বোর্ড নাটকের দিনে ভারতীয় সংসারে নিরাপত্তা আর ঋদ্ধিমান

সিরিজ জয় ঘিরে তীব্র উৎসব-রোশনাই? নাহ্। কলকাতার পুজো উদ্বোধনে বেরিয়ে পড়া? সম্ভব নয়। অলস ছুটির দিনে গন্তব্য শপিং মল? দলে দলে নয় মোটেও। হাতে গোনা দু’একজন। ইডেনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ জয়ের পরের দিন। যেখানে ভারতীয় টিমের একদিনের জন্য যে যার মতো বাড়ি ফেরার সুযোগ থাকলেও চার্টার্ড ফ্লাইটের নিয়মে তা আটকে গেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৬
Share:

সিরিজ জয় ঘিরে তীব্র উৎসব-রোশনাই?

Advertisement

নাহ্।

কলকাতার পুজো উদ্বোধনে বেরিয়ে পড়া?

Advertisement

সম্ভব নয়।

অলস ছুটির দিনে গন্তব্য শপিং মল?

দলে দলে নয় মোটেও। হাতে গোনা দু’একজন।

ইডেনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ জয়ের পরের দিন। যেখানে ভারতীয় টিমের একদিনের জন্য যে যার মতো বাড়ি ফেরার সুযোগ থাকলেও চার্টার্ড ফ্লাইটের নিয়মে তা আটকে গেল। যে সব জায়গায় এখন ঘুরপথে যেতে হয়, সেখানে ক্রিকেটারদের চার্টার্ড ফ্লাইট দেয় বোর্ড। যার নির্ঘণ্ট বদল করা যায় না। টিমকে তাই একযোগে থেকে যেতে হল কলকাতায়। ভারত এবং নিউজিল্যান্ড— দু’টো টিম বুধবার বিকেলে ইনদওর রওনা হবে। এবং উপরের কয়েকটা লাইনকে যদি নিরামিষ আবহের ইঙ্গিতবাহী মনে হয়, তা হলে ভুলে যাওয়া ভাল। ঘটনা ঘটেছে। এক নয়, বেশ কয়েকটা।

সিরিজ জয়কে ঘিরে উৎসবের তীব্র রোশনাই না থাকতে পারে, কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধেয় একটা ডিনার পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল টিমের পক্ষ থেকে। কিছুই নয়, সিরিজ জয়ের আনন্দকে নিজেদের মতো করে একটু উদযাপন করা। ভারতীয় টিম যে গোটা দিন হোটেল-বন্দি হয়ে পড়ে থাকতে চেয়েছিল, এমনও নয়। দু’একজন চেয়েছিলেন, কলকাতার দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে যেতে। কিন্তু এক অভূতপূর্ব কারণে তা সম্ভব হয়নি।

টিম ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা অফিসার এ দিন একটা নির্দেশিকা জারি করে দেন যে, কোনও ক্রিকেটার নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া শহরের কোনও পাবলিক প্লেসে যেতে পারবেন না। যেতে হলে, সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক। পুরোটাই ভারত-পাক দু’দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতিকে কেন্দ্র করে জারি করা। ওয়াঘার ও পারে জঙ্গিঘাঁটিতে ভারতের ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর পর বেশ কিছু শহরে হাই-অ্যালার্ট জারি করে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। পুজোর কলকাতাকেও নিশ্ছিদ্র নিরাপদ মনে করা হচ্ছে না। তাই ভারতীয় টিমের উপর এমন নির্দেশিকা জারি করে দেওয়া।

একে নিরাপত্তা নিয়ে এমন কড়া নির্দেশিকা জারি, তার উপর বোর্ড-নাটক। লোঢা কমিশনের সঙ্গে চরম বিরোধের ফলে এ দিন সকাল থেকে দ্রুত ছড়িয়ে যায় যে, ভারত-নিউজিল্যান্ড সিরিজ বাতিল হয়ে যাচ্ছে। কমিশন বোর্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দিয়েছে। অতএব, বোর্ডের পক্ষেও নাকি সিরিজের খরচ মেটানো সম্ভব নয়। সিরিজ বাতিল নিয়ে কোথাও সরকারি বক্তব্য পেশ ছিল না বোর্ডের পক্ষ থেকে, কিন্তু যেটুকু যা ছিল, দু’টো টিমের অন্দরমহলে ধোঁয়াশা ছড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। ধারাভাষ্যকাররা পর্যন্ত একটা সময় বুঝতে পারছিলেন না, কোন দিকে পরিস্থিতি যাচ্ছে। অ্যালান উইলকিন্সের মতো কেউ কেউ ঘনিষ্ঠমহলে জিজ্ঞেসও করেন, ইনদওর টেস্ট আদতে হচ্ছে কি না। নিউজিল্যান্ড বোর্ড আবার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে দেয়, বিসিসিআইয়ের থেকে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। সন্ধেয় টিম হোটেলে ভারত এবং নিউজিল্যান্ড— দু’টো টিমের পক্ষ থেকেই জানানো হল যে, ইনদওরে ট্র্যাভেল শিডিউল তাদের পাল্টাচ্ছে না। বোর্ড থেকে যেহেতু সরকারি ভাবে কিছুই জানানো হয়নি, তাই সব একই থাকছে।

বলা হয়নি, বোর্ড-নাটক, ভারতীয় টিমের নিরাপত্তা নিয়ে বজ্রআঁটুনির মধ্যে আরও একজন প্রবল ভাবে আলোচনায় থাকলেন। তিনি— ঋদ্ধিমান সাহা।

ভারত তাঁকে নিয়ে গর্ব করবে, ময়দান তাঁকে নিয়ে রোম্যান্সে ডুবে থাকবে, স্বাভাবিক। কিন্তু নিউজিল্যান্ডও যে বঙ্গসন্তানকে নিয়ে এমন সশ্রদ্ধ হয়ে পড়বে কে জানত। কতিপয় নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্পিনটা যিনি ভাল খেলেন, সেই লিউক রঙ্কি এ দিন টিম হোটেলে বসে দুঃখ করছিলেন যে, ইডেন টেস্টটা একা ঋদ্ধিমান নিয়ে চলে গেলেন! ‘‘দু’টো ইনিংস খেলল, আর দু’টোতেই হাফসেঞ্চুরি করে চলে গেল! যতই খারাপ লাগুক, ব্রিলিয়ান্ট বলতেই হবে। টেস্টটা একাই ঘুরিয়ে দিয়ে গেল সাহা। আমাদের স্পিনারদের যেমন অনায়াসে খেলল, তেমনই পেসারদের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত টেকনিক দেখাল।’’ রঙ্কি বলে গেলেন যে, শেষ টেস্টটা নিউজিল্যান্ড ব্ল্যাক ক্যাপস গর্বের কথা ভেবে খেলবে। ‘‘দেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলছি, এটাই তো আমাদের মোটিভেশন। চেষ্টা করব, নিজেদের পারফরম্যান্সে উন্নতি করে ভারতকে লড়াই দিতে।’’

পারলে ভাল। না পারলেও বা কী এসে যায়? মৃত সিরিজ নিয়ে আর কে কবে অত ভেবেছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন