বিদায়-ঘণ্টাতেও শ্রীনি বিদায় নিতে চাইছেন না

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের বোর্ড প্রধান হিসেবে শেষ ঘণ্টা কি তা হলে বেজে গেল? আইপিএল মহাকর্তা সুন্দর রামনের অপসারণ কি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা? তিন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নাম যদি আগামী কয়েক দিনে জড়িয়ে যায়, তাঁকে কি নৈতিকতার প্রশ্নে বিশ্বকাপ অধিনায়ক বাছা হবে? ভারতীয় ক্রিকেটকে এমনই একরাশ লাভাস্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে শুক্রবার মুদগল কমিশনের রিপোর্টের কিছুটা উদ্ঘাটিত হল। আংশিক উদ্ঘাটনেই ক্রিকেট-পাগল দেশে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী এমন রব উঠেছে যে, কেউ ভেবে পাচ্ছে না পরের অঙ্কে কী থাকবে?

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৬
Share:

তোপের মুখে যাঁরা। শ্রীনিবাসন-মইয়াপ্পন-কুন্দ্রা-সুন্দর রামন।

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের বোর্ড প্রধান হিসেবে শেষ ঘণ্টা কি তা হলে বেজে গেল?

Advertisement

আইপিএল মহাকর্তা সুন্দর রামনের অপসারণ কি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা?

তিন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নাম যদি আগামী কয়েক দিনে জড়িয়ে যায়, তাঁকে কি নৈতিকতার প্রশ্নে বিশ্বকাপ অধিনায়ক বাছা হবে?

Advertisement

ভারতীয় ক্রিকেটকে এমনই একরাশ লাভাস্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে শুক্রবার মুদগল কমিশনের রিপোর্টের কিছুটা উদ্ঘাটিত হল। আংশিক উদ্ঘাটনেই ক্রিকেট-পাগল দেশে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী এমন রব উঠেছে যে, কেউ ভেবে পাচ্ছে না পরের অঙ্কে কী থাকবে?

কাগজে-কলমে পরের অঙ্ক এই সোমবারের পরের সোমবার সুপ্রিম কোর্টে। যে দিন দু’পক্ষের আইনজীবী রিপোর্ট পড়ার পর আবার তাঁদের বক্তব্য পেশ করবেন। কিন্তু কাগজ-কলমের নেপথ্য অঙ্ক শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ২০ নভেম্বর বোর্ডের নির্বাচন হবে কি না?

দুপুর-দুপুর সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ বেরিয়ে যাওয়ার পর মিডিয়া এবং ক্রিকেট-প্রশাসনে খবর ছড়িয়ে যায়, বোর্ড নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাতে মুম্বইয়ে যোগাযোগ করে জানা গেল, টিভি চ্যানেলে দেখাতে থাকা খবরের পুরোপুরি সত্যতা নেই। এক মাস পিছনোর কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সোমবার।

রিপ্লের ‘বিলিভ ইট অর নট’ সিরিজের মতোই অত্যাশ্চর্য হল, চার অভিযুক্তের এক জন হিসেবে শ্রীনিবাসনের নাম প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার পরেও বোর্ড সদস্যরা এখনও তাঁকেই সমর্থন করছেন। এঁরা পর্যবেক্ষণ শোনার পর ধরে নিয়েছিলেন যে, তাঁদের ‘বস’কে আর রাখা গেল না। কিন্তু রাতের দিকে একটা মরিয়া চেষ্টা করছেন। ২০ নভেম্বরই সভা ডেকে যদি শ্রীনিকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায়। রাতের দিকে এক সদস্য বলছিলেন, “সর্বোচ্চ আদালত কিন্তু সরাসরি বলেনি যে, তুমি দাঁড়াতে পারবে না। এ সব ক্ষেত্রে সরাসরি নির্দেশ থাকে। যেমন আগের বার আদালত বলেছিল, তদন্তের স্বার্থে বোর্ডের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। এ বার যখন কিছুই বলেনি, তা হলে শ্রীনির নির্বাচনে দাঁড়াতে অসুবিধে কোথায়?”

শ্রীনি-শিবির তাই নির্বাচন হবে কি হবে না, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টা আইনজীবীদের মতামত শুনে তার পর সোমবার বিকেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শ্রীনি শিবির চাইছে, দেরি না করে তাঁকে নির্বাচনে দাঁড় করাতে।

বিরোধী শিবির চাইছে, তাঁকে সম্পূর্ণ নির্বাচনচ্যুত করতে। শশাঙ্ক মনোহর থেকে ললিত মোদী সবাই আওয়াজ তুলেছেন, তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে নাম এসে গিয়েছে এত বড় কলঙ্কের পর। এখুনি গদি ছাড়ো। ললিত মোদী একধাপ এগিয়ে বলেছেন, শ্রীনি-সহ এখনই সবাইকে জেলে পোরো! তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে বোর্ডের অভ্যন্তরেও। শ্রীনি বিরোধী হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে পারেন, এমন তিনটে নাম ভেসে উঠেছে। রাজীব শুক্ল। জগমোহন ডালমিয়া। শরদ পওয়ার।

এর মধ্যে প্রথম ও শেষ জন সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী। রাজীব ইতিমধ্যেই জেটলির সঙ্গে একপ্রস্ত বৈঠকও করেছেন। পওয়ার যেমন বিজেপি ভোটের জন্য দেখা করেছেন অমিত শাহ-র সঙ্গে। শ্রীনির বোর্ডে বিজেপির রমরমা, ভারতীয় দলে ধোনির অবস্থানের মতো। মোট একত্রিশ ভোটের মধ্যে এগারো ভোট বিজেপির। তারা যে দিকে, সরকার সে দিকে। জেটলি এত দিন শ্রীনিকে নিঃশর্ত সমর্থন করে এসেছেন বলে কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার মতো শ্রীনি টিকে গিয়েছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মনে করা হচ্ছে, জেটলি কিছুতেই আর শ্রীনিকে সমর্থন জানাতে পারবেন না।

সর্বোচ্চ আদালত চার জনের মধ্যে তাঁর নাম বলে দেওয়ার পর এখন ইস্যুটা সরাসরি দাঁড়িয়ে গিয়েছে দুর্নীতির। সত্যি হোক বা না হোক আমজনতা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, দুর্নীতিতে শ্রীনির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তা রয়েছে। রিপোর্টেও শ্রীনির বিরুদ্ধে গড়াপেটার অভিযোগ নেই, কিন্তু বলা হয়েছে তিনি চোখের সামনে নানা দুর্নীতি ঘটতে দেখেও নিশ্চেষ্ট থেকেছেন। নরেন্দ্র মোদীর স্লোগানই যেখানে দুর্নীতি দূরীকরণ, সেখানে কালিমালিপ্ত এমন লোককে কী করে সমর্থন জানিয়ে যেতে পারে বিজেপি? মনোহরদের ধারণা, কমনওয়েলথ গেমসের পর সুরেশ কলমডীর মাথার ওপর থেকে যেমন হাত তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল কংগ্রেস সরকার, শ্রীনির বেলাতেও তা-ই হবে।

পওয়ার ঘনিষ্ঠ মহলে এ দিন জানিয়েছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে উত্‌সাহী। দাঁড়াচ্ছি সরাসরি ঘোষণা না করলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন এক ভারত অধিনায়ক বলছিলেন, “উনি বুঝে গিয়েছেন শ্রীনি এখন পাতালের দিকে এগোচ্ছে। আর পওয়ার সাহেব কখনও সামান্যতম সুযোগও নষ্ট করেন না।”

ক্রিকেট-রাজনৈতিক মহলে এমন আলোচনাও উঠেছে যে, অরুণ জেটলি যখন জোর সওয়াল করেন, রবার্ট বঢরার দুর্নীতির জন্য সনিয়া গাঁধীকে অভিযুক্ত হওয়া উচিত। তখন তাঁর মনে রাখা দরকার, মইয়াপ্পনের জন্য শ্রীনিবাসনকে দায়ী করা উচিত। বোর্ডের একটা শিবিরও মনে করছে, দুর্নীতির আওয়াজ এত উঁচুতে উঠছে যে, জেটলির পক্ষে এই মুহূর্তে শ্রীনিকে সমর্থন করাটা বিচক্ষণতার কাজ হবে না। তাঁদের বিশ্বাস, পরিস্থিতির দাবি মেনে তিনি নিরপেক্ষ হয়ে যাবেন।

ক্রিকেট মহল থেকে সল্টলেকের আটলেটিকো ম্যাচ, সর্বত্র আর এক প্রস্ত আলোচনা চলল, মুদগল কমিশন কোন কোন প্লেয়ারকে দোষী ঠাওরেছে। কার কার নাম ওই রিপোর্ট থেকে কেটে দু’পক্ষের আইনজীবীকে দেওয়া হবে। আদালত মনে করেছে প্লেয়ারদের নাম অত্যন্ত স্পর্শকাতর, সে জন্য বাদ দিতে বলেছে। এ নিয়েও ক্রিকেট মহলে তীব্র মেরুকরণ। এক পক্ষ মনে করছে যে, হ্যান্সি ক্রোনিয়ে থেকে আজহার, এত বড় বড় নাম যদি প্রকাশ্যে আনা যেতে পারে, তা হলে আজ কাকে চাপা দেওয়া হচ্ছে? কেন দেওয়া হচ্ছে?

কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কোম্পানি রীতি স্পোর্টস নিয়ে মুদগল কমিশনের রিপোর্টে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এমনকী মইয়াপ্পন নিছকই ক্রিকেট-উত্‌সাহী এই মন্তব্যের জন্যও ধোনি তাঁদের কাছে ধিক্কৃত হয়েছেন।

এখানেই সবচেয়ে বড় এবং অমীমাংসিত প্রশ্নটা। ক্রিকেট-নৈতিকতার বড় আওয়াজ যদি আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে, তা মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকেও গ্রাস করবে কি না।

মনে রাখতে হবে বিশ্বকাপের জন্য ভারতের অধিনায়ক নির্বাচন কিন্তু এখনও হয়নি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন