Diego Maradona

Diego Maradona and Lionel Messi: মারাদোনার পাড়ায় মেসি-উৎসব

ফাইনালের আগের দিনও ফুটবল ঈশ্বরের বাড়ির সামনে চলে গিয়েছিলাম জাতীয় দলের জন্য প্রার্থনা করতে।

Advertisement

জোয়াকিন সাইমন পেদ্রোস

বুয়েনোস এয়ার্স শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১ ০৫:৪৬
Share:

শ্রদ্ধার্ঘ্য: বুয়েনোস এয়ার্সের রাস্তায় স্মরণ মারাদোনাকে। গেটি ইমেজেস

বুয়েনোস এয়ার্সে শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা। তিগ্রের সান আন্দ্রেসের সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে গত বছর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা।

Advertisement

আর্জেন্টিনায় এখন শীতকাল। কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। তা উপেক্ষা করেই রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। সকলেই কাঁদছেন। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছর পরে ট্রফি জয় আর্জেন্টিনার। শাপমুক্ত লিয়োনেল মেসি। আজ রাতে আর কেউ ঘুমোবে না। এখন শুধুই উৎসব। মারাকানায় ম্যাচের ২১ মিনিটে অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেওয়ার পরেই বুয়েনোস এয়ার্সের প্রাণকেন্দ্র প্লাজ়া দে লা রিপাবলিকায় জাতীয় পতাকা নিয়ে, নীল-সাদা জার্সি পরে, মুখে মেসির মুখোশ পরে জড়ো হতে শুরু করেছিলেন সকলে। ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে আমি যখন সেখানে পৌঁছলাম, তিল
ধারণের জায়গা নেই।

মারাদোনা যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন, সেখান থেকে আমার বাড়ি খুব কাছে। ফাইনালের আগের দিনও ফুটবল ঈশ্বরের বাড়ির সামনে চলে গিয়েছিলাম জাতীয় দলের জন্য প্রার্থনা করতে। কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে আবার চলে এসেছি তীর্থস্থানে। অবশ্য আমি একাই নই। আমার মতো অসংখ্য মানুষ এসেছেন। এক হাতে মারাদোনার ছবি, অন্য হাতে মেসির। আমরা আর্জেন্টিনাবাসীরা বিশ্বাস করি, মারাদোনার আশীর্বাদ ছাড়া চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব ছিল না।

Advertisement

এক দিকে যেমন দারুণ আনন্দ হচ্ছে, অন্য দিকে মন ভারাক্রান্ত হয়ে রয়েছে। মারাদোনা তো এই দিনের অপেক্ষাতেই ছিলেন। প্রত্যেক বারই বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার আগে স্বপ্ন দেখতেন আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হবে। মেসির হাতে ট্রফি উঠবে। সবই হল। কিন্তু মারাদোনাই দেখতে পেলেন না। কোপা আমেরিকা ফাইনালের আগেই বলেছিলাম, আর্জেন্টিনীয়রা মনে করেন, মারাকানায় ব্রাজিলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে সেটাই হবে ফুটবল ঈশ্বরের প্রতি মেসিদের সেরা শ্রদ্ধার্ঘ্য। প্রত্যাশা পূরণ করেছেন ফুটবলারেরা। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে মারাকানা স্টেডিয়ামেই জার্মানির কাছে হেরে চোখের জলে মাঠ ছেড়েছিলেন মেসি। কেঁদেছিল পুরো আর্জেন্টিনাও। দু’বছর আগে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে এই ব্রাজিলের কাছে হেরে আরও এক বার চোখের জল ফেলেছিলাম। শনিবার রাতে আরও এক বার কাঁদলাম আমরা। তবে এই কান্না আনন্দের। এই কান্না মেসির শাপমোচনের। ওঁর মতো শিল্পীর ফুটবলজীবন শেষ হবে কোনও ট্রফি না জিতে, হতে পারে না। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতাম ঈশ্বর কখনও এত নিষ্ঠুর হতে পারেন না। অবশেষে আমাদের প্রার্থনা সফল হল।

কাঁদতে-কাঁদতেই সান আন্দ্রেস থেকে রওনা হলাম প্লাজ়া দে লা রিপাবলিকার উদ্দেশে। রাস্তায় গাড়ির হর্নের শব্দ, মানুষের জয়োল্লাসে কানে যেন তালা লেগে যাচ্ছিল। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনা যখন মারাদোনার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতেছিল, আমার বয়স তখন মাত্র তিন বছর। ২৮ বছর আগে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময় আমার বয়স ছিল দশ। তাই এর আগে কখনওই শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই উৎসবে যোগ দিতে পারিনি। সে দিন থেকেই ঠিক করেছিলাম, এর পরে যখন কোনও ট্রফি জিতবে আর্জেন্টিনা, আমি যাব প্লাজ়া দে লা রিপাবলিকায়। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ও স্বপ্নপূরণ।

রবিবার সকাল প্রায় সাড়ে ন’টা। অর্থাৎ, প্রায় ২৪ ঘণ্টা হতে চলল। কিন্তু উৎসব অব্যাহত। শনিবার রাতে যাঁরা আসতে পারেননি, এ দিন সকালে তাঁরা হাজির। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করায় রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। অনেকটা হেঁটেই সকলকে আসতে হচ্ছে। কিন্তু তা নিয়ে কারও কোনও ক্ষোভ নেই। সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাসে করে মেসিরা এলেন ট্রফি নিয়ে। আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে গেল। সেবাস্তিয়ান নামে এক জনের সঙ্গে আলাপ হল। বয়স প্রায় ৬৫। অনেকটা হেঁটে আসায় জোরে শ্বাস নিচ্ছিলেন। হাসতে হাসতে বললেন, “মেসি যদি এত সমালোচনা সহ্য করে দেশকে ট্রফি দিতে পারে, আমি কেন পারব না?” মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ওঁর কথা শুনে।

সত্যিই তো, মেসিকে তো কম বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়নি। কখন শুনতে হয়েছে, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কখনও আবার বলা হয়েছে স্বার্থপর। নিজেকে নিয়েই শুধু ভাবেন। সতীর্থদের গুরুত্ব দেন না। বারবার সমালোচকদের তিরে ক্ষতবিক্ষত হয়েও নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন লিয়ো। টেলিভিশনে দেখছিলাম, চ্যাম্পিয়ন হয়ে কী ভাবে শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন মেসি। তার পরে ড্রেসিংরুমে কাপ নিয়ে নাচ। আর্জেন্টিনাবাসী এই আবেগই তো বরাবর দেখেছেন মারাদোনার মধ্যেই।

(লেখক আর্জেন্টিনার ক্রীড়া সাংবাদিক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন