ভরসা সেই রোহিতেই, নজর নতুন পার্‌থ পিচে

বরাবর পার্‌থ মানে পেস বোলারদের কাছে স্বর্গ। আর ব্যাটসম্যানের কাছে চরম পরীক্ষা। এত প্রাণবন্ত পিচ বিশ্বের আর কোথাও নেই। এখানে একটা সময়ে বল করতেন ডেনিস লিলি এবং জেফ থমসন আর গ্যালারি থেকে রক্তলোলুপ জনতা তাঁদের তাতিয়ে তুলত।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

পার্থ শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১১
Share:

চর্চায়: পার্‌থে এ বার গতি ও বাউন্স সামলাতে হবে রোহিতকে। ফাইল চিত্র

অ্যাডিলেডেই হয়তো শেষ হয়ে যাচ্ছে না রোহিত শর্মার টেস্ট জীবন। বরং, সব কিছু ঠিকঠাক চললে পার্‌থের সুপারফাস্ট পিচেও তাঁকেই ছয় নম্বরে ব্যাট করতে দেখা যাবে।

Advertisement

বরাবর পার্‌থ মানে পেস বোলারদের কাছে স্বর্গ। আর ব্যাটসম্যানের কাছে চরম পরীক্ষা। এত প্রাণবন্ত পিচ বিশ্বের আর কোথাও নেই। এখানে একটা সময়ে বল করতেন ডেনিস লিলি এবং জেফ থমসন আর গ্যালারি থেকে রক্তলোলুপ জনতা তাঁদের তাতিয়ে তুলত। যাতে লিলি-থমো আরও বেশি করে ব্যাটসম্যানের মাথা লক্ষ করে বাউন্সার দিতে পারেন।

সেই কোনও কিছুর পরোয়া না করা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে হঠাৎই ক্রিকেট সংস্কৃতির বিপ্লব চলছে। পার্‌থেও যেন বৈপ্লবিক টেস্ট খেলতে নামছে ভারত। এত কালের ঐতিহ্যময় ওয়াকা (ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন) ছেড়ে এই প্রথম নতুন স্টেডিয়ামে টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে। অভিষেকের এই নতুন মাঠেও একই রকম গতির আগুন দেখা যায় কি না, তা নিয়েই এখন সকলের আগ্রহ।

Advertisement

ভারতীয় দলের অন্দরমহলে অবশ্য পার্‌থের নতুন মাঠ নিয়ে মাথা খারাপ করার ব্যস্ততা নেই। প্রাণবন্ত পিচের উদাহরণ তাঁদের কাছেই রয়েছে। জোহানেসবার্গে শুধু প্রাণবন্ত নয়, বিপজ্জনক পিচ বানিয়ে ৩-০ হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পিচ ব্যুমেরাং হয়ে গিয়ে তারাই হারে। মনে হচ্ছে, পার্‌থের পিচে বল গড়ানোর আগে কোহালিদের শিবিরে সব চেয়ে বেশি উচ্চারিত হবে জো’বার্গের উদারহণ।

প্রাণবন্ত পিচে, যেখানে বল বাড়তি গতি পাবে, বাউন্স পাবে, সিম করবে, সেখানে রোহিত শর্মাকে টেস্টে খেলানোর পরামর্শ খুব বেশি বিশেষজ্ঞ হয়তো দেবেন না। কিন্তু ভারতীয় দল তবু একটি টেস্টের ভিত্তিতেই রোহিতের উপর থেকে আস্থা সরিয়ে ফেলতে নারাজ। অ্যাডিলেড টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ১ রানের বেশি করতে পারেননি রোহিত। তাঁর আউট হওয়ার ভঙ্গি দেখে অনেকেই ফের প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন, টেস্ট ক্রিকেট আদৌ রোহিতের জন্য কি না? কিন্তু প্রথম ইনিংসে কঠিন সময়ে দল যখন ৪১-৪ হয়ে গিয়েছিল, তখন যে তিনি ৩৭ রানের ইনিংস খেলে যান, তার কদর করা হচ্ছে। টিমের মধ্যে বলাবলি হয়েছে, এ রকম রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ ৩১ রানে জেতার মধ্যে রোহিতের প্রথম ইনিংসের ৩৭ মোটেও খারাপ নয়। তাই ইংল্যান্ডে রান করা হনুমা বিহারীর সম্ভবত এখনই ফেরা হচ্ছে না। তবে এটাও ঠিক যে, রোহিতের জন্য এই অস্ট্রেলিয়া সিরিজই এসপার-ওসপার সিরিজ হতে যাচ্ছে। যদি তিনি এখানে ভাল কিছু করেন, তবে টেস্টের ভাবনায় থেকে যাবেন। না হলে শিখর ধওয়নের মতো শুধু সাদা বলের ক্রিকেটার হয়ে থাকতে হবে। পার্‌থের দ্রুতগতির উইকেটে মিচেল স্টার্ক, জশ হেজলউড এবং প্যাট কামিন্সের পেস-ত্রিফলাকে সামলানোর অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ককে।

অ্যাডিলেডে জিতে মঙ্গলবার সকালেই পার্‌থে এলেন বিরাট কোহালিরা। বিমানের মধ্যে স্বয়ং অধিনায়কের একটি কাণ্ড নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে হইহই পড়ে গিয়েছে। বিবাহবার্ষিকীর দিনে স্ত্রী অনুষ্কা শর্মাকে নিয়ে পিছনের দিকের সিটে গিয়ে বসেন কোহালি। বিজনেস ক্লাসের টিকিট যে-হেতু সীমিত এবং সেখানে বসলে অনেকটা পা ছড়িয়ে বসা যায়, অধিনায়ক তাই সেই সিট ছেড়ে দেন তাঁর পেসারদের জন্য। যদি সত্যিই পার্‌থের নতুন পিচে ওয়াকার মতোই পেস আর বাউন্স থাকে তা হলে মহম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মাদের তরতাজা অবস্থায় পেতেই হবে কোহালিকে। ঐতিহাসিক ভাবে স্পিনের দেশ ভারতের হাতে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস আক্রমণ রয়েছে। শামি, যশপ্রীত বুমরা, ইশান্ত। বাইরে বসে আছেন উমেশ যাদব। প্রত্যেকে গতি এবং বাউন্সে পাল্টা মিসাইল ছুড়তে পারেন প্রতিপক্ষ শিবিরে। দারুণ উপভোগ্য এক পেস-দ্বৈরথ দেখা যেতে পারে পার্‌থে। ও দিকে স্টার্ক, হেজলউড, কামিন্স। এ দিকে শামি, বুমরা, ইশান্ত। ভারতীয় ক্রিকেট মহলের কাছে দারুণ এক সন্ধিক্ষণ নিয়ে হাজির হতে চলেছে পার্‌থ। শক্তিশালী পেস আক্রমণ তৈরি হওয়ার পরে এই প্রথম বিশ্বের দ্রুততম উইকেটে বল করতে দেখা যাবে শামি, বুমরাদের।

অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারের মনে কোনও সংশয় নেই যে, পার্‌থে গতি আর বাউন্স বেশি থাকবে। শেফিল্ড শিল্ডের একটি ম্যাচ দেখতে নতুন স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন ল্যাঙ্গার। তাঁর অভিজ্ঞতা? ‘‘ওয়াকার মতোই বল উড়ছিল। আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, অতিরিক্ত পেস আর বাউন্স থাকবে।’’ নিজের পেস বিভাগকে লেলিয়ে দিয়ে ভারতীয় ব্যাটিংকে থামানোর হুঙ্কারও কার্যত দিয়ে রাখলেন তিনি। তবে নতুন এই স্টেডিয়ামেও অ্যাডিলেডের মতোই ‘ড্রপ-ইন’ পিচে খেলা হবে। অর্থাৎ, বাইরে বানিয়ে নিয়ে এসে ব্যবহার করা হবে। অস্ট্রেলিয়া জুড়ে এখন এই ‘ড্রপ-ইন’ পিচের রমরমা। তবে প্রত্যেকটা শহরের পিচের আলাদা চরিত্র ধরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। সেই চেষ্টা পার্‌থে কতটা সফল হল, শুক্রবার থেকে শুরু টেস্টই বলে দেবে। ভারত যেমন ২-০ করার লক্ষ্য নিয়ে নামবে, অস্ট্রেলিয়ার যেমন ফিরে আসার চ্যালেঞ্জ, তেমনই ডেনিস লিলির পার্‌থের গতির গৌরব ধরে রাখার অগ্নিপরীক্ষা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন