তৃপ্তি: কোহালির মুখে হাসি আনল মহম্মদ শামির দুই উইকেট। ছবি: এএফপি
ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা— কেউ কি গলের মাঠে আর মনে রাখছে?
দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সবাই ধরে নিয়েছে বিরাট কোহালির ভারত এই টেস্ট জিতছেই। আগ্রহ এখন দু’টো— কত দিনে জিতবে ভারত? আর আজ, শুক্রবার কোহালিরা শ্রীলঙ্কাকে ফলো-অন করাবেন কি করাবেন না?
কয়েক জন শ্রীলঙ্কান দর্শককেও দেখা গেল দিনের খেলা শেষে কোহালির নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। ভারত অধিনায়ককে দেখামাত্র এক জন চিৎকার করে উঠলেন, ‘মিস্টার কোহালি, আন্ডার নাইনটিন ওয়ার্ল্ড কাপ থেকে তোমাকে দেখছি। ইউ আর দ্য বেস্ট ব্যাটসম্যান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড।’ কোহালির মুখচোখ দেখে মনে হল, তিনিও বেশ অবাক হলেন আচম্বিতে এমন সদর্প ঘোষণায়।
প্রধান দু’টি প্রশ্নের সমাধানে আসা যাক। এক) ম্যাচ কত দিন গড়াতে পারে? এই শ্রীলঙ্কান টিমের যা মনোবলের অবস্থা, খুব বেশি হলে চতুর্থ দিন পর্যন্ত যাওয়া উচিত। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের ৬০০ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা ১৫৪-৫। ভারতের প্রথম ইনিংসের স্কোর থেকে ৪৪৬ রানে পিছিয়ে। ফলো-অন বাঁচাতে চাই আরও ২৪৭ রান। ভুলে গেলে চলবে না, শ্রীলঙ্কার দশ নয়, ফেলতে হবে নয় উইকেট। আঙুলে চোট পাওয়া আসেলা গুণরত্ন ব্যাট করতে পারবেন না। তিনি বাকি সিরিজ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন।
দুই) ফলো-অনের প্রশ্ন। টিম সূত্রে যা খবর, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্ভর করছে কতক্ষণে শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করা যায়, তার ওপর। যদি সকালে তাড়াতাড়ি বাকি চার উইকেট তুলে ফেলা যায়, তা হলে ফলো-অন করানোর কথা ভাবতেই পারেন কোহালিরা। কিন্তু শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানেরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে ফলো-অন না করিয়ে দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে পারে ভারত। কারণ, গরমের হাত থেকে বোলারদের বিশ্রাম দেওয়ার বিষয় নিয়েও ভাবতে হচ্ছে ভারতকে।
আরও পড়ুন: হার না মানা এক নিত্যযাত্রী তারকা
ফলো-অন না করানোর এই রেওয়াজ খুব বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল স্টিভ ওয় এবং জন বুকানন যখন বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া টিমের অধিনায়ক ও কোচ ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা ফলো-অন করানোর পরিস্থিতি থাকলেও করাতেন না। তাঁদের যুক্তি ছিল, চতুর্থ ইনিংসে খারাপ পিচে কেন নিজেরা ব্যাট করার ঝক্কি নেব? তার চেয়ে ফলো-অন না করিয়ে আমরা তৃতীয় ইনিংসে ব্যাট করে ‘লিড’টাকে আরও বাড়িয়ে নেব। তার পর শেষ ইনিংসের খারাপ উইকেটে প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে দেব। স্টিভ-বুকানন জুটি এক বারই এই ফর্মুলা থেকে সরে এসে তাঁদের প্রতিপক্ষকে ফলো-অন করিয়েছিল। আর সে বারই অস্ট্রেলিয়া মুখ থুবড়ে পড়ে। ইডেনে ঐতিহাসিক সেই টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটের ঠাকুরমার ঝুলিতে ঢুকে গিয়েছে। ভি ভি এস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়ের সেই সারা দিন অপরাজিত থাকা পার্টনারশিপ।
এই শ্রীলঙ্কা টিমের সঙ্গে ২০০১-এর স্টিভের অস্ট্রেলিয়া বা সৌরভের ভারত— ভুলেও কোনও দলের তুলনা করা যাবে না। শাস্ত্রী-কোহালি জুটিকে তবু আরও দু’একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন, শ্রীলঙ্কায় যখন-তখন বৃষ্টি এসে যেতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস কী, সেটার খোঁজ রাখতে হবে। রাতে এখানে হাল্কা দু’এক পশলা বৃষ্টিও হল। আবার গলে গত বারই শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অবধারিত জেতা ম্যাচ হেরে যায় কোহালির ভারত। রঙ্গনা হেরাথ যতই প্রথম ইনিংসে ৪০ ওভারে ১৫৯ রান দিয়ে মাত্র একটি উইকেট পান, শ্রীলঙ্কা যদি কোনও ভাবে ১০০ রানের লিডও নিয়ে ফেলে, হেরাথ না অন্য মূ্র্তিতে উদয় হন শেষ ইনিংসে!
বিশেষ করে যখন এ দিনই দেখা গেল, অশ্বিন ভাল রকম সাহায্য পাচ্ছেন উইকেট থেকে। তাঁর কয়েকটা বল বেশ ভাল মতো টার্ন করেছে। শ্রীলঙ্কার পাঁচটি উইকেটের একটি অশ্বিনের। কিন্তু শেষের দিকটায় প্রায় প্রত্যেক বলেই তাঁকে ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল। দু’টি উইকেট নিলেন মহম্মদ শামি। একটি উমেশ যাদব। অন্যটি রান আউট। শামি স্বপ্নের ডেলিভারিতে ফেরালেন কুশল মেন্ডিসকে। নতুন এই মেন্ডিসকে শ্রীলঙ্কার পরবর্তী বড় তারকা ধরা হচ্ছে। কিন্তু অফস্টাম্পের ওপর শামির বলটা একদম সিমে পড়ে দেরিতে বাইরের দিকে গেল। সঙ্গে বাড়তি বাউন্সের ছোবল। ব্যাট বাড়িয়ে খোঁচা দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারলেন না মেন্ডিস।
গলে প্রথম দিনটা যদি শিখর ধবনের হয়ে থাকে, দ্বিতীয় দিনের সম্মান ভাগাভাগি হল। শ্রীলঙ্কার সেরা পারফর্মার অবশ্যই ডানহাতি মিডিয়াম পেসার নুয়ান প্রদীপ। ছয় উইকেট নিয়ে তিনিই ভারতকে ছ’শোর মধ্যে আটকে রাখলেন। ভারতীয় ব্যাটিংয়ে তেমনই যৌথ ভাবে নায়ক চেতেশ্বর পূজারা এবং অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেই হাফ সেঞ্চুরি করা হার্দিক পাণ্ড্য।
গত কাল থেকে ধরলে গলে তিন ধরনের ব্যাটিংই দেখা গেল। ধবনের ওয়ান ডে ব্যাটিং, পূজারার টেস্ট ব্যাটিং আর এ দিন হার্দিকের টি-টোয়েন্টি ধামাকা!