বিশ্ব মঞ্চে জোড়া সোনা সৌম্যজিতের

খেলোয়াড়রা সাধারণত যে ঝুঁকি নিতে ভয় পান সেটা নিয়েছিলেন অবলীলায়। পকেটের পয়সা খরচ করে জার্মানির সেরা অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং নিয়েছিলেন। তার সুফল পেলেন শিলিগুড়ির সৌম্যজিৎ। তাঁর মুকুটে উঠল আন্তর্জাতিক টেবল টেনিস প্রতিযোগিতার জোড়া সোনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০৩:০৫
Share:

সাফল্য: পদক জিতে উচ্ছ্বাস সৌম্যজিতের। —নিজস্ব চিত্র।

খেলোয়াড়রা সাধারণত যে ঝুঁকি নিতে ভয় পান সেটা নিয়েছিলেন অবলীলায়। পকেটের পয়সা খরচ করে জার্মানির সেরা অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং নিয়েছিলেন। তার সুফল পেলেন শিলিগুড়ির সৌম্যজিৎ। তাঁর মুকুটে উঠল আন্তর্জাতিক টেবল টেনিস প্রতিযোগিতার জোড়া সোনা।

Advertisement

এ দেশের প্রথম টিটি খেলোয়াড় হিসাবে আইটিটিএফ চ্যালেঞ্জার্সে ইতিহাস তৈরির পর চিলে থেকে ফোনে সৌম্যজিৎ বলে দিলেন, ‘‘আমার স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক পদক জয়। সেই স্বপ্ন সফল হল। তার উপর এই টুনার্মেন্টে আজ পর্যন্ত ভারতের কেউ দু’টো বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বলে আরও দারুণ লাগছে। আমার লক্ষ্য এ বার অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ গেমসের পদক। যেটা এ দেশের যে কোনও টিটি খোলোয়াড়ের লক্ষ্য থাকে।’’ সৌম্যজিৎ হলেন শরথ কমল এবং জি সত্যায়নের পর ভারতের তিন নম্বর খেলোয়াড় যিনি এই সিরিজের কোনও একটিতে চ্যাম্পিয়ন হলেন। তবে তামিলনাড়ুর দুই টিটি তারকা জিতেছিলেন একটি করে সোনা। সৌম্যজিৎ তাদের টপকে গেলেন রবিবার রাতে।

আইটিটিএফ চ্যালেঞ্জ সিরিজ বিশ্বের টিটি খেলোয়াড়দের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে ভাল ফল করলে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের পয়েন্ট বাড়ে। সিরিজে মোট আটটি টুনার্মেন্ট হয় এক বছরে। সৌম্যজিৎ সেই সিরিজেরই একটিতে নেমেছিলেন চিলের সান্তিয়াগোতে। বিশ্বের বারোটি দেশ যোগ দিয়েছিল। সেখানেই রবিবার রাতে সিঙ্গলস এবং ডাবলসে সোনা পেলেন শিলিগুড়ির হাকিম পাড়ার বাবান। ব্যক্তিগত বিভাগের ফাইনালে ভারতেরই অ্যান্টনি অমলরাজকে হারালেন তিনি। ৪-২ সেটে। আর ডাবলসে সেই অমলরাজকে নিয়েই ৩-১ গেমে হারালেন বুলগেরিয়ার ফিলিপ ফ্লোরিতজ আর রোমানিয়ার সকস হুনো সুকস জুটিকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: পাঁচ জয়ের ছন্দ নিয়ে ঝাঁপাতে চান স্মিথ

চিলিতে নামার আগে সৌম্যজিৎ নেমেছিলেন চিনের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। সেখানেই কোমরে চোট পান। ফিরে এসেছিলেন হায়দরাবাদে। ফিটনেস ট্রেনার চিন্ময় রায়ের কাছে দশ দিন ফিজিক্যাল ট্রেনিং নেওয়ার পর নামেন চিলেতে। চিলে থেকে ব্রাজিলের সাওপাওলো যাওয়ার আগে ফোনে ভারতীয় টিটি-র অন্যতম সফল মুখ বলছিলেন, ‘‘সবথেকে কমবয়সি টিটি খেলোয়াড় হিসাবে রিও অলিম্পিক্সে সুযোগ পেয়েছিলাম। সফল হতে পারিনি। চ্যালেঞ্জার্স সিরিজেও নেমেছিলাম আগে। কিন্তু এ বার কেন জানি না নিশ্চিত ছিলাম একটা পদক পাব। তবে জোড়া সোনা পাব ভাবিনি।’’

কেন এটা ভেবেছিলেন দেশের দু’নম্বর টেনিস তারকা? তেইশ বছরের সৌম্যজিতের মন্তব্য, ‘‘এক বছর আমি জার্মানিতে আছি। পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে অক্সান হাউজেন অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতে। যেখানে সুযোগ পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়েরা ট্রেনিং নেয় অ্যাকাডেমিতে। তাদের সঙ্গে খেলে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল পারব।’’

আজ বুধবার ব্রাজিল ওপেনে নামছেন সৌম্যজিৎ। সেটাও আইটিটিএফ সিরিজের টুনার্মেন্ট। এখানে খেলেই সৌম্যজিৎ ফিরে যাবেন জার্মানিতে। সেখানেই এ বার হবে টিটি-র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। ডুসেলডর্ফের জন্য যে ভারতীয় দল বাছা হয়েছে তাতে সুযোগ পেয়েছেন সৌম্যজিৎ। সৌম্যজিতের মেন্টর আর প্রাক্তন তারকা সৌম্যদীপ রায় হায়দরাবাদ থেকে ফোনে বললেন, ‘‘সৌম্যজিৎ যা করেছে সেটা ভারতীয় টিটি-তে বিশাল ব্যাপার। কলকাতায় থাকলে নিয়মিত আমার কাছে অনুশীলন করে। তাই এই সাফল্য আরও ভাল লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন