হলুদের ফুটবলারদেরও।

ওড়িশার বিরুদ্ধে ফাওলারের প্রথম একাদশ নির্বাচন নিয়ে অনেকেই হতাশ ছিলেন। রাজু দলে রয়েছে, অথচ ব্রাইট নেই! আমার মতে, ফাওলার ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। দলের প্রধান সমস্যা রক্ষণেই। সব চেয়ে আগে সেটা মেরামত করা জরুরি ছিল। দ্বিতীয়ত, পিলকিংটন, মাগোমা, রফিক ও মাঠি স্টেনম্যানের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। সেটা ভাঙা ঠিক হত না। তা ছাড়া ব্রাইট সদ্য যোগ দিয়েছে। দলের রণনীতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যও ওকে সময় দিতে হবে।

১২ মিনিটে পিলকিংটনই গোল করে এগিয়ে দেয় এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। রাজুর লম্বা থ্রো বিপন্মুক্ত করতে ব্যর্থ হয় ওড়িশার ডিফেন্ডারেরা। ঠান্ডা মাথায় হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেয় পিলকিংটন। ৩৯ মিনিটে অসাধারণ গোলে ২-০ করে মাগোমা। বল নিয়ে বক্সে ঢুকে বাঁ-পায়ের জোরালো শটে দূরূহ কোণ থেকে যে ভাবে বলটা গোলে রাখল, তা অনবদ্য। তবে আমি বেশি উচ্ছ্বসিত ব্রাইটকে নিয়ে।

৭৩ মিনিটে মাগোমার পরিবর্তে ২২ বছর বয়সি নতুন নাইজিরীয় স্ট্রাইকারকে নামান লাল-হলুদ কোচ। ব্রাইটের বল ধরা, জায়গা নেওয়া, ড্রিবলিং অনবদ্য। এ রকম এক জন স্ট্রাইকার থাকলে বিপক্ষের ডিফেন্ডারেরা কখনওই স্বস্তিতে থাকতে পারবে না। এত দিন লাল-হলুদ আক্রমণভাগে এই ব্যাপারটাই ছিল না। ৮৮ মিনিটে গোলটাও খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে করল ব্রাইট। ওড়িশার পেনাল্টি বক্সের ভিতর থেকে নেওয়া ওর শট প্রথমে আটকে দিয়েছিল গোলরক্ষক আর্শদীপ সিংহ। ফিরতি বল গোলে ঠেলে দেয় লাল-হলুদের নতুন নায়ক।

তবে প্রথম জয়ের উচ্ছ্বাসের মধ্যেও রক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাবে লাল-হলুদে। গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদার অন্তত ছ’টি নিশ্চিত গোল বাঁচায়। ম্যাচের একেবারে শেষ পর্বে পেনাল্টি বক্সে ওড়িশার দিয়েগো মউরিসিয়োর পা থেকে বল কাড়তে গিয়ে নিজের গোলেই বল ঢুকিয়ে দেয় অধিনায়ক ড্যানি ফক্স।

আমার বিশ্বাস, রক্ষণের সমস্যাও দ্রুত দূর করবেন ফাওলার।

এসসি ইস্টবেঙ্গল: দেবজিৎ মজুমদার, রাজু গায়কোয়াড় (অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়), স্কট নেভিল, ড্যানি ফক্স, বিকাশ জাইরু, মহম্মদ রফিক (ওয়াহেংবাম লুওয়াং), মাঠি স্টেনম্যান, মিলন সিংহ (হরমনপ্রীত সিংহ), টোম্বা সিংহ (সুরচন্দ্র সিংহ), জা মাগোমা (ব্রাইট এনোবাখারে) ও অ্যান্টনি পিলকিংটন।

ওড়িশা এফসি: আর্শদীপ সিংহ, শুভম ষড়ঙ্গী, স্টিভন টেলর, জ্যাকব ট্র্যাট, হেনড্রি অ্যান্টনি, গৌরব বোরা, বিনীত রাই (ড্যানিয়েল লালহিমপুইয়া), কোল আলেকজান্ডার, জেরি মাউইহিমথাঙ্গা, মাইকেল ওনুউ ও দিয়েগো মউরিসিয়ো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন