তিন-চার বছর টেস্ট ক্রিকেট শাসনের ক্ষমতা আছে এই দলটার

নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর বিরাট কোহালিরা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল যে, এক নম্বর টেস্ট দলের জায়গাটা ওরা অনেক দিন ধরে রাখতেই এসেছে।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৩০
Share:

নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর বিরাট কোহালিরা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল যে, এক নম্বর টেস্ট দলের জায়গাটা ওরা অনেক দিন ধরে রাখতেই এসেছে।

Advertisement

এই টিম ইন্ডিয়া যে কমপ্লিট পারফরম্যান্স দেখাল, সেই ফর্ম তারা পরের দশটা টেস্টেও ধরে রাখতে পারবে বলেই আমার ধারণা। ইংল্যান্ড তো বটেই, অস্ট্রেলিয়াও ভারতে এসে কোহালিদের তেমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে বলে মনে হয় না। তাই আগামী মার্চ পর্যন্ত ভারতকে আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের সিংহাসন থেকে কেউ টেনে নামাতে পারবে না।

রবিচন্দ্রন অশ্বিন সিরিজ সেরা হল বলে যদি কেউ ভেবে থাকেন, শুধু অশ্বিনের জন্যই ভারত সিরিজটা জিতল, সেটা ঠিক নয়। সবার সমান কনট্রিবিউশন রয়েছে এই সিরিজ জয়ে। কানপুরে মুরলী বিজয়-চেতেশ্বর পূজারার দুই ইনিংসেই একশো প্লাস পার্টনারশিপ, রবীন্দ্র জাডেজার পাঁচ উইকেট আর পঞ্চাশ রান, রোহিত শর্মার দুর্দান্ত ৬৮ ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ইডেনে দেখলাম পূজারা-অজিঙ্ক রাহানের ১৪১-এর পার্টনারশিপ আর দুই ইনিংসেই ঋদ্ধিমান সাহার দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হাফ সেঞ্চুরি, ভুবনেশ্বর কুমারের পাঁচ উইকেট ও রোহিতের ৮২। আর ইনদওরের স্মৃতি তো টাটকা। বিরাটের ডাবল সেঞ্চুরি, রাহানের ১৮৮ আর অশ্বিনের ১৩ উইকেট তো চিরকাল মনে রাখার মতো।

Advertisement

ইডেনে কী হল, দেখলেন তো। এখানকার উইকেট নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বেশি সুবিধাজনক ছিল। ওদের পেসারদের এই উইকেটে আগুন ঝরানোর কথা ছিল। কিন্তু উইকেটের পেস আর বাউন্সকে কাজে লাগিয়ে ওদের চেয়ে অনেক বেশি ভাল বল করল শামি, ভুবিরা। এতটাই ভাল যে, প্রথম ইনিংসে অশ্বিনকে আট ওভারের বেশি বোলিং করাতেই হয়নি। এর অর্থ স্পিন সহায়ক বা ব্যাটিং সহায়ক উইকেট না পেলেও টিম ইন্ডিয়া কিন্তু তাতেও টেস্ট জিততে পারে। ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে এর চেয়ে ভাল খবর আর কী হতে পারে? স্যাঁতসেতে আবহাওয়া এবং গতি আর অনিয়মিত বাউন্সে ভরপুর উইকেটেও আমাদের টেস্ট দল রীতিমতো লড়াই করে জিতছে, এ তো বিদেশেও টেস্ট সিরিজ জয়ের ইঙ্গিত। যদিও বিদেশে টেস্ট জয়ই কোনও টেস্ট দলের কৃতিত্বের আসল মাপকাঠি বলে মনে হয় না আমার। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাই তো বিদেশে টেস্ট সিরিজ হারছে। ইংল্যান্ড তো নিজেদের ঘরের মাঠেই হেরে বসেছে। তবু অনেকে যেহেতু বলেন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে টেস্ট সিরিজ জিততে পারাটাই ভারতের আসল সাফল্য হবে, তাই বলছি এই ১৩ টেস্টের প্রায় সবক’টাই জিতে ভারতের এই দলটা যখন আত্মবিশ্বাসে ফুটবে, যখন টেস্ট ক্রিকেটে আমরা একটা সেট কম্বিনেশন পেয়ে যাব, তখন এই তিন দেশে গিয়েও টেস্ট সিরিজ জেতাটা মনে হয় না খুব কঠিন হবে বলে। কারণ, বিরাটের এই তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া দলটাই আগামী তিন-চার বছর ধরে টেস্ট খেলবে। বলা উচিত নয়, দু-একজন যদি মারাত্মক চোট পেয়ে ছিটকে যায়, তা হলে আলাদা কথা। সব ঠিকঠাক চললে এই দলটারই আগামী তিন-চার বছর ধরে টেস্ট দুনিয়ায় আধিপত্য করা উচিত। আমার মনে হয়, নিউজিল্যান্ডের পর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকেও একই ভাবে উড়িয়ে দেবে ভারত।

ইনদওরের আগে ভারতকে ঘরের মাঠে শেষ কবে পাঁচশোর উপর রান তুলতে দেখেছেন মনে করে দেখুন। আমার তো মনে পড়ছে ২০১৩-এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চেন্নাই আর হায়দরাবাদ টেস্টের পর এই সে দিন ৫৫৭-র ইনিংস খেললাম আমরা। বোলিং আর ব্যাটিংয়ের এই ডেপথ্ ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সে বহুদিন আমরা পাইনি।

টিভিতে কমেন্ট্রি করার সুবাদে ভারতীয় ক্রিকেট সংসারের আশেপাশে থাকার সুযোগটা পাচ্ছি বলেই বুঝতে পারছি, কী ভাবে টিমটার মধ্যে একটা বন্ডিং তৈরি হচ্ছে। দলের প্রতিটা সদস্যের কার কী রোল, সেটা আগে থেকেই ঠিকঠাক করা রয়েছে। সেই মতোই তারা প্র্যাকটিসও করে মাঠে। এক একজনের প্র্যাকটিসের প্যাটার্ন টিমে তার রোল অনুযায়ী। আর প্রতিটা জায়গায় একেবারে ঠিক ঠিক লোক আছে। ভুবনেশ্বরর কুমারের সঙ্গে এক দিন কথা হচ্ছিল। ও বলছিল, ওর এগারোর মধ্যে না থাকাটাও নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক একটা ঘটনা। যে বাদ পড়ছে, তাকে কারণটা ভাল করে বুঝিয়েও দেওয়া হচ্ছে। ফলে দলের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই, মান-অভিমান নেই।

গৌতম গম্ভীরকেও ইডেনে টেস্ট শুরুর আগে এ ভাবেই বোঝানো হয়েছিল, কেন সে ওই টেস্টের স্কিম অব থিংসে নেই। অনিল কুম্বলে কোচ হয়ে আসার পর এই একটা ব্যাপারে পরিবর্তন দেখছি ভারতীয় দলে। আর এই ব্যাপারে বিরাট কোহালির অবদানও কম নয়। ও ওর নিজের বয়সি ক্রিকেটারদের নিয়ে যে দলটা তৈরি করছে, তারা ম্যাচে (এমনকী প্র্যাকটিসেও) নিজেদের উজাড় করে দিতে মরিয়া। এ রকম একটা দলই বিশ্বের এক নম্বর হওয়ার যোগ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন