সুখবিন্দরই আমার ম্যান অব দ্য ম্যাচ

ম্যাচটা নিয়ে ময়দান থেকে মিডিয়া জুড়ে যতই ‘হাইপ’ তৈরি হোক, আমার মতে প্রত্যাশিত ভাবেই ইস্টবেঙ্গল লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে ম্যাচের শেষের দিকে টালিগঞ্জের দু’টো হাফচান্সের একটাতেও কোকো যদি ঠিক ভাবে হেড নিতে পারত, তা হলে মঙ্গলবারই ওর বাড়িতে আমার ক্লাব থেকে কেউ হয়তো বিরিয়ানি পাঠালেও পাঠাতে পারত!

Advertisement

চুনী গোস্বামী

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৪
Share:

তৃপ্ত সুখবিন্দর।

ইস্টবেঙ্গল-২ (প্রহ্লাদ, র‌্যান্টি)
টালিগঞ্জ-১ (বেলো)

Advertisement

ম্যাচটা নিয়ে ময়দান থেকে মিডিয়া জুড়ে যতই ‘হাইপ’ তৈরি হোক, আমার মতে প্রত্যাশিত ভাবেই ইস্টবেঙ্গল লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে ম্যাচের শেষের দিকে টালিগঞ্জের দু’টো হাফচান্সের একটাতেও কোকো যদি ঠিক ভাবে হেড নিতে পারত, তা হলে মঙ্গলবারই ওর বাড়িতে আমার ক্লাব থেকে কেউ হয়তো বিরিয়ানি পাঠালেও পাঠাতে পারত!

সাতষট্টির লিগে অনেকটা এ রকম অবস্থায় মোহনবাগান আমার গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারানোয় মহমেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বাড়ি ফিরে দেখেছিলাম, মহমেডান ক্লাব থেকে প্রচুর বিরিয়ানি পাঠিয়েছে। কোকো ঠিক ভাবে মাথায় বল ছোঁয়ালে টালিগঞ্জ এ দিন ড্র করলেও করতে পারত। সে ক্ষেত্রে তখন মোহনবাগান লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত।

Advertisement

ইস্টবেঙ্গল অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই জিতেছে। আক্রমণে ডুডু-র‌্যান্টি তালমিল তো ছিলই। ওদের একটু পিছন থেকে সুখবিন্দর আসল কার্যকরী ফুটবলটা খেলেছে। প্রকৃত লিঙ্কম্যানের ভুমিকায় ডিফেন্স আর অ্যাটাকের মধ্যে যোগসূত্র রেখে গিয়েছে সারাক্ষণ। আমার মতে সুখবিন্দরই এ দিন ইস্টবেঙ্গলের ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

ডুডুও কয়েকবার নীচে নেমে আক্রমণ তৈরি করেছে। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গল বক্সে বিদেমির একটা শট ডুডু কাঁধ-হাতের সংযোগে লাগিয়ে নিজের দলের জন্য অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। ওটা পেনাল্টি, না পেনাল্টি নয়, সেটা সত্যি বলতে কী রেফারির পক্ষেও সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল। তবে ডুডুর তুলনায় র‌্যান্টিকে কিছুটা নিষ্প্রভ দেখিয়েছে। তবু ইস্টবেঙ্গলের ২-১ ওর হেডেই। যদিও বলব, র‌্যান্টির গোলের পিছনে টালিগঞ্জ ডিফেন্ডার বেলো রজ্জাক আর গোলকিপার রাজু মণ্ডল খানিকটা দায়ী। বিশেষ করে গোলকিপার একটু বেশিই এগিয়ে এসেছিল। আর বেলো সম্পর্কে বলতে হয়, ওই একটা ক্ষেত্রে ছাড়া বেশ ভাল খেলেছে। টালিগঞ্জের ১-১ করার হেডটাও ওর চমৎকার। কর্নারের উপর একেবারে সঠিক হেড।

আবার ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোলের ক্ষেত্রে প্রহ্লাদ রায় দারুণ সুযোগসন্ধানী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। ও, অবিনাশ রুইদাস, অভিষেক দাস ইস্টবেঙ্গলের গত কয়েকটা ম্যাচেই ভাল খেলছে। অনেক দিন পর বড় ক্লাবে নতুন স্থানীয় ফুটবলার নজর কাড়ছে। সব মিলিয়ে ম্যাচটায় খুব বেশি কোয়ালিটি ফুটবল না হোক, যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলা হয়েছে।

আমি মনে করি, এ বার কলকাতা লিগে রিটার্ন লেগ না থাকায় টুর্নামেন্ট এত জমেছিল। দশ-বারো দলের লিগে ফিরতি ম্যাচ থাকলে ছোট ক্লাবগুলো টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় পর্বে খানিকটা বেদম হয়ে পড়ে। এ ধরনের টিমের কম বাজেট, সুযোগসুবিধার সমস্যায় মরসুমের শেষের দিকে প্র্যাকটিসে খামতি ঘটে। যার ছাপ পড়ে খেলায়। কিন্তু এ বার সিঙ্গল লেগ হওয়ায় প্রতিটা দল মাত্র ন’টা ম্যাচ জান লড়িয়ে খেলেছে। সে জন্যই স্থানীয় লিগকে অনেক দিন পর এত ঝলমলে দেখাল। প্রতিদ্বন্দ্বিতা এতটাই ক্ষুরধার হয়েছে যে, শেষ দিন পর্যন্ত টুর্নামেন্ট ‘ওপেন’ ছিল। শেষ দিনও তিনটে দল চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে ছিল। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, টালিগঞ্জ কে কাকে টপকাবে শেষ ম্যাচ সাঙ্গ হওয়া পর্যন্ত বোঝার উপায় ছিল না। এর জন্য কোলাসো, সুভাষ, সুব্রত তিন কোচেরই আমি প্রশংসা করব।

কোলাসোর মধ্যে আমি অমল দত্তের মতো নতুন মুখদের তুলে আনার মিল খুঁজে পেলাম। স্থানীয় লিগকে গুরুত্ব না দিলেও এ দিন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মাঠেই ওকে হাঁটু মুড়ে বসে উল্লাস করতে দেখলাম। আমার মনে হয়, কোলাসোর ওই উল্লাস প্রকাশ যত না ট্রফি জেতার জন্য, তার চেয়ে বেশি তরুণ প্রজন্মকে বড় দলে সফল ভাবে প্রতিষ্ঠা দিতে পারার তৃপ্তিতে।

সুভাষের আবার মোহনবাগানকে পাসিং ফুটবল খেলানোটা আমার খুব ভাল লেগেছে। এই স্টাইলটাই ভারতীয় ফুটবলে এখন দরকার। তবে তিকিতাকা খেলতে গেলে সেই দলের ডিফেন্সে কোনও ফাঁকফোকর থাকলে চলবে না। মোহনবাগান সেটা না পারায় বড় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের কাছে তিন গোল খেয়েছিল।

আর সুব্রত টালিগঞ্জের মধ্যে চমৎকার লড়াকু মনোভাব আনতে পেরেছে। নইলে কি আর এমনি-এমনি অর্ধ শতাব্দীরও পর তিন প্রধানের বাইরে কোনও ক্লাবের কলকাতা লিগ জেতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল?

আমার মতে এই তিন কোচের কৃতিত্বেই স্থানীয় লিগের পুরনো ঐতিহ্য কিছুটা হলেও এ বার ফিরেছে।

ইস্টবেঙ্গল: অভ্র, অভিষেক, গুরবিন্দর, সফর, ধনরাজন, সুবোধ, অবিনাশ (সৌমিক), সুখবিন্দর, প্রহ্লাদ(কিষাণ), র‌্যান্টি, ডুডু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন