সুশীল কুমার বলে দিচ্ছেন, ২০১৬ অলিম্পিক্সে তিনি পদক জিততে পারবেন বুঝলে তবেই রিও যাবেন। নয়তো নয়।
‘‘রিওতে নামলে আমি ৭৪ কেজিতেই নামব। আর যদি বুঝি এ বার অলিম্পিক্সে আমি পদক জিততে পারব না, তা হলে যাবই না!’’ বুধবার ফোনে বললেন ভারতের সম্ভবত সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান।
প্রয়াত লেসলি ক্লডিয়াসের তিনটে অলিম্পিক্স সোনা ছিল। তবে হকি তো টিমগেম। অভিনব বিন্দ্রা ১১২ বছরের ভারতীয় অলিপিক্স ইতিহাসের একমাত্র ব্যাক্তিগত ইভেন্টে সোনাজয়ী ক্রীড়াবিদ। কিন্তু সুশীল কুমার দু’টো অলিম্পিক্সে ব্যক্তিগত পদকজয়ী। যে অনন্য কৃতিত্ব আর কোনও ভারতীয়ের নেই। তা-ও প্রথমটার চেয়ে পরেরটায় পারফরম্যান্স আরও ভাল করে। ২০০৮ বেজিং অলিম্পিক্সে ফ্রিস্টাইল কুস্তির ৬৬ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ। চার বছর পর লন্ডন অলিম্পিক্সে একই বিভাগে রুপো জিতেছিলেন সুশীল।
সেই সুশীল সম্পর্কে অলিম্পিক্স আর দশ মাস, দিনের হিসেবে ঠিক ৩১৭ বাকি থাকতেও বলা যাচ্ছে না, তিনি রিও গেমসে শেষমেশ নামবেন কি না!
নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিখ্যাত পালোয়ানি কোচ সতপালের প্রিয় শিষ্যের ২০১৬ অলিম্পিক যাত্রা ঘিরে। সম্পর্কে সতপালের জামাই সুশীলের জোড়া অলিম্পিক্স পদক জেতা ইভেন্টটাই (৬৬ কেজি) আন্তর্জাতিক কুস্তি সংস্থা নতুন নিয়মে তুলে দিয়েছে। বদলে ৭৪ কেজির নতুন বিভাগ থেকে সুশীলকে রিওতে ওই বিভাগ থেকে পদক তোলার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই ৭৪ কেজিতে রিওতে ভারতের হয়ে নামার টিকিট অর্জন করে ফেলেছেন নরসিংহ পঞ্চম যাদব।
তবে এখানেও একটা মোচড় আছে। আন্তর্জাতিক কুস্তি সংস্থার নিয়মে অলিম্পিক্সে কোনও বিভাগে কোনও দেশের কোনও পালোয়ান নামার টিকিট পেলেও সেটা দেওয়া হয় তার দেশকে। সেই কুস্তিগীরের নামে নয়। অর্থাৎ, রিওতে কুস্তির ৭৪ কেজি বিভাগে লড়াই করার জন্য নিয়ম মতো নরসিংহ নন, যোগত্যা অর্জন করেছে ভারত। আরও স্পষ্ট ভাবে বললে, ভারতীয় কুস্তি সংস্থা। এখন তারা যে কুস্তিগীরকে মনে করবে, তাকে পাঠাতে পারে পরের অলিম্পিক্সে।
সুশীলের কোচ সতপাল এ দিন ফোনে বললেন, ‘‘সুশীল রিও অলিম্পিক্স যাবেই। আর ৭৪ কেজিতেই নামবে।’’ সতপাল দাবি করছেন, অলিম্পিক্সের মাস দুই আগে সুশীল আর নরসিংহের ভেতর একটা ট্রায়ালের নাকি ব্যবস্থা করবে ভারতীয় কুস্তি সংস্থা। ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থা, সাই, ক্রীড়ামন্ত্রকের অনুমতি নিয়েই। সেই লড়াইয়ে যিনি জিতবেন তিনিই রিও যাবেন। কিন্তু নরসিংহ যে বলেছেন, তিনি এ রকম কোনও ট্রায়ালে নামবেন না! সতপাল বললেন, ‘‘জাতীয় সংস্থার নির্দেশ তো সবাইকেই মানতে হবে। তাই না!’’
কোনও কোনও মহল থেকে এমনও শোনা যাচ্ছে, সুশীল বিতর্ক এড়াতে নিজের ওজন কমিয়ে ৬৫ কেজিতে নামতে পারেন রিওতে। ওই বিভাগে এখনও ভারতের কেউ যোগ্যতা অর্জন করেননি। কিন্তু ওই বিভাগে স্বভাবতই প্রথম পছন্দ যোগেশ্বর দত্ত। সতপালের ছাত্র যোগেশ্বরও। গত অলিম্পিক্সে ৬০ কেজিতে ব্রোঞ্জজয়ী কুস্তিগীর। ৬০ কেজি বিভাগও এ বার উঠে যাওয়ায় রিওতে যোগেশ্বরের নতুন ক্যাটেগরি ৬৫ কেজিতে নামার কথা।
যদিও সুশীলের মতো যোগেশ্বরও চোটের কারণে সম্প্রতি কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নামছেন না। তবে এ দিন সতপাল জোরাল গলায় বললেন, ‘‘যোগেশ্বর দু’মাস আগে হাঁটুর লিগামেন্টে ছোট অস্ত্রোপচারের পর এখন পুরোদমে প্র্যাক্টিস করছে। সুশীলের চোটটা ওর সেই ঘাড় আর কাঁধের মাঝখানের পুরনো যন্ত্রণা। কিন্তু সুশীলও পুরো সেরে উঠে পুরো ট্রেনিং করছে এখন। নভেম্বরের শেষের দিকে শিকাগোয় আর ফেব্রুয়ারিতে ইতালিতে দু’টো আন্তর্জাতিক আমন্ত্রণী টুর্নামেন্টে ৭৪ কেজিতেই নামবে। যোগেশ্বরও ওই সব জায়গায় নামবে ৬৫ কেজিতে।’’
সুশীল আবার স্পষ্ট বলে দিলেন, ‘‘যোগেশ্বর আমার গুরুভাই। একই গুরুর কাছে আমরা দু’জন তালিম নিই। কখনই আমি ওর ক্যাটেগরিতে অলিম্পিক্সে নামার কথা ভাবছি না। তা ছাড়া এই অল্প সময়ের ভেতর আমার পক্ষে দশ কেজি ওজন কমানোটাও অবৈজ্ঞানিক, কিছুটা বিপজ্জনকও হয়ে .যাবে। অলিম্পিক্সে নামলে আমি ৭৪ কেজিতেই নামব।’’