প্রথম গোলের পর সনির উল্লাস।
বেঙ্গালুরু এফসি-১ (সুনীল)
মোহনবাগান-৪ (সনি-২, কাতসুমি, বিক্রমজিৎ)
মার্কিন মুলুকে প্রথম বার পা দেওয়ার পর নিউইয়র্কের শুল্ক দফতর খানাতল্লাশি করতে এলে অস্কার ওয়াইল্ড বলে বসেছিলেন, “আরে আমার মস্তিষ্কটা ছাড়া মূল্যবান কিছুই পাবেন না।”
সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরুকে প্রথম বার হারিয়ে উঠে মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেনও সে রকম জোশেই বলে বসলেন, “এক গোলে পিছিয়ে গিয়েও তাই ৪-১ জিতে ফিরলাম বিশ্বাসটা ছিল বলে। এর বেশি কিছু পাবেন না।”
ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগে চেতলাবাসী কোচ সনি-বোয়াদের ডার্বির ভুল শুধরে দিয়েছিলেন। রাত পেরোতে এমন কী পরশপাথরের অনুপ্রবেশ হল বাগান শিবিরে যে, সনি-বোয়ারা ঝকঝকে হয়ে উঠলেন? গলায় সিঁদুরের টিপ লাগিয়ে মাঠে আসা বাগান কোচ দেখাচ্ছেন সেই বিশ্বাসকেই।
কিন্তু ড্রেসিংরুম চুঁইয়ে বেরোচ্ছে ‘ভোকাল টনিক’-এর গল্পও। ফেড কাপে গত বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে ম্যাচ ড্র রেখে ফিরেছিল সনি-কাতসুমিরা। শুক্রবার বলবন্তদের মাঠে নামার আগে বাগান কোচ বলে বসেন, “ফেড কাপে যা করে দেখাতে পারনি আজ তা দেখিয়ে দাও চ্যাম্পিয়নদের।”
এতেই কি সনি নর্ডিদের হৃদয়ে সযত্নে লালিত গনগনে রাগটা বেরিয়ে এল? জোড়া গোল করে সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়ে মাঠ ছাড়ার সময় ম্যাচ সেরা সনি বলে গেলেন, “ডার্বিতে গোল পাইনি। স্ত্রী মার্লিন আর ভাই উড খুব হতাশ হয়ে বলেছিল বাগান সমর্থকদের অবস্থাটা ভেবে দেখ। কোচের পরামর্শ কাজে লাগিয়েই আজ সুফল পেলাম।”
যদিও বাগানকে সুফল দিয়েছে তাঁদের কোচের হোমওয়ার্ক। সঞ্জয় জানতেন, রবিন সিংহের উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে বেঙ্গালুরু ডিফেন্সিভ থার্ড থেকে জনসন-জোশুয়ারা লং বল ফেলবেন বাগান রক্ষণে। আর দুই উইং থেকে বিনীত আর থই সিংহরাও ভয়ঙ্কর সব ক্রস ভাসিয়ে দেবেন সুনীল-রবিনদের জন্য। ম্যাচের প্রথম কুড়ি মিনিট এই অস্ত্রেই বেলোদের নাস্তানাবুদ করছিল অ্যাশলে ওয়েস্টউডের ছেলেরা। এই সময়েই সুনীলের গোলে বেঙ্গালুরুর এগিয়ে যাওয়া। সঞ্জয় এটা বুঝেই বোয়াকে দিয়ে মার্কিং করালেন জোশুয়াকে। ফল, বলের রসদে টান পড়া শুরু সুনীলদের। চাপ কাটিয়ে সনি-কাতসুমিরা পাল্টা ছোবল মারতে শুরু করলেন বেঙ্গালুরু রক্ষণে। এতেই বোয়াদের প্রেসিং ফুটবলের সামনে খাবি খাওয়া শুরু বেঙ্গালুরুর। আর সেখান থেকেই সনির সমতায় ফেরানো।
দ্বিতীয়ার্ধে বিক্রিমজিৎরা লং বল বন্ধ করে বেশি পাস খেলতেই খেল খতম জনসনদের। জোশুয়াকে পালা করে ধরছিলেন বোয়া বা বলবন্তের এক জন। অপর জন তখন নেমে এসে দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন দুই ডিফেন্সিভ মিডিও বিক্রমজিৎ আর শেহনাজের সামনে। সুনীলদের রক্ষণে একে ওসানো ছিলেন না। সঙ্গে শন রুনি না থাকায় তাঁদের কোচও হঠাৎই রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বসলেন। সনিরা এ বার দুই উইং ধরে আক্রমণ শানাতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া শুরু বেঙ্গালুরুর। আর স্লুইস গেটের মতো গোলের দরজা খুলে ব্যবধান বাড়িয়ে ৪-১ করে নিলেন সনি, কাতসুমি, বিক্রমজিতরা।
৫ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে গেল বাগান। তার চেয়েও আশার আলো, ধীরে ধীরে নিজের চেনা ছন্দে ফিরছেন সনি। স্কিমার হিসেবে পিয়ের বোয়াও বেশ ভাল। বাড়ি ফেরার আগে বাগানের মার্কি ফুটবলার আত্মবিশ্বাসী মেজাজে বলে গেলেন, “আরে ৩১ বছর বয়সে এসে আমি জানি কখন কী করতে হয়।” ম্যাচ দেখতে আসা চিমা, ডগলাসরাও বলছিলেন, “সনি-বোয়া যত ভয়ঙ্কর হবে তত বিপদে পড়বে প্রতিপক্ষ।”
আলোর মাঝে অন্ধকার যে নেই তা নয়। যেমন কাতসুমির গ্যালারি শো আর নেগেটিভ ড্রিবলিংয়ের প্রবণতা। আর প্রীতম, ধনচন্দ্রদের ক্লিশে ফর্ম। এ দিন সুনীলের গোলের ক্ষেত্রে এই দু’জনকেই দায়ী করা যায়। বাগানের পরবর্তী দুই ম্যাচ লাজং আর ডেম্পোর বিরুদ্ধে। কোচের অঙ্ক অনুযায়ী, প্রথম পর্বে লিগের শীর্ষে থাকতে হলে সনিদের মতোই জলদি নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে ফলতে হবে এই তিন জনকে।
মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, কিংশুক, বেলো, ধনচন্দ্র, বিক্রমজিৎ (সৌভিক), শেহনাজ, কাতসুমি (মণীশ), বোয়া, সনি, বলবন্ত (সাবিত)।
ছবি: উৎপল সরকার।