আমার জীবন, আমাদের টিমের সব মেয়ের জীবনই গত কয়েক মাসে বেশ খানিকটা বদলে গিয়েছে। প্রচারের আলো একটু বেশি মাত্রাতেই এসে পড়ছে এখন। সেই প্রচারের মধ্যেই ফের চলে এল আর একটা স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতার যে স্বাদটা এই মুহূর্তে আমরা টের পাচ্ছি, তা কত দিন থাকবে, জানি না। কিন্তু স্বাধীন চিন্তার যে স্বভাবটা মজ্জার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছি, সেটা কখনও নষ্ট হতে দিতে চাই না।
এ বারের স্বাধীনতা দিবসটা আমার কাছে যেন একটু বেশিই তাৎপর্যপূর্ণ। অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে গত এক বছরে। ভাল-মন্দ মিশিয়ে অনেক কিছু। ক্রিকেটের বাইরের যে দিকগুলোকে এক জন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি কখনওই অস্বীকার করতে পারি না। আসলে ভারত এমনই একটা দেশ, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বছরের পর বছর পাশাপাশি বাস করছেন। সেই ঐতিহ্যটা বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলেরই। আর দায়িত্ব হল মেয়েদের সম্মানের বিষয়টাকে নিশ্চিত করা। খেলার সূত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়েছি। সেখানে মূলত খেলাধুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু যেই খেলার বাইরের বিষয়ে কথা শুরু হয়েছে, তখনই অনেকে বলেছেন, ‘তোমাদের দেশে তো পুরুষতন্ত্র চলে। মেয়েদের দাবিয়ে রাখা হয়।’ প্রাণপণ বোঝানোর চেষ্টা করেছি, এটাই আমার দেশের একমাত্র ছবি নয়। এর বাইরেও অনেক কিছু রয়েছে, যা মেয়েদের উজ্জ্বল উপস্থিতির কথাই তুলে ধরে। কিন্তু সেগুলো বহু সময়ে চাপা পড়ে যায় কিছু জঘন্য ঘটনার কাছে। যেমন, দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ড।
আরও পড়ুন:ইউএস ওপেনের আগেই ধাক্কা খেলেন ফেডেরার
এক জন মেয়ে হয়ে আমি স্বাধীন ভাবে বহু জায়গায় ঘুরে বেড়াই। কিন্তু সব মেয়েরা কি সেটা পারছেন? আমি মনে করি, নির্ভয়া-কাণ্ড বা তার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের বেঁচে থাকারই কোনও অধিকার নেই।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি সব ব্যাপারে নারী-পুরুষদের আলাদা করার ব্যাপারটা ঘোরতর অপছন্দ করি। মেয়েদের ক্রিকেট-মেয়েদের ক্রিকেট বলে যখন আমাদের খেলাটাকে আলাদা করা হয়, তখন রাগ হয়। মনে হয় প্রশ্ন করি, খেলা তো আসলে খেলাই! সেখানে ছেলে-মেয়ে আলাদা করা হচ্ছে কেন? আমরা আলাদা হতে চাই না। মেয়ে বলে বাড়তি সহানুভূতিও চাই না। মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বা ওই ধরনের পরীক্ষার ফল বেরোলে যখন কাউকে ‘মেয়েদের মধ্যে প্রথম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তখনও ওই রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। যখন ‘নারী দিবস’ পালিত হয়, তখনও মনে হয়, আলাদা করে এই একটা দিন পালনের তাৎপর্য কোথায়?
ধর্ম হোক, জাত হোক, লিঙ্গ হোক, এই ভাগাভাগির পাঁচিলটা দূর করা জরুরি। আমার দেশে সম্পদ তো কিছু কম নেই। তাই সামান্য বিচ্যুতিও কষ্ট দেয়। স্বাধীনতা দিবসে তাই সব বিচ্যুতি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার শপথ নেওয়াটাই জরুরি বলে মনে করছি।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)