suresh raina

বাল্যবন্ধুকেই বিয়ে, রায়নার আর জে স্ত্রী কাজ করতেন বিদেশে

৭ বছর পরে সুরেশ তখন বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায়। বাড়িতে বিয়ের কথা চলছিলই। অস্ট্রেলিয়ায় বসে মায়ের ফোনে সুরেশ জানতে পারেন ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে! কে সেই বান্ধবী? জানতে চাইলে সুরেশের মা ফোন দিয়ে দেন প্রিয়ঙ্কাকে। সেই শুরু।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন 
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ১২:২৮
Share:
০১ ২৫

উত্তরপ্রদেশের শহরে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা সুরেশ এবং প্রিয়ঙ্কার। প্রথম দিকে প্রিয়ঙ্কার বাবার কাছে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণও নিতেন সুরেশ। দু’জনের মায়ের মধ্যেও ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কিন্তু সুরেশ-প্রিয়ঙ্কা সম্পর্কে কৈশোর বা তারুণ্যে কোনও প্রেমের আঁচড় পড়েনি। কেউ কোনওদিন ভাবতেও পারেননি একে অন্যের জীবনসঙ্গী হবেন।

০২ ২৫

গাজিয়াবাদের কলেজ থেকে বি টেক করেন প্রিয়ঙ্কা সিংহ চৌধুরি। তার পর একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি নিয়ে নেদারল্যান্ডস চলে যান। তাঁর পরিবারও গাজিয়াবাদ থেকে চলে গিয়েছিল পঞ্জাব। ফলে অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে যায় রায়না ও চৌধুরি পরিবারের যোগাযোগ।

Advertisement
০৩ ২৫

বেশ কিছু বছর পরে ২০০৮-এ দিল্লি বিমানবন্দরে আচমকাই দেখা দুই বাল্যবন্ধুর। সুরেশ যাচ্ছিলেন বেঙ্গালুরু, আইপিএল ম্যাচ খেলতে। ছুটি কাটিয়ে প্রিয়ঙ্কা ফিরছিলেন তাঁর কাজের জায়গা নেদারল্যান্ডস। ৫ মিনিট স্থায়িত্ব ছিল সাক্ষাতের। পরে দু’জনেই জানিয়েছিলেন, তখনও তাঁরা জানতেন না ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করে আছে তাঁদের জন্য।

০৪ ২৫

৭ বছর পরে সুরেশ তখন বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায়। বাড়িতে বিয়ের কথা চলছিলই। অস্ট্রেলিয়ায় বসে মায়ের ফোনে সুরেশ জানতে পারেন ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে! কে সেই বান্ধবী? জানতে চাইলে সুরেশের মা ফোন দিয়ে দেন প্রিয়ঙ্কাকে। সেই শুরু।

০৫ ২৫

পূর্ব পরিচিত হলেও নিজেদের সাতপাকে ঘোরাকে ‘অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ’ বলতেই ভালবাসেন সুরেশ ও প্রিয়ঙ্কা। দু’জনে এ বিষয়েও সহমত যে পরিবারের পছন্দে সম্মতি জানিয়ে তাঁরা কোনও ভুল করেননি।

০৬ ২৫

২০১৫-র ১ এপ্রিল ঘরোয়া পারিবারিক অনুষ্ঠানে দু’জনের এনগেজমেন্ট হয়। রায়না পরিবারের বাড়িতে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন দুই পরিবারের লোকজন।

০৭ ২৫

বিয়ের জন্য রায়না বেছে নিয়েছিলেন দিল্লির বিলাসবহুল হোটেল দ্য লীলা প্যালেস-কে। তাঁর বিয়ে উপলক্ষে হোটেল কার্যত হয়ে উঠেছিল চাঁদের হাট। ক্রিকেট, অভিনয় এবং রাজনীতি জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা আমন্ত্রিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে।

০৮ ২৫

লখনউয়ের কাবাব ও বিরিয়ানির ভক্ত রায়না তাঁর বিয়ের ভোজও সাজিয়েছিলেন নিজের পছন্দ অনুসারে। ভুলভুলাইয়ার শহরের বিখ্যাত ‘টুন্ডে কাবাব’ দোকান থেকে তাঁর বিয়ের মেনু তৈরি করতে দিল্লি গিয়েছিলেন রন্ধনশিল্পীদের একটি বিশেষ দল।

০৯ ২৫

টুন্ডে কাবাবের পাশাপাশি লখনউয়ের বিখ্যাত গলহৌটি কাবাব, মাটন বিরিয়ানি, মাটন কোর্মা ছিল সুরেশ-প্রিয়ঙ্কার বিয়ের ভোজের অন্যতম আকর্ষণ।

১০ ২৫

বেশির ভাগ ক্রিকেট তারকাদের স্ত্রীরা বিয়ের পরে চাকরি ছেড়ে দেন। প্রিয়ঙ্কা কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত দীর্ঘদিন চাকরি করে গিয়েছেন। শোনা যায়, সম্প্রতি তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে সুরেশ মাঠে খেললেই গ্যালারিতে প্রিয়ঙ্কা— এই ছবি সচরাচর ধরা পড়েনি। স্ত্রীর কেরিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়াননি রায়নাও।

১১ ২৫

২০১৭ সালে সুরেশ এবং প্রিয়ঙ্কার সংসারে আসে নতুন অতিথি। নেদারল্যান্ডসে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন প্রিয়ঙ্কা। মেয়ের নাম রাখেন ‘গ্রেসিয়া’।

১২ ২৫

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং ফুটবলপ্রেমী প্রিয়ঙ্কা কাজ করেছেন রেডিয়ো জকি হিসেবেও। তাঁর সঞ্চালনায় শো বেশ জনপ্রিয়। তাঁর শো-এর মূল আলোচ্য বিষয় মানবাধিকার ও নারীকল্যাণ। মা এবং শিশুকল্যাণের সঙ্গে জড়িত একটি সংস্থাও পরিচালনা করেন প্রিয়ঙ্কা। সংস্থাটির নাম তিনি রেখেছেন মেয়ে গ্রেসিয়ার নামে।

১৩ ২৫

প্রথম বারের মতো এ বারও প্রিয়ঙ্কা নেদারল্যান্ডসেই সন্তানের জন্ম দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে তিনি ভারতে চলে আসেন।

১৪ ২৫

ভাল খবরের পাশাপাশি এ বছর দুঃসময়ও অপেক্ষা করে ছিল সুরেশ রায়নার জন্য। গত ১৯ অগস্ট মাঝরাতে পাঠানকোটের থারিয়াল গ্রামে তাঁর কাকার পরিবারকে ডাকাতির উদ্দেশে আক্রমণ করেছিল দুষ্কৃতীরা।

১৫ ২৫

দুষ্কৃতীদের আক্রমণে প্রাণ হারান কাকা। গুরুতর জখম হন কাকিমা। ভাইবোনেরাও মারাত্মক আহত হন। পারিবারিক বিপর্যয়ের এই খবর পেয়ে দ্রুত আমিরশাহি থেকে সিএসকে শিবির ছেড়ে দেশে ফেরত আসেন রায়না।

১৬ ২৫

পরে জানা যায় চেন্নাই শিবির ছেড়ে রায়নার চলে আসার পিছনে অন্য কারণও আছে। পরবর্তীকালে রায়নার একটি মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। তাতে তিনি বলেছিলেন যে, সন্তানদের জীবন তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে মনে করা হয়েছিল সে সময়।

১৭ ২৫

সে সময় চেন্নাই সুপার কিংস শিবিরে ১৩ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। তার মধ্যে দীপক চাহার ও ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের মতো ক্রিকেটারও ছিলেন। শোনা গিয়েছিল, করোনা সংক্রমণের হার দেখে দুবাইয়ে থাকা আর ঠিক বলে মনে করেননি রায়না।

১৮ ২৫

সিএসকে ম্যানেজমেন্ট তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দেয়। রায়না ‘ব্যক্তিগত কারণ’-এ দেশে ফিরেছেন বলে জানানো হয় ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফে। দেশে ফিরে নয়াদিল্লির বাড়িতে রায়না নাকি কোয়রান্টিনে চলেও যান।

১৯ ২৫

পরে আবার অন্য একটি কারণ সামনে আসে। শোনা যায়, দুবাইয়ের হোটেলে তাঁর জন্য বরাদ্দ ঘর পছন্দ হয়নি রায়নার। সেই ঘরে কোনও ব্যালকনি ছিল না। ব্যালকনি না থাকায় রায়নার নাকি অসুবিধা হচ্ছিল। সিএসকে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে যেমন ঘর দেওয়া হয়েছিল, ঠিক তেমনই ঘর নাকি চেয়েছিলেন রায়না। আর এই ঘটনার জেরেই নাকি আইপিএল না খেলার সিদ্ধান্তে পৌঁছন রায়না।

২০ ২৫

চেন্নাই সুপার কিংস দলের মালিক তথা প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন যে রায়নার ফিরে আসার ঘটনায় অসন্তুষ্ট, তা বুঝিয়ে দেন। তিনি বলেছেন, “অনিচ্ছুক কাউকে আটকে রাখার বিরোধী আমি। আমি কাউকে জোর করে কিছু করাই না। আর কখনও কখনও সাফল্যে মাথা ঘুরে যায়। চেন্নাই সুপার কিংস একটা পরিবারের মতো। এখানে সমস্ত সিনিয়র ক্রিকেটারকেই একসঙ্গে থাকা শিখতে হয়। আর রায়না নিশ্চিত ভাবেই উপলব্ধি করবে যে কত টাকা ও হারাতে চলেছে।” প্রসঙ্গত, প্রতি মরসুমে সিএসকে থেকে ১১ কোটি টাকা পান রায়না।

২১ ২৫

এদিকে সিএসকের অন্যতম ম্যাচউইনার বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান রায়না একটি ওয়েবসাইটকে বলেন, ‘‘এখানে নিভৃতবাসে থাকার সময়ও আমি ট্রেনিং করে চলেছি। আপনারা কিন্তু আমাকে এই বছরই আবার সিএসকে শিবিরে দেখতে পারেন।’’ কিন্তু সে সম্ভাবনা সত্যি হয়নি। চলতি মরসুমে আইপিএল-এর দরজা বন্ধ হয়ে যায় রায়নার সামনে। চেন্নাই সুপার কিংসের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তাঁর নাম ছেঁটে ফেলা হয়।

২২ ২৫

রায়না নিজেও এ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। ধোনি অবসর ঘোষণা করার পরেই চলতি বছরের ১৫ অগস্ট রায়না জানান তিনিও সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছেন। তিনি খেলছিলেন শুধু আইপিএল-এই। কিন্তু সেই মঞ্চের উপরেও পর্দা পড়ে যায়।

২৩ ২৫

জাতীয় দলের হয়ে রায়নার টেস্ট অভিযেক হয় ২০১০ সালে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। শেষ বার টেস্ট খেলেছেন ২০১৫-এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। টেস্টে তাঁর মোট রান ৭৬৮। সর্বোচ্চ ১২০। উইকেট পেয়েছেন ১৩ টি।

২৪ ২৫

টেস্ট খেলার ৫ বছর আগে একদিনের ম্যাচে রায়নার অভিযান শুরু। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ান ডে খেলেন ২০০৫-এ। ১৩ বছর পরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ ওয়ান ডে ম্যাচে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ওয়ান ডে-তে তাঁর মোট সংগ্রহ ৫,৬১৫ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১১৬। উইকেট পেয়েছেন ৩৬ টি।

২৫ ২৫

একটা সময়ে রায়না ছিলেন দলের সেরা ফিল্ডার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পরে রায়না এখন সময় কাটাতে চান পরিবারের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement