প্রথম রাউন্ড জিতে শারাপোভা। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।
উইম্বলডন চত্ত্বরেই ‘সুগারপোভা’-র নতুন শো-রুম উদ্বোধন করে সেন্টার কোর্টে নামলেন মারিয়া শারাপোভা। সোশ্যাল সাইটে যত না রুশ টেনিস সুন্দরীর প্রথম রাউন্ড ম্যাচের ছবি, তার চেয়ে অনেক বেশি মাশার নতুন ক্যান্ডি-জুস খাওয়ার পোস্ট!
এই প্রথম উইম্বলডনে প্রথম দিনই ডাবলসও শুরু করে দিলেন সংগঠকরা। ম্যাচ এবং টুর্নামেন্টের দিন সংখ্যা আগের মতোই থাকা সত্ত্বেও।
টেনিসের সবচেয়ে ঐতিহ্যশালী গ্র্যান্ড স্ল্যামের চরিত্রও কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে!
দুই শীর্ষ বাছাইয়ের খেলাও এ দিন কেমন যেন অচেনা। নোভাক জকোভিচের স্কোলসক্রেইবারের বিরুদ্ধে ৬-৪, ৬-৪, ৬-৪ জয় নিয়ে প্রাক্তন ব্রিটিশ এক নম্বর টিম হেনম্যান বলছেন, ‘‘অতি গড়পড়তা পারফরম্যান্স। নোভাক যে এ বার ঘাসের কোর্টে একটাও ম্যাচ খেলেনি, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। ম্যাচ জিতে ওকে বরং স্বস্তিতে দেখাচ্ছিল। কারণ, প্রথম দিনই কেউ টুর্নামেন্ট জিতে নিতে না পারলেও কিন্তু টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে পারে!’’
মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা আবার সেরেনা উইলিয়ামসের গাসপারইয়ানের বিরুদ্ধে ৬-৪, ৬-১ জয় দেখে বলেছেন, ‘‘কয়েক বার একটু নড়বড়ে দেখিয়েছে। কিন্তু দরকারের সময় দুর্দান্ত খেলেছে। সব গ্রেট প্লেয়ারের মতোই সেরেনাও যখনই জয়ের গন্ধ পেয়েছে নিজের সেরাটা বার করেছে।’’
‘সেরেনা-স্ল্যাম’ অভিযান শুরু করতে নেমে এ দিন প্রথম সার্ভিস গেমটাই খুইয়েছিলেন মার্কিন তারকা। বছর কুড়ির রুশ কোয়ালিফায়ার গাসপারইয়ান একটাও সেট না হেরে মূলপর্বে উঠেছিলেন। এ দিন ডান কাঁধ থেকে কনুই ব্যথা উপশমকারী সাদা টেপ লাগিয়ে খেলতে নেমে প্রথম সেটে ৩-১ এগিয়ে গেলে উইম্বলডনের এক নম্বর কোর্টের দর্শক তখন গাসপারইয়ানের সমর্থক হয়ে উঠেছিলেন। ছিপছিপে লম্বা রুশ মেয়েটির শক্তিশালী ফোরহ্যান্ড ছাড়াও বিগ পয়েন্ট জিতে বাঁ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সেলিব্রেশনের ভঙ্গিটাও একেবারে শারাপোভার মতো। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সামান্য অবয়ব অখ্যাত বিপক্ষের মধ্যে দেখেই কি না কে জানে, সেরেনা প্রথম সেটের মাঝামাঝি জ্বলে উঠলেন। তার পর বাকি ম্যাচে সেরেনা যদি ১১টা গেম জিতে থাকেন তো গাসপারইয়ানের জয়ের সংখ্যা মাত্র দুই!
আসল শারাপোভা অবশ্য স্বমহিমায় খেলে স্থানীয় তারকা জোহানা কন্টাকে হারিয়েছেন ৬-২, ৬-২। তবে বিকেলের দিকে ভেনাসের ৬-০, ৬-০ জিতে দেশোয়ালি প্রতিপক্ষকে ‘ডাবল ব্যাগেল’ দেওয়া নিয়ে হইচই বেশি হল। সাড়ে পাঁচ ফুটি অসহায় মার্কিন মেয়ের নামও ম্যাডিসন ব্র্যাঙ্গেল! যেমন ইভানোভিচের ফান জু-র বিরুদ্ধে ৬-১, ৬-১ জয়ের চেয়েও বেশি আলোচনা প্রথম দিনই তাঁর ম্যাচ দেখতে প্লেয়ার্স বক্সে সেলিব্রিটি প্রেমিক সোয়াইনস্টাইগারের হাজিরা দেওয়া নিয়ে। বিশ্বকাপজয়ী জার্মান মিডফিল্ডারকে শোনা যাচ্ছে পরের মরসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেই দেখা যেতে পারে ম্যান ইউ জার্সিতে।
সিঙ্গলস পুরোপুরি ভারতীয় বর্জিত হওয়া সত্ত্বেও সংগঠকদের সৌজন্যে উইম্বলডনে এ বার প্রথম দিনই ভারতীয়ের পা পড়ল কোর্টে। সদ্য হ্যাল ওপেন ফাইনালিস্ট রোহন বোপান্না-মার্জিয়ার ইন্দো-রোমানিয়ান জুটি উইম্বলডনে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেন। ৬-৩, ৭-৬ (৭-১), ৬-১ জিরি ভেসেলি-টিম স্মাইজেককে হারিয়ে।
দ্বিতীয় দিন আবার ভিন্ন মেজাজে উইম্বলডন অভিযান শুরু করবেন দুই চিরপ্রতিপক্ষ— রজার ফেডেরার আর রাফায়েল নাদাল। রজার যেখানে বলেছেন, ‘‘অবসরের কোনও চিন্তাই নেই এখন। বরং এই মুহূর্তে আমার সমস্ত ফোকাস অষ্টম বার উইম্বল়ডন জেতার দিকে।’’ তখন নাদাল সম্পর্কে জন ম্যাকেনরো থেকে নিক বলতিয়োরি— কিংবদন্তিদের মত, ‘‘কোর্টে আজকাল রাফার চোখমুখে দ্বিধাবোধ ফুটে উঠছে। কিছু একটার অভাব ওর খেলায় থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু সেটা ঠিক কী, বলা মুশকিল।’’ ব্রিটিশদের সেরা বাজি অ্যান্ডি মারেও মঙ্গলবার নামবেন। এক মারে-ভক্ত নায়কের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উপর এ দিনই ভারতীয় মুদ্রায় পাঁচ কোটি টাকার বাজি ধরে বসেছেন!