ব্যাট কেনার টাকাও ছিল না ছয় ছক্কার নায়কের

জীবনে যে কিছু একটা করে ফেলেছেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় বুঝতে পারছেন সাগর মিশ্র। আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত-অর্ধপরিচিতদের ফোন আসছে। মিডিয়ার বুম অপেক্ষা করছে তাঁর দু’টো মিনিটের।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২২
Share:

সোবার্স-যুবরাজের কীর্তি ছোঁয়ার পথে সাগর মিশ্র। ছবি: টুইটার।

জীবনে যে কিছু একটা করে ফেলেছেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় বুঝতে পারছেন সাগর মিশ্র। আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত-অর্ধপরিচিতদের ফোন আসছে। মিডিয়ার বুম অপেক্ষা করছে তাঁর দু’টো মিনিটের। নাম বললে কেউ চিনবে না। চিনতও না এত দিন কেউ। কিন্তু যদি বলা হয় এ ছেলে গ্যারি সোবার্স, রবি শাস্ত্রী থেকে যুবরাজ সিংহের কীর্তি ছুঁয়ে ফেলেছেন, তা হলে?

Advertisement

সাগর তো তাঁদেরই মতো ছ’বলে ছ’টা ছক্কা মারলেন!

মুম্বইয়ে টাইমস শিল্ডের ম্যাচ ছিল ওয়েস্টার্ন রেলওয়েজ এবং আরসিএফের মধ্যে। সেখানে বুধবার এমন কাণ্ড ঘটান রেলওয়েজের ২৩ বছরের অলরাউন্ডার। প্রতিপক্ষের অফস্পিনার তুষার কামারেকে ছ’বলে ছ’টা ছক্কা মেরে বসেন সাগর! যা নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে মুম্বইয়ের ক্রিকেটমহলে। শেষ পর্যন্ত ৪৬ বলে ৯১ রান করেন সাগর।

Advertisement

অথচ বছরখানেক আগে সাগরের কোনও ব্যাটই ছিল না খেলার। উলাসনগরে একটা ছোট মুদির দোকান আছে তাঁদের। যা নিয়ে যৌথ একটা পরিবার চালাতে হয়। ক্রিকেট ব্যাট, ক্রিকেট কিট সেই দুনিয়ায় নিছক বিলাসিতা মাত্র। ‘‘এটা আর এমন কী? আমি তো এক সময় ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কথাই ভেবেছিলাম। সংসারে এত টানাটানি যেখানে, ক্রিকেট সেখানে সম্ভব কী ভাবে?’’ মুম্বই থেকে ফোনে বলছিলেন সাগর। যাঁকে তীব্র কৃচ্ছসাধনকে জীবনযুদ্ধের সঙ্গী করতে হয়েছে ছোটবেলা থেকে। একটা সময় দুপুর-দুপুর স্কুল থেকে ফিরে আধঘণ্টার মধ্যে আবার বেরিয়ে পড়তে হত। বেঙ্গসরকর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ক্রিকেট ক্লাস নিতে হবে, তাই। রাস্তাও বড় কম নয়। উলাসপুর থেকে মুম্বইয়ের প্রাণকেন্দ্রে পৌঁছতে লেগে যায় ঘণ্টাদুয়েক। সাগর বলে দেন, ‘‘একটা জীবন বটে। সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রায় রাত ন’টা বাজত ফিরতে। বাড়িতে টাকার টানাটানি বলে রেলের ক্লাস ফোরের চাকরি নিয়েছি। তা-ও সেটা বডোদরায়। সেখান থেকে মুম্বই আসতে হয়, খেলতে। এত কিছু করেছি শুধু ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে।’’

সেখান থেকে ছ’বলে ছয় ছক্কা!

‘‘প্রথম তিনটে ছক্কা মারা পর্যন্ত কিছু মনে হয়নি। কিন্তু তার পর টিমমেটরা বাইরে থেকে চিৎকার করতে থাকল যে, যুবরাজের ছ’টা ছয় মারার রেকর্ড আছে। চেষ্টা করলে হয়ে যাবে। হয়ে গেল,’’ বলছিলেন সাগর। ছাত্রের রেকর্ড নিয়ে ওয়েস্টার্ন রেলওয়েজের কোচ দীনেশ লাড (যিনি রোহিত শর্মারও কোচ) আবার ফোনে জুড়ে দিলেন, ‘‘কেউ কিন্তু এটা বলছে না যে ওর মাঝে পেশিতে টান ধরে গিয়েছিল। ও সেটা নিয়ে ব্যাট করেছে। ব্যাকফুটে মিড অফ দিয়ে একটা ছক্কা মারল দেখার মতো। অথচ এক বছর আগে এই ছেলেটার একটা ব্যাট পর্যন্ত ছিল না খেলার। আমি ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।’’

এক বছর ব্যাট ছিল না। আজ আছে। এক বছর আগে প্রচার ছিল না। আজ আছে। সাগর কত দূর যাবেন শেষ পর্যন্ত বলা যায় না। কিন্তু কিছু না হলেও আমৃত্যু বলতে পারবেন, কোনও এক দিন সোবার্সকে তিনিও ছুঁয়ে ফেলেছিলেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন