রাত তখন পৌনে বারোটা। কলকাতার মানুষের হৃদয় জিততে ইডেনে নেমে পড়লেন তিনি। একটু আগেই তাঁর নাইটরা হারিয়েছেন বিরাট কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে। ইডেনের মানুষ গলা ফাটিয়েছেন দীনেশ কার্তিকদের জন্য। তাঁদের ধন্যবাদ দিতেই ম্যাচের পরে পুরো ইডেন ঘুরলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক। ইডেনের গ্যালারিও তাঁকে সামনে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। কেকেআর-এর জয়ের সঙ্গে এ যেন বাড়তি প্রাপ্তি তাদের।
রবিবার ইডেনে লড়াইটা শুধু যে কেকেআর বনাম আরসিবি ছিল, তা নয়। অন্য একটা দ্বৈরথও ছিল। বিরাট কোহালি বনাম শাহরুখ খান। জননপ্রিয়তায় কে এগিয়ে, তা নিয়ে তর্ক হতেই পারে। কিন্তু রবিবার ইডেনের হৃদয় যে ভাবে জিতে নিলেন শাহরুখ, বিরাট তা পারলেন কই?
প্রথম উইকেটটা পড়ার অপেক্ষাতেইই যেন ছিল ইডেন। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই সেই সাধ পূর্ণ হল। কুইন্টন ডি’কক বিনয় কুমারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যেতেই দ্বিগুণ খুশিতে নেচে উঠল ইডেনের ভরা গ্যালারি।
একে তো উইকেট তোলার আনন্দ। তার উপর বিরাট কোহালির আগমনের উচ্ছ্বাস। তিনি নামতেই গর্জে উঠল ইডেন গার্ডেন্স। ওটা আসলে ভারত অধিনায়ককে অভিবাদন জানানো।
ক্লাব হাউজের ডান দিকে ‘বি’ ব্লকে কেকেআরের কর্পোরেট বক্সের সামনের গ্যালারিতে তখন হাজির নাইটদের ‘বাদশা’ শাহরুখ খান। ম্যাচ শুরুর আধ ঘণ্টা আগেই তিনি এ দিন ঢুকে পড়েন ইডেনে। অন্যান্য বারের মতো অপেক্ষার প্রহর গোনাননি সকলকে। শোনা গেল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাকি আসার কথা ছিল ম্যাচের শুরুতে। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য রবিবার আগেভাগেই ঢুকে পড়েন ‘এসআরকে’।
পুত্র আব্রাম, কন্যা সুহানাকে নিয়ে এ দিন কেকেআর-এর আইপিএল ১১ অভিযানের সূচনা দেখতে এসেছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক।
তিনি ছাড়াও যে এ দিন ইডেনে আরও এক মহাতারকা মজুত ছিলেন, তা শাহরুখ টের পেয়ে গেলেন দ্বিতীয় ওভারেই। কোহালি-র মাঠে নামার সময় ইডেনের গর্জন শুনে অবাক ‘বাজিগর’। পিছন দিকে তাকিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ইডেনের চিৎকার শুনেই ঘুরে তাকালেন মাঠের দিকে। বুঝলেন, তিনি একা নন, তারকার ছটা ছড়াতে ইডেনে এসেছেন আর একজনও। তিনি বিরাট কোহালি।
বিরাট ক্রিজে আসতেই কুলদীপ যাদবকে বল করতে ডাকলেন কেকেআর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। ব্যাট হাতে ক্রিজে যখন ‘ভিকে’, স্টাম্পের পিছন থেকে তখন ‘ডিকে’ তাকিয়ে তাঁর দলের সেরা বোলিং অস্ত্রের দিকে। আগের সন্ধ্যায় ইডেনে দেখা দুই তারকার বন্ধুত্বের সম্পর্কের ছবি পরের দিন তাঁরা মাঠে নামতেই উল্টে গেল।
বিরাটের ব্যাট যাতে বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠতে না পারে, তার ব্যবস্থা করে ফেললেন কুলদীপ, পীযূষ চাওলা ও সুনীল নারাইনরা। চাওলার একটা অফস্টাম্পের বাইরের বলে তো পরাস্তও হন বিরাট। উল্টোদিক থেকে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম চার-ছক্কা হাঁকালেও কোহালির হাত খুলে মারার দৃশ্য এ দিন আর দেখা হল না। তাই হতাশ ইডেন।
ইনিংসের একমাত্র বাউন্ডারিটা মারতেই নিয়ে নেন ২৫ বল। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, এ বি ডিভিলিয়ার্সরা ক্রিজে এসে রণংদেহি মেজাজে শুরু করলেও বিরাট কোহালি তখনও আটক। চাওলাকে একবার মিড উইকেটের উপর দিয়ে সোজা গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন বটে, তবে সেটাই একমাত্র ছয় তাঁর। ৩৩ বলে ৩১। স্ট্রাইক রেট একশোও নয়। এই বিরাটকে দেখতে তো পাগল হয়নি ইডেন। এই বিরাটকে দেখার জন্য টিকিটের হাহাকার হয়নি কেকেআর-এর শহরে।
নীতীশ রানার ইয়র্কার যখন বিরাটের ব্যাটের নীচ দিয়ে গলে গিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেয়, তখন ইডেন গ্যালারিতে উচ্ছ্বাসের চেয়ে দীর্ঘশ্বাসই শোনা যায় বেশি।
বিরাট-আউটে গ্যালারি হতাশ হলেও শাহরুখ-শিবিরে দেখা যায় উল্টো ছবি। ওই কেকেআর-এর কর্পোরেট বক্সের সামনের বারান্দায়। বিরাট কোহালির স্টাম্প ছিটকে যেতেই যেখানে উচ্ছ্বাসের বন্যা। কেকেআর-এর এক ঝাঁক কর্মী-কর্তার উল্লাসের মধ্যেও অবশ্য উচ্ছ্বাসিত নন নাইটদের রাজা শাহরুখ।
মেয়ে সুহানার হাত থেকে কেকেআরের একটা পতাকা নিয়ে দু-একবার নাড়েন শুধু। এ ছাড়া আর কোনও উচ্ছ্বাস ছিল না তাঁর মধ্যে। এমনকী দল জেতার পরেও লাফানো বা ঝাঁপানো নয়, সবাইকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালেন শুধু। তার পরেই ওই মাঠ প্রদক্ষিণ।