কত রান তুলতে পারলে ভারত এই টেস্টে জেতার মতো জায়গায় থাকবে? দ্বিতীয় দিনের শেষে এসে এটাই এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন।
বলা হয়, ক্রিকেট ব্যাটসম্যানদের খেলা। কিন্তু পাঁচ দিনের ক্রিকেটে যদি বল শাসন করে ব্যাটকে, তা হলে কিন্তু ক্রিকেট আরও উত্তেজক হয়ে ওঠে। যেমন ওয়ান্ডারার্সের এই টেস্টে হচ্ছে। এ রকম দোলাচলের টেস্ট বহু দিন দেখিনি।
দ্বিতীয় দিনের শেষে এসে যে প্রশ্নটা এখন সব চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে, সেটা হল, মোটামুটি কত রান তুলতে পারলে ভারত এই টেস্টে জেতার মতো জায়গায় থাকবে? পিচের অবস্থা দেখে আমার মনে হচ্ছে, ভারত যদি কোনও মতে ২২০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে, তা হলে কিন্তু খুব ভাল জায়গায় থাকবে বিরাট কোহালিরা।
কেন বলছি এ কথা? অবশ্যই দ্বিতীয় দিনের খেলা দেখে। বল দারুণ সুইং করছে, বাউন্স আছে, কোনও কোনও বল ফাটলে পড়ে অনেকটা করে কাট করছে। এই অবস্থায় হাসিম আমলা বা বিরাট কোহালির মতো ব্যাটসম্যান হলেই বোধহয় বিষাক্ত বোলিং সামলে রান করা যায়। ভারতের প্রথম ইনিংসে কোহালি করেছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে করল আমলা।
এমনকী বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, যে প্রথম ইনিংসেই গেমচেঞ্জার হয়ে উঠতে পারত— সেই এ বি ডিভিলিয়ার্সও পারল না ভুবনেশ্বর কুমারের ইনসুইং সামলাতে। অবশ্য এটা বলতেই হবে, আমার কাছে দিনের সেরা বল ভুবির ওই বিশাল ইনসুইং। প্রায় অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ইনসুইং করে মিডল স্টাম্প নিয়ে চলে গেল। এ বি-র মতো ব্যাটসম্যানও বুঝতে পারল না সুইংটা।
আগের দিন লিখেছিলাম, ভারতকে ম্যাচে থাকতে হলে নতুন বলটা কাজে লাগাতে হবে। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ডিন এলগার ফিরে গেলেও অপ্রত্যাশিত ভাবে উইকেটে টিকে যায় নৈশপ্রহরী কাগিসো রাবাডা। শুধু ৩০ রান করাই নয়, ৮৪ বলও খেলে দিল ও। মানে নতুন বল অনেকটাই সামলে দিল। আমলার সঙ্গে ৬৪ রানের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জুটিও করে এই রাবাডা। সব চেয়ে চমকপ্রদ হল, দিনের সেরা শটটাও এসেছে এই রাবাডার ব্যাট থেকে। যশপ্রীত বুমরা-কে ফ্রন্টফুটে মিডউইকেট দিয়ে মারা একটা ফ্লিক। ওই সময় মনে হচ্ছিল, ভারত না এ দিনই পুরোপুরি ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে।
সেটা যে যায়নি, তার পিছনে দু’টো নাম। এক, ভুবনেশ্বর। এবং দুই, বুমরা। সীমিত ওভারের বিশেষজ্ঞ পেস জুটি টেস্টেও বিধ্বংসী। বিশেষ করে বুমরা। সীমিত ওভারের এক জন বিশেষজ্ঞ বোলার যে টেস্টে এসেই সফল। বুমরা-র শক্তিটা হল ধারাবাহিক ভাবে প্রায় ১৪৪ কিলোমিটার গতিতে বল করে যাওয়া। এর সঙ্গে ইনসুইংটা আছে। প্রথাগত আউটসুইং ও হয়তো করে না, কিন্তু ওর একটা বল মাঝে মাঝে সোজা হয়ে যায়, যেটা কিন্তু বিপজ্জনক। তার সঙ্গে পেস সহায়ক পিচ পেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। মাত্র তিন নম্বর টেস্টে খেলতে নেমে ইনিংসে পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়ার মধ্যে কিন্তু একটা ভাল সঙ্কেত আছে।
ভারতের কাছে অবশ্য একটা সময় অশনি সঙ্গেত হয়ে দেখা দিয়েছিল আমলা। আমলার খেলার ধরনটা হল, পিছনের পা-টা অফস্টাম্পের বাইরে নিয়ে গিয়ে সামনের পা ছোট করে এগিয়ে দেওয়া। এতে কিন্তু ওর লেগ স্টাম্পটা দেখা যায়। কিন্তু আমলা অন সাইডে এত শক্তিশালী, যে ব্যাপারটা সামলে দেয়। এ দিন দেখলাম, এক মাত্র ভুবনেশ্বর লেগ স্টাম্পের ওপর বল ফেলে আউট সুইং করানোর চেষ্টা করছে। যাতে আমলা খেলতে বাধ্য হয়। অফস্টাম্পের ওপর বল ও অনায়সে ছেড়ে দিচ্ছিল। কিন্তু আমলা শেষ পর্যন্ত আউট হল অন সাইডেই ফ্লিক করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে।
আমলার এই ইনিংসের মূল্য শুধু টেকনিক্যাল গুণ দিয়ে বিচার করলে হবে না। এই ইনিংসটা বুঝিয়ে দিয়েছে ও কতটা সাহসী। কখনও বল পাঁজরে খেয়েছে, কখনও বল গ্লাভসে লেগেছে। কিন্তু তার মধ্যেই পাল্টা লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা যে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যেতে পারল, সেটাও এই আমলার দৌলতে। লিড হয়তো মাত্র ৭ রানের, কিন্তু মানসিক ভাবে এটা দক্ষিণ আফ্রিকাকে কিছুটা চাঙ্গা করে দিল। আমলাকে ভাল সাহায্য করে গেল ভার্নন ফিল্যান্ডারও। এই পিচে ফিল্যান্ডারের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, ও মোটেই বোলিং অলরাউন্ডার নয়, ব্যাটিং অলরাউন্ডার।
এই ফিল্যান্ডারকেই কিন্তু শুক্রবার সামলাতে হবে ভারতকে। ও আমাদের ভুবনেশ্বর ধাঁচের বোলার অনেকটা। ছোট আউটসুইং আছে, ইনসুইং আছে। মাঝে মাঝে একটা বল সোজা হয়ে যায়। এই উইকেটের জন্য খুব বিপজ্জনক বোলার। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেন করতে নামা পার্থিব পটেলকে তো ও-ই ফেরাল। সকালে ফিল্যান্ডারের সুইং সামলানোটাই এখন ভারতের বড় চ্যালেঞ্জ।