রজারের সামনেও নির্ভীক, এক সেটে একশো নাগাল

খুব প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে উঠে এসেছে হরিয়ানার ছেলে নাগাল। ২০১৫ উইম্বলডন বয়েজ ডাবলস জিতেছে।

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৫৮
Share:

যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে সুমিত নাগাল।—ছবি এএফপি।

স্বপ্নের গ্র্যান্ড স্ল্যাম অভিষেক একেই বলে! ভারতীয় সময়ে মঙ্গলবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে সুমিত নাগাল যেটা করে দেখাল। কুড়ি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক রজার ফেডেরারে বিরুদ্ধে প্রথম রাউন্ডে শুধু লড়াই করেছে তাই নয়, প্রথম সেটও জিতেছে। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেও ২২ বছর বয়সি নাগালের জন্য এটা যে একটা বিরাট প্রাপ্তি, কোনও সন্দেহ নেই।

Advertisement

খুব প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে উঠে এসেছে হরিয়ানার ছেলে নাগাল। ২০১৫ উইম্বলডন বয়েজ ডাবলস জিতেছে। জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পরে ২০১৭-তে বেঙ্গালুরুতে চ্যালেঞ্জার জিতেছে। তার আগে ২০১৬ সালে ডেভিস কাপে স্পেনের বিরুদ্ধে বিশ্ব গ্রুপ প্লে অফ টাইয়ে ভারতীয় দলে ছিল। ওর উত্থানের পিছনে রয়েছে মহেশ ভূপতি। ওকে মহেশই ক্যাম্প থেকে তুলে আনে। এখনও হয়তো মহেশ ওর স্পনসরশিপের ব্যাপারটা দেখে। পাশাপাশি বিরাট কোহালি ফাউন্ডেশনও ওকে সাহায্য করে বলে শুনেছি। তবে গত দু’বছর ওর কেরিয়ারে খুব একটা ভাল যায়নি। ডেভিস কাপ দল থেকেও বাদ পড়েছিল। তবে মঙ্গলবার নাগাল যে ভাবে খেলেছে সেটা নিশ্চিত ভাবে ওর খেলোয়াড় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে প্রায় পঁচিশ হাজার দর্শকের সামনে একটা ছেলে প্রথম বার গ্র্যান্ড স্ল্যামে নামছে। সামনে ফেডেরারের মতো প্রতিপক্ষ। নাইট ম্যাচ। কিন্তু নাগাল চাপে পড়েনি। ভয়ডরহীন ভাবে খেলেছে। এটাই সব চেয়ে ভাল লাগল। ফেডেরারের মতো প্রতিপক্ষ যে প্রথম সেটে হারার পরে আর কোনও সুযোগ দেবে না সেটা সবার জানা। তবে চতুর্থ সেটে কিন্তু নাগাল ৫-৫ করে ফেলতে পারত। ৪-৫ থাকার সময় ৪০-০ এগিয়ে গিয়েছিল ও। সেই সময় ফেডেরার পরপর তিনটে ভাল সার্ভ করে গেমে ফিরে আসে আর টানা উনিশ বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত করে ফেলে।

Advertisement

নাগাল হারলেও এই ম্যাচটা শুধু ওর জন্যই নয়, ভারতীয় টেনিসের জন্যও বড় ব্যাপার। কোর্টে ফেডেরারের মুখোমুখি হওয়াটাই বিরাট সম্মানের। তা ছাড়া নাগালের ফোরহ্যান্ড দারুণ। বেশ কয়েকটা ফোরহ্যান্ড উইনার মেরেছে ফেডেরারের বিরুদ্ধে। কোর্টে নড়াচড়াও খুব ভাল। এই ম্যাচটা ওকে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে খুব সাহায্য করবে। ওর র‌্যাঙ্কিং এখন ১৯০। এর পরের প্রতিযোগিতাগুলোয় যখন নামবে তখন মাথায় থাকবে, আমি ফেডেরারের বিরুদ্ধে খেলে এসেছি, এ বার কোর্টের অন্য দিকে যেই থাকুক আমি পারব।

কয়েকটা ব্যাপারে অবশ্য নাগালকে নজর দিতে হবে। যার মধ্যে ওর সার্ভিস আর ব্যাকহ্যান্ডের কথা বলব। এই দুটো আরও উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি আরও জরুরি হল, ফিটনেস ধরে রাখা। দু’এক জন বাদ দিলে আমাদের ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড়দের সমস্যা হল, দু’একটা ভাল ম্যাচ খেলেই চোটের কবলে পড়ে যাওয়া। ইউকি ভামব্রি বা সাকেত মিনেনিদের ক্ষেত্রে যে রকম দেখা যাচ্ছে। তবে নাগালের একটা সুবিধে হচ্ছে এখন ও জার্মানিতে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছে সার্বিয়ান কোচ মিলোস গালেসিচের কাছে। যে প্রাক্তন এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন সোমদেব দেববর্মনের ট্রেনার ছিল। খুব কড়া অনুশীলন করায় মিলোস। এই ট্রেনিংয়ের ফলটাই দেখা যাচ্ছে কোর্টে। আমি নিশ্চিত, এই ফিটনেস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারলে এক বছরের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে ১০০ জনের মধ্যে উঠে আসতে পারবে নাগাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন