অধিনায়ক কোহালিও তৈরি, বুঝিয়ে দিল সিডনি

রবিবারের পারফরম্যান্স এটাও বুঝিয়ে দিল যে, বিরাট যদি ব্রিসবেনে ক্রিজে আর কিছুক্ষণ থাকতেন আর মেলবোর্নে বৃষ্টিতে ম্যাচটা ভেস্তে না যেত, তা হলে ভারতই হয়তো সিরিজ জিতত।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৫
Share:

সৌহার্দ: ম্যাচের পরে মিচেল স্টার্কের সঙ্গে কোহালি। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

রবিবার সিডনিতে যখন বিরাট কোহালি ব্যাট করতে নামেন, তখন সাড়ে পাঁচ ওভারে ৬৭ রান তুলে ফেলেছেন ভারতের দুই ওপেনার শিখর ধওয়ন ও রোহিত শর্মা। কুড়ি ওভারে ১৬৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে নেমে এর চেয়ে ভাল শুরু আর কী হতে পারে?

Advertisement

কিন্তু এই জায়গায় থেকেই ১৩ ওভারে ১০৮-৪ হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ চাপটা বেড়ে যায়। কিন্তু যে ভাবে বিরাট কোহালি চাপটা কমিয়ে ক্রমশ একেবারে উধাও করে দিলেন, তার পরে ফের বলতে হচ্ছে, যত ক্ষণ বিরাট, তত ক্ষণ কোনও চিন্তা নেই। সিডনিতে সেটাই তো আরও এক বার প্রমাণিত হল। ওঁর ৬১ রানের অপরাজিত ইনিংসে একবারও মনে হয়নি জয়ের রাস্তাটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে ওঁকে অসাধারণ সঙ্গ দেওয়ার জন্য দীনেশ কার্তিকের প্রশংসা প্রাপ্য।

রবিবারের পারফরম্যান্স এটাও বুঝিয়ে দিল যে, বিরাট যদি ব্রিসবেনে ক্রিজে আর কিছুক্ষণ থাকতেন আর মেলবোর্নে বৃষ্টিতে ম্যাচটা ভেস্তে না যেত, তা হলে ভারতই হয়তো সিরিজ জিতত। ব্রিসবেনে প্রথম ম্যাচে বিরাট মাত্র চার রান করে আউট হওয়া সত্ত্বেও ভারত কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি রানই করেছিল। অথচ অদ্ভুত ডিএল পদ্ধতির জন্য ম্যাচটা সে দিন হেরে যায় ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচেও ভারতীয় বোলাররা অ্যারন ফিঞ্চদের যে হাল করে ছেড়েছিলেন, আমার বিশ্বাস, তার পরে সেই লক্ষ্যে ভারত পৌঁছে যেতে পারত সহজেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: ক্রুণাল না কোহালি ভারতের জয়ের আসল কারণ কী

অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে বিরাটরা প্রথম সিরিজেই বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা ওখানকার কঠিন পরীক্ষার জন্য তৈরি। যদিও টেস্ট ক্রিকেটটা সম্পুর্ণ অন্য রকমের। কিন্তু দলের এই মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাস তো টেস্টেও সঙ্গে থাকবে আমাদের ক্রিকেটারদের। আর বিরাট কোহালিও সিডনিতে প্রমাণ করে দিলেন, তিনিও অধিনায়ক হিসেবে তৈরি হয়েই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন।

আরও পড়ুন: বিরাটের ব্যাটিং দেখে শিখুক অস্ট্রেলিয়া, বলছেন ক্লার্ক

টি-টোয়েন্টিতে ১৬৪ রান এমন কিছুই বড় ব্যাপার নয়। অস্ট্রেলিয়াকে রবিবার এই রানে বেঁধে রাখাটা বোলারদের কৃতিত্বই বলতে হবে। আমাদের কোনও বোলার ওভারপ্রতি গড়ে দশ রানও দেননি। কুলদীপ যাদবের বল তো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের কাছে এখনও যথেষ্ট দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে। তাই এ দিন কুলদীপের চার ওভার ওঁরা কার্যত এড়িয়েই যান। তেমন বড় শট খেলার চেষ্টাই করেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ডার্সি শর্ট, অ্যালেক্স ক্যারি-রা। তাই ভারতের চায়নাম্যান বোলার চার ওভারে ১৯ রানের বেশি দেননি।

তুলনায় ক্রুণাল ও যশপ্রীত বুমরা বরং বেশি মার খেয়েছেন। ক্রুণালের ঠিক জায়গায় বলটা রাখার প্রবণতা আরও বেশি দেখা গেল রবিবার। মাঝে মাঝে উইকেট থেকে পাওয়া বাউন্সের সঙ্গে টার্ন মিশে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল তাঁর বল। এই ক্রুণাল প্রথম ম্যাচে বিনা উইকেটে ৫৫ রান দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে এক উইকেট নিয়ে ২৬ রান দেন।

আরও পড়ুন: নিজেকে বোঝাই, তুমি পারবে: ক্রুণাল

ওঁর এই সামান্য উন্নতিটা চোখে পড়ে বিরাটের। তাই সিডনিতেও ওর ওপর ভরসা রেখেছিল দল। সেই ভরসারই দাম দিলেন ক্রুণাল। ৩৬ রানে চার উইকেট নিয়ে। তরুণদের ওপর ভরসা রেখে তাঁদের সময় দিলে তার কী সুফল পাওয়া যেতে পারে, সেটাই ফের বোঝা গেল। যে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল প্রথম ম্যাচে ব্যাপক মেরেছিল ক্রুণালকে, সেই ম্যাক্সওয়েলকে কী ভাবে থামাতে হবে, সেই পথও নিশ্চয়ই বিরাটই বলে দেন ওঁকে। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে তৈরি হয়ে উঠেছেন, তার প্রমাণ তাঁর এই সব সিদ্ধান্তেই বোঝা যায়।

যে বলে শর্ট এলবিডব্লিউ হন, তাতে সুইপ করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না তাঁর। আর সুইপ করতে গিয়েই আউট হন তিনি। ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে এই সুইপ শটটা ভাল করে না শিখে মাঠে নামলেই বিপদ অস্ট্রেলীয়দের। ঠিক তার আগের বলে শর্ট কী ভাবে আউট হয়েছিলেন, তা বোধহয় খেয়াল না করেই বেন ম্যাকডারমট মাঠে নামেন। তাই ক্রুণালের একই ধরনের বল সুইপ করতে গিয়েই এলবিডব্লিউ হয়ে যান।

হ্যাটট্রিকের মুখে থাকা ক্রুণালের তৃতীয় বলটা লেগ স্টাম্পে ছিল। সেটা স্কোয়ার লেগে ঠেলে দেন ক্যারি। ওঁর দ্বিতীয় স্পেলে ক্যারি পরপর দু’টো বলে ক্রুণালকে চার মারার পরে তৃতীয়টা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। যথেষ্ট বুদ্ধি করে ওই বলটা করেন তিনি। অল্প সময়ে কতটা পরিণত হয়ে উঠেছেন তিনি, এতেই বোঝা যাচ্ছে।

স্কোরকার্ড

অস্ট্রেলিয়া ১৬৪-৬ (২০)
ভারত ১৬৮-৪ (১৯.৪)

অস্ট্রেলিয়া
ডার্সি শর্ট এলবিডব্লিউ ক্রুণাল ৩৩n২৯
ফিঞ্চ ক ক্রুণাল বো কুলদীপ ২৮ n ২৩
ম্যাক্সওয়েল ক রোহিত বো ক্রুণাল ১৩n১৬
ম্যাকডারমট এলবিডব্লিউ ক্রুণাল ০ n ১
ক্যারি ক কোহালি বো ক্রুণাল ২৭n১৯
ক্রিস লিন রান আউট (বুমরা) ১৩n১০
মার্কাস স্টোয়নিস ন.আ. ২৫n১৫
কুল্টার নাইল ন.আ. ১৩n৭
অতিরিক্ত ১২
মোট ১৬৪-৬ (২০)
পতন: ১-৬৮ (ফিঞ্চ, ৮.৩), ২-৭৩ (শর্ট, ৯.১), ৩-৭৩ (ম্যাকডারমট, ৯.২), ৪-৯০ (ম্যাক্সওয়েল, ১৩.১), ৫-১১৯ (ক্যারি, ১৫.৫), ৬-১৩১ (লিন, ১৭.২)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ৪-০-৩৩-০, খলিল আহমেদ ৪-০-৩৫-০, যশপ্রীত বুমরা ৪-০-৩৮-০, কুলদীপ যাদব ৪-০-১৯-১, ক্রুণাল পাণ্ড্য ৪-০-৩৬-৪।

ভারত
রোহিত শর্মা বো জাম্পা ২৩n১৬
ধওয়ন এলবিডাব্লিউ স্টার্ক ৪১n২২
বিরাট কোহালি ন.আ ৬১n৪১
রাহুল ক কুল্টারনাইল বো ম্যাক্স ১৪n২০
ঋষভ পন্থ ক ক্যারি বো টাই ০n১
দীনেশ কার্তিক ন.আ ২২n১৮
অতিরিক্ত ৭
মোট ১৬৮-৪ (১৯.৪)
পতন: ১-৬৭ (ধওয়ন, ৫.৩), ২-৬৭ (রোহিত, ৬.৫), ৩-১০৮ (রাহুল, ১২.৬), ৪-১০৮ (ঋষভ, ১৩.১)।
বোলিং: মিচেল স্টার্ক ৪-০-২৬-১, নাথান কুল্টারনাইল ৩-০-৪০-০, মার্কাস স্টোয়নিস ১-০-২২-০, অ্যাডাম জাম্পা ৪-১-২২-১, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৪-০-২৫-১, অ্যান্ড্রু টাই ৩.৪-০-৩২-১।

৬ উইকেটে জয়ী ভারত

ম্যাচের সেরা ক্রুণাল পাণ্ড্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন