বোর্ডের আইনই বলছে, শ্রীনিকে ছাড়া হতে পারে বার্ষিক সভা

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে ছাড়া নাকি এই মাসে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা যাবে না। তাঁর সই ছাড়া নাকি বার্ষিক সভায় বোর্ডের হিসাবও পাস হবে না! গত কয়েক দিন ধরে সংবাদমাধ্যমে শ্রীনি অনুগামীদের এই যুক্তি শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। শ্রীনিবাসনকে প্রেসিডেন্টের গদিতে বহাল রাখার জন্য যে বোর্ডের গঠনতন্ত্রকেও গ্রাহ্য করছে না কেউ, এটাই অবাক করার মতো।

Advertisement

ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে ছাড়া নাকি এই মাসে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা যাবে না। তাঁর সই ছাড়া নাকি বার্ষিক সভায় বোর্ডের হিসাবও পাস হবে না!

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে সংবাদমাধ্যমে শ্রীনি অনুগামীদের এই যুক্তি শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। শ্রীনিবাসনকে প্রেসিডেন্টের গদিতে বহাল রাখার জন্য যে বোর্ডের গঠনতন্ত্রকেও গ্রাহ্য করছে না কেউ, এটাই অবাক করার মতো।

বিসিসিআই-এর গঠনতন্ত্রের ১৬ নম্বর ধারায় পরিষ্কার লেখা আছে, ‘বোর্ডের বার্ষিক সভা প্রতি বছর হতেই হবে। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরের পর এই সভা করা যাবে না।’ এবং এও লেখা আছে যে, অন্তত ২১ দিন আগে বোর্ডের বার্ষিক সভার নোটিস দিতে হবে। অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর বার্ষিক সভা ডাকতে হলে ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সভার নোটিস জারি করতেই হবে। তা না করা হলে সেটা বোর্ডেরই গঠনতন্ত্রকে অমান্য করা হবে।

Advertisement

অনেকে এও বলছেন যে, ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডেকে নাকি বার্ষিক সভার নোটিস জারি করতে হবে এবং এই ওয়ার্কিং কমিটির সভার আগে ফিনান্স কমিটির সভা ডেকে বার্ষিক হিসাব পাস করা উচিত। যে যাই বলুক, এমন কোনও নিয়মের কথাও বোর্ডের গঠনতন্ত্রে নেই।

সেই প্রসঙ্গে আসার আগে বরং বোর্ড প্রেসিডেন্টের সইয়ের তত্ত্বে আসা যাক।

প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসন বার্ষিক হিসাবে সই না করলে তা এজিএমে পাস হবে না কেন? দেশের সর্বোচ্চ আদালত শিবলাল যাদবকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলে দিয়েছে, প্রেসিডেন্টের দৈনিক কাজকর্ম করার জন্য তাঁকে নিয়োগ করা হল। এতেই স্পষ্ট যে, শ্রীনি পদে থাকলে যা করতে পারতেন, সে সব কাজই এখন শিবলাল করতে পারবেন। তা হলে এজিএমে বার্ষিক হিসাবে সই করেই বা কেন তা পাস করতে পারবেন না তিনি? এটাই তো সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

বোর্ডের গঠনতন্ত্রে ১৩বি (৪) ধারায় স্পষ্ট লেখা, ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করে সচিবের বোর্ডের বার্ষিক সভা ডাকার ক্ষমতা রয়েছে।’ এই নিয়মে তো সঞ্জয় পটেলও এখন বার্ষিক সভা ডাকতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টকে যখন সব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তখন তিনি নিজেও তাঁর ক্ষমতাবলে বার্ষিক সভা ডাকতেই পারেন। এ জন্য শ্রীনিবাসনের ক্ষমতায় ফিরে আসার অপেক্ষা করার কোনও প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া ফিনান্স কমিটি ও ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বার্ষিক হিসাব পাস করিয়ে যে তা এজিএমে পেশ করতে হবে, এমন কোনও নিয়মও নেই। ১৩ডি ধারায় লেখা আছে বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ্য সরাসরি বার্ষিক সভায় অডিট করা বার্ষিক হিসাব পেশ করতে পারেন। মোদ্দা কথাটা হল এখন ফিনান্স কমিটি, ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক না ডেকেও অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করে সরাসরি এজিএম ডাকতে পারেন বোর্ড সচিব। যেখানে প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসন উপস্থিত না থাকলেও অনায়াসে সভার কাজ হতে পারে।

আসলে নির্দিষ্ট সময়ে বার্ষিক সভা ও নির্বাচন হলে এবং তাতে শ্রীনি উপস্থিত না থাকতে পারলে আর তার প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকার কোনও উপায় থাকবে না। সেপ্টেম্বরে বার্ষিক সভা করে নির্বাচন পিছিয়ে দিলেও তার পক্ষে প্রেসিডেন্টের আসনে ফেরা অসম্ভব। সে জন্যই যেনতেন প্রকারেণ পুরো বার্ষিক সভাটাই পিছিয়ে দিয়ে তাঁর পদটা সুরক্ষিত করার একটা অপচেষ্টা চলছে বোর্ডে। যাতে শ্রীনি প্রেসিডেন্টের পদে ফিরলে তাঁর অনুগামীরা আর্থিক ভাবে যথেষ্ট লাভবান হতে পারেন। এক্ষেত্রে দেশের ক্রিকেট ও বোর্ডের স্বার্থ এখন গৌণ। সব কিছুর উর্দ্ধে শ্রীনিবাসনের ক্ষমতায় ফেরা।

লেখক: বোর্ডের প্রাক্তন আইনজীবী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন