হায়দরাবাদের দুরন্ত বোলিং সামলাতে পারল না কলকাতা

আইপিএলের প্রথম সপ্তাহ শেষ হওয়ার পরে যদি কোনও দলের খেলা আমার নজর কেড়ে থাকে, তা হল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দলটার ব্যাটিং ও বোলিং ভারসাম্য যেমন, তেমনই সমীহ করার মতো ফিল্ডিং।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:১১
Share:

দুরন্ত: পিছনে শরীর ছুড়ে আন্দ্রে রাসেলের ক্যাচ ধরছেন মণীশ পাণ্ডে। শনিবার ইডেনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বাংলা বছরের শেষ রাতটা ভাল গেল না কলকাতা নাইট রাইডার্সের। যে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ আজ পর্যন্ত কলকাতা থেকে জিতে ফিরতে পারেনি। তারাই এ বার কেকেআরকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে ইডেন ছাড়ল। তাও এক ওভার বাকি থাকতে।

Advertisement

আইপিএলের প্রথম সপ্তাহ শেষ হওয়ার পরে যদি কোনও দলের খেলা আমার নজর কেড়ে থাকে, তা হল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দলটার ব্যাটিং ও বোলিং ভারসাম্য যেমন, তেমনই সমীহ করার মতো ফিল্ডিং। ব্যাটে কেন উইলিয়ামসন, শিখর ধওয়ন, ঋদ্ধিমান সাহা, মণীশ পাণ্ডে, শাকিব আল হাসান, ইউসুফ পাঠান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে কোনও দলের ত্রাস।

ঠিক তেমনই ওদের পাঁচ বোলার ভুবনেশ্বর কুমার, বিলি স্ট্যানলেক, সিদ্ধার্থ কল, রশিদ খান এবং শাকিব। যাঁরা বিপক্ষের পাওয়ার প্লে, ইনিংসের মাঝে বা শেষের দিক—যে কোনও পরিস্থিতিতে বল হাতে কামাল করে দিতে পারেন। ভুবনেশ্বরের ‘নাক্‌ল বল’, স্ট্যানলেকের গতি, সিদ্ধার্থের মোক্ষম সময়ে ইয়র্কার দিয়ে উইকেট তুলে নেওয়া, রশিদের ‘রহস্য স্পিন’। সঙ্গে শাকিবের মিডল অর্ডারে এসে বিপক্ষের রান তোলার গতি থমকে দেওয়ার কৌশল। ফলে ষষ্ঠ বোলার ওদের লাগছেই না। এই দুরন্ত বোলিং শক্তির জন্যই সানরাইজার্স গত দুই ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালস এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে সমস্যা হয়নি।

Advertisement

শিকার: সুনীল নারাইনের বলে আউট ঋদ্ধিমান সাহা। —নিজস্ব চিত্র

শনিবার ইডেনেও তাই হতে দেখলাম। হায়দরাবাদের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ক্রিস লিন (৩৪ বলে ৪৯) ছাড়া কেউ লড়তে পারলেন না। অন্য দিকে, আঁটসাঁট বোলিং করে কেকেআর ব্যাটিংকে দাঁত ফোঁটাতে দিল না কেন উইলিয়ামসনের দল। বিশেষ করে বল হাতে ভুবি (৩-২৬), স্ট্যানলেক (২-২১) আর শাকিব (২-২১) অনবদ্য।

হায়দরাবাদ বনাম কলকাতা ম্যাচ দেখতে মুখিয়ে ছিলাম দু’টো কারণে। এক, বিপক্ষের মণীশ পাণ্ডে, ইউসুফ পাঠান ও শাকিব ছিলেন এক সময় কেকেআর মিডল অর্ডারের মেরুদণ্ড। এ বার এই তিন ক্রিকেটারই খেলছেন হায়দরাবাদের হয়ে। দুই, হায়দরাবাদ বোলিংকে দুরমুশ করার কী পরিকল্পনা নেয় কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট।

অবাক হয়ে গেলাম ওপেনার সুনীল নারাইনকে না দেখতে পেয়ে। কোন রণনীতিতে এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারকে মিডল অর্ডারে ঠেলে দিয়েছিলেন কেকেআর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক তা বুঝতে পারিনি। হতে পারে ওপেনার নারাইনের দাপট স্পিনারদের বিরুদ্ধেই বেশি। এখানে ওকে খেলতে হতো ভুবনেশ্বর এবং স্ট্যানলেকের মতো দুই দুর্দান্ত পেসারকে। কিন্তু কেকেআর টিম পরিচালকরা কেন এই ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন না, যে তাঁদের অতীতের সেই মিডল অর্ডার নেই। মণীশ, ইউসুফ, শাকিব, সূর্যকুমার যাদবদের পরিবর্ত এই কেকেআর এখনও পায়নি। সেখানে একমাত্র ভরসা আন্দ্রে রাসেল। ফলে রবিন উথাপ্পাকে তিন নম্বরে নিয়ে এসে ওপেন করতে পাঠানো উচিত ছিল নারাইনকে।

যদি শুরুতে নারাইন চালিয়ে কিছু রান করতেন তা হলে ভুবি, রশিদদের ছন্দ নষ্ট হতে পারত। যদি রান নাও পেতেন, তা হলেও কেকেআরের অসুবিধা হত না। কারণ, নতুন বল প্রথম দিকে কয়েক ওভার নড়াচড়া বন্ধ করলেই উথাপ্পা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। আমার মতে, কেকেআরের এই ভুল রণনীতিতেই পাওয়ার প্লের সময় ১৫-২০ রান কম হয়ে গেল। উথাপ্পার (৩) উইকেট হারিয়ে প্রথম ছয় ওভারে কলকাতার রান ছিল ৪৯-১। নির্ধারিত ২০ ওভারে কেকেআর ১৩৮-৮ শেষ করে। আরও কুড়ি রান দরকার ছিল ওদের। উইলিয়ামসনদের যে ব্যাটিং শক্তি তাতে এই রান যথেষ্ট ছিল না।

কেকেআর অধিনায়ক এর পরেও ভুল করলেন। শিবম মাভি ১৪০ কিমির বেশি গতিতে বল করেন। ওঁকে শুরুতেই বল করিয়ে নেওয়ার দরকার ছিল। এতে ওঁর আত্মবিশ্বাস বাড়ত। কিন্তু শিবমকে বল করতে ডাকা হল ১৫ তম ওভারে। দীনেশ কার্তিক হয়তো ভেবেছিলেন এক জন লেগস্পিনার, এক জন চায়নাম্যান এবং এক জন রহস্য স্পিনারকে দিয়ে ১২ ওভার বল করিয়ে কামাল করবেন। তা কিছুটা কাজে লেগেছিল। কিন্তু ওই পরিকল্পনায় পুরোপুরি সফল হতে গেলে কেকেআরের স্কোরবোর্ডে দরকার ছিল আরও ১৫-২০ রান। তা আর
হল কোথায়?

স্কোরকার্ড

কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৩৮-৮ (২০)

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৩৯-৫ (১৯)

কলকাতা নাইট রাইডার্স

রবিন উথাপ্পা ক ঋদ্ধি বো ভুবনেশ্বর ৩

ক্রিস লিন ক ও বো শাকিব ৪৯

নীতীশ রানা ক মণীশ বো স্ট্যানলেক ১৮

সুনীল নারাইন ক কেন বো শাকিব ৯

দীনেশ কার্তিক ক ঋদ্ধি বো ভুবনেশ্বর ২৯

আন্দ্রে রাসেল ক মণীশ বো স্ট্যানলেক ৯

শুভমান গিল ক শাকিব বো ভুবনেশ্বর ৩

শিবম মাভি ক ভুবনেশ্বর বো সিদ্ধার্থ ৭

মিচেল জনসন ন.আ. ৪

অতিরিক্ত

মোট ১৩৮-৮ (২০)

পতন: ১৬-১ (উথাপ্পা, ২.৪), ৫৫-২ (নীতীশ, ৭.৪), ৭৯-৩ (নারাইন, ১০.৪), ৮৭-৪ (লিন, ১২.২), ৯৬-৫ (রাসেল, ১৩.২), ১১২-৬ (শুভমান, ১৬.৪), ১২৯-৭ (কার্তিক, ১৮.৩), ১৩৮-৮ (মাভি, ১৯.৬)।

বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ৪-০-২৬-৩, বিলি স্ট্যানলেক ৪-০-২১-২, সিদ্ধার্থ কল ৪-০-৩৭-১ রশিদ খান ৪-০-৩১-০, শাকিব আল হাসান ৪-০-২১-২।

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ

ঋদ্ধিমান সাহা ক কার্তিক বো নারাইন ২৪

শিখর ধওয়ন বো নারাইন ৭

উইলিয়ামসন ক রাসেল বো জনসন ৫০

মণীশ এলবিডব্লিউ বো কুলদীপ ৪

শাকিব আল হাসান বো পীযূষ ২৭

দীপক হুডা ন.আ. ৫

ইউসুফ পাঠান ন.আ. ১৭

অতিরিক্ত

মোট ১৩৯-৫ (১৯)

পতন: ৩২-১ (ঋদ্ধিমান, ৩.১), ৪৬-২ (শিখর, ৫.১), ৫৫-৩ (মণীশ, ৮.৪), ১১৪-৪ (শাকিব, ১৫.৫)।

বোলিং: মিচেল জনসন ৩-০-৩০-১ আন্দ্রে রাসেল ৩-০-৩৯-০, সুনীল নারাইন ৪-০-১৭-২, পীযূষ চাওলা ৪-০-২০-১, কুলদীপ যাদব ৪-০-২৩-১, শিবম মাভি ১-০-১০-০।

৫ উইকেটে জয়ী হায়দরাবাদ

ম্যাচের সেরা বিলি স্ট্যানলেক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন